গ্যাস সংযোগ বিচ্ছিন্ন, সঙ্কট বাড়ল সিনহা গ্রুপের

পরিচালন সঙ্কটে জর্জরিত দেশের অন্যতম পুরোনো পোশাক রপ্তানিকারক কোম্পানি সিনহা গ্রুপের কাচপুরের কারখানার গ্যাস সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে দিয়েছে তিতাস।

নিজস্ব প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 10 June 2021, 05:55 PM
Updated : 10 June 2021, 05:55 PM

প্রায় ১০০ কোটি টাকা বকেয়া আদায় করতে না পেরে বুধবার বিকালে সিনহা গ্রুপের গ্যাস সংযোগ বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে বলে তিতাসের ব্যবস্থাপনা পরিচালক আলী ইকবাল মোহাম্মদ নুরুল্লাহ জানিয়েছেন।

ব্যাংক ঋণের দায়, অ্যাকর্ড-এলায়েন্সের নিরাপত্তা সনদ, শ্রমিকদের বেতন-ভাতাসহ বিভিন্ন কারণে এমনিতেই সঙ্কটের মুখে রয়েছে আশির দশকের বাংলাদেশের অন্যতম শীর্ষ এই পোশাক রপ্তানিকারক কোম্পানি। এখন গ্যাস সংযোগ কাটা পড়ায় তাতে নতুন মাত্রা যোগ হল। 

সার্বিক পরিস্থিতি নিয়ে কথা বলতে সিনহা গ্রুপের কর্ণধার আনিসুর রহমান সিনহার সঙ্গে যোগাযোগ করা হলেও তিনি ফোন ধরেননি।

নারায়ণগঞ্জে তিতাসের ডিএমডি ইমাম উদ্দিন শেখ জানান, সিনহা গ্রুপের প্রায় ১০০ কোটি টাকার গ্যাস বিল বকেয়া পড়েছে। বার বার তাগিদ দিলেও তারা বকেয়া পরিশোধ করেনি।

“কাচপুরে সিনহা গ্রুপের তিনটি প্রতিষ্ঠানের মধ্যে সিনহা ডেনিম লিমিটেডে অভিযান চালিয়ে অনুমোদনহীন অতিরিক্ত স্থাপনা পাওয়া যায়; যেখানে অবৈধভাবে গ্যাস ব্যবহার হচ্ছিল। এছাড়া বকেয়া বিল পরিশোধ না করায় সংযোগ বিচ্ছিন্ন করা হয়েছে।”

এ বিষয়ে তিতাস গ্যাস কোম্পানির ব্যবস্থাপনা পরিচালক আলী ইকবাল মোহাম্মদ নুরুল্লাহ বলেন, অবৈধ গ্যাস ব্যবহার ও বকেয়া গ্যাস বিল আদায়ে ‘জিরো টলারেন্স’ নীতি গ্রহণ করেছেন তারা।

“মাননীয় প্রধানমন্ত্রী, প্রতিমন্ত্রী এবং সচিব মহোদয় আমাকে নির্দেশ দিয়েছেন, অবৈধ গ্যাস সংযোগ উচ্ছেদ করতে হবে এবং বকেয়া বিল আদায় করতে হবে। বার বার তাগাদা দেওয়ার পরও যেসব শিল্প প্রতিষ্ঠান গ্যাস বিল পরিশোধ করছে না. তাদের সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে দেওয়া হবে।”

গত একমাস ধরে নারায়ণগঞ্জ এলাকায় অভিযান চালিয়ে এক লাখ অবৈধ সংযোগ বিচ্ছিন্ন করার কথা জানানো হয়েছে তিতাসের তরফ থেকে।

আনিসুর রহমান সিনহা ১৯৮৪ সালে ওপেক্স গ্রুপের মাধ্যমে পোশাক কারখানা গড়ে তোলেন। পাশাপাশি সিনহা টেক্সটাইল গ্রুপের মাধ্যম পোশাক খাতের ব্যাকওয়ার্ড লিংকেজ শিল্পও স্থাপন করেন। 

সিনহা গ্রুপ পরে ওপেক্স গ্রুপ ও মেডলার গ্রুপ নামে ভাগ হয়ে টেক্সটাইল, তৈরি পোশাক, নিটিং, ডাইয়িং, ডেনিম, কৃষিভিত্তিক শিল্প, সিমেন্ট, বিদ্যুৎ, টেলিকমিউনিকেশনসহ বিভিন্ন খাতে ব্যবসা সম্প্রসারণ করে।

নারায়ণগঞ্জের কাচপুরে এ গ্রুপের ইউনিটগুলো মিলিয়ে এক সময় ২০ হাজারের বেশি শ্রমিক-কর্মচারীর কর্মসংস্থান ছিল। তবে নানা ঘটনাপ্রবাহে সেই সংখ্যা এখন কমে এসেছে।

আনিসুর রহমান সিনহা এসব বিষয়ে কথা বলতে না চাইলেও সিনহা গ্রুপের সমস্যার খবর রাখেন- এমন কয়েকজন কারখানা মালিকের সঙ্গে কথা বলেছে বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম।

বিজিএমইএর একজন পরিচালক বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “বিশাল জনবলের কর্মসংস্থান করলেও সিনহা সাহেবের কোম্পানি এখন সঙ্কটে পড়েছে। সম্পদের স্থিতি ও ঋণের পরিমাণের মধ্যে বড় ধরনের পার্থক্য থাকায় সঙ্কট থেকে বের হয়ে আসাও কঠিন। আনিসুর রহমান সিনহা সাহেব পরিস্থিতি সামাল দেওয়ার চেষ্টা করছেন।”

নারায়ণগঞ্জের একটি পোশাক কারখানার মলিক বলেন, “ছোটবেলায় সিনহা গ্রুপের ওই কারখানা দেখেই পোশাক শিল্পের সঙ্গে পরিচিত হয়েছিলাম। কিন্তু রানা প্লাজা দুর্ঘটনার পর থেকে এ কারখানা ধীরে ধীরে সঙ্কটের মধ্যে ঢুকে পড়েছে। এরকম পরিণতি দেখে সত্যিই কষ্ট হচ্ছে।”