কলম্বোয় জাহাজে আগুনে পুড়েছে বাংলাদেশি দুই কোম্পানির পণ্যও

কলম্বো বন্দরের কাছে আগুনে পুড়ে ডুবে যাওয়া পণ্যবাহী কন্টেইনার বোঝাই জাহাজে বাংলাদেশি দুই কোম্পানির কয়েক কোটি টাকার পণ্য ছিল।

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 9 June 2021, 01:41 PM
Updated : 9 June 2021, 01:41 PM

সিঙ্গাপুরের পতাকাবাহী এমভি এক্স-প্রেস পার্ল নামের জাহাজটি ১২ দিন ধরে আগুন জ্বলে শেষপর্যন্ত ডুবে যায় ২ জুন।

দুর্ঘটনাকবলিত ওই জাহাজে বাংলাদেশের গাজী অটো টায়ার লি. এবং মেঘনা ইনোভা রাবার লি.- এর আমদানি করা সিনথেটিক রাবারের অন্তত ১০টি ২০ ফুট দৈর্ঘ্যের কন্টেইনার ছিল।

এই দুই কোম্পানির কর্মকর্তাদের দাবি অনুযায়ী, আগুনে প্রায় সাড়ে তিন কোটি টাকার বেশি মূল্যের রাবার পুড়ে গেছে।

তারা বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে জানান, এতে বিপুল কাঁচামাল নষ্টের পাশাপাশি আর্থিক ক্ষতিতে পড়েছে তাদের প্রতিষ্ঠান।

এমন পরিস্থিতিতে কোম্পানিগুলো সংশ্লিষ্ট বীমা কোম্পানির কাছ থেকে ক্ষতিপূরণ পাওয়ার প্রক্রিয়া শুরু করেছে বলে কর্মকর্তারা উল্লেখ করেন।

ভারতের গুজরাটের হাজিরা বন্দর থেকে কন্টেইনারীবাহী জাহাজটি ১৫ মে রওনা দেয়। কলম্বো ব্ন্দরের অদূরে পৌঁছানোর পর বিস্ফোরণ থেকে আগুন ধরে ২০ মে।

এতে এক হাজার ৪৮৬টি বাণিজ্যিক পণ্য বোঝাই কন্টেইনার ছিল, যেগুলোর মধ্যে অতিদ্রাহ্য ২৫ টন নাইট্রিক এসিড ছিল বলে রয়টার্স ও আন্তর্জাতিক মাধ্যমের খবর।

জাহাজটি কলম্বো বন্দর হয়ে সিঙ্গাপুর যাওয়ার পথে চট্টগ্রাম বন্দরে বাংলাদেশের পণ্যবাহী কন্টেইনার নামিয়ে দেওয়ার কথা ছিল বলে জানিয়েছেন এই দুই কোম্পানির কর্মকর্তারা।

শ্রীলংকার সমুদ্র উপকূলে সবচেয়ে বড় নৌ-দুর্ঘটনার একটি এটি বলে রয়টার্সের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে।

আগুন নেভানোর শেষ দিকে জাহাজটিকে কলম্বো বন্দর থেকে গভীর সমুদ্রে টেনে নিয়ে যাওয়ার চেষ্টাও সফল হয়নি, শেষ পর্যন্ত ২ জুন এটি ডুবে যায়।

এদিকে জাহাজটিতে রাসায়নিকের পাশাপাশি ট্যাঙ্কে ৩২৫ টন জ্বালানি তেল ছিল।

রয়টার্স লিখেছে, এই বিপুল তেল সমুদ্রের বিস্তৃত পরিসরে ছড়িয়ে পড়তে শুরু করায় কলম্বোর উপকূলের মৎস্যজীবিরা ক্ষতির মুখে পড়েছেন।

অন্যদিকে তা ওই অঞ্চলের পরিবেশের ক্ষতির কারণ হয়ে উঠতে পারে বলে আশংকা করেছে কয়েকটি পশ্চিমা পরিবেশবাদী সংগঠন।

কন্টেইনারবাহী জাহাজটিতে গাজী গ্রুপের প্রতিষ্ঠান গাজী অটো টায়ার্স এর সিনথেটিক রাবার ভর্তি ছয়টি এবং মেঘনা ইনোভা রাবার এর একই পণ্যের চারটি কন্টেইনার দেশে আসছিল।

জানতে চাইলে নৌ-পরিবহন অধিদপ্তরের চিফ নটিক্যাল সার্ভেয়ার ক্যাপ্টেন জসিমউদ্দিন সরকার বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “এই জাহাজে আগুন ধরা বা ডুবে যাওয়ার বিষয়ে আমরা কিছু জানি না। অন্য দেশের জাহাজ চলাচলের বিষয়ে আমাদের কাছে কোনও তথ্য থাকে না।

“তবে আমাদের সমুদ্রসীমার অভ্যন্তরে হলে তখন যোগাযোগের ব্যবস্থা রয়েছে। সেই সংবাদ আমাদের কাছে আসবে এবং প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করতে পারি।“

গাজী গ্রুপের নির্বাহী পরিচালক (একাউন্টস অ্যান্ড ফাইন্যান্স) মো. ফখরুল ইসলাম বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে জানান, কয়েকদিন আগে ভারতের ব্যবসা প্রতিষ্ঠান রিলায়েন্স থেকে দুই কোটি টাকারও বেশি মূল্যের ছয়টি কন্টেইনার চট্টগ্রামে আনার জন্য জাহাজীকরণ করা হয়।

তিনি বলেন, “আমরা প্রথমে জানতেও পারিনি যে, আমাদের আমদানি করা পণ্য পুড়ে গেছে। দুয়েক দিন হচ্ছে বিষয়টি জানতে পেরেছি। রিলায়েন্সও আমাদের মাল ওই জাহাজে জাহাজীকরণ করা হয়েছে বলে জানিয়েছে।“

এসময় রপ্তানি ও স্থানীয় চাহিদা পূরণে টায়ার উৎপাদনের কাজ বেশি হয় জানিয়ে তিনি বলেন, “আমাদের কাছে এখন পর্যন্ত যা মজুদ আছে তা দিয়ে পরবর্তী এলসির পণ্য আসা পর্যন্ত চালিয়ে যেতে পারব বলে আশা করছি।

ফখরুল বলেন, “এখন ক্ষতিপূরণ পেতে আমাদের ওই আমদানি পণ্যের বীমা প্রতিষ্ঠান ফেডারেল ইন্স্যুরেন্সের কাছে দাবির আবেদন করেছি।“

ফেডারেল ইন্স্যুরেন্সের ব্যবস্থাপনা পরিচালক এ এম এম মহিউদ্দিন চৌধুরী বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “বিষয়টি সম্পর্কে আমরা অবগত হয়েছি। গাজী অটো টায়ার্স ক্ষতিপূরণের আবেদন করেছে।

“আমরা দ্রুত এটি পুন:ইন্স্যুরেন্স কোম্পানি সাধারণ বীমাকে যথাযথ প্রক্রিয়া অনুসরণ করে জানিয়ে দিয়েছি।”

দুর্ঘটনার বিষয়ে মেঘনা ইনোভা রাবার এর পরিচালক (জেনারেশন) মো. লুৎফুল বারি বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “ওই জাহাজে দুই এলসির চার কন্টেইনার সিনথেটিক রাবার ছিল। যার মূল্য দেড় কোটি টাকারও বেশি।“

রপ্তানিকারক এই প্রতিষ্ঠানটির কাছেও যথেষ্ট কাঁচামাল মজুদ আছে বলে জানান তিনি।

আমদানি পণ্যের বীমা সোনার বাংলা ইন্স্যুরেন্সের সঙ্গে থাকার কথা জানিয়ে তিনি বলেন, “ইতিমধ্যে তাদের কাছে প্রাথমিক দাবির আবেদন জানিয়েছি। তারা এখনো আমাদের কিছুই জানাননি।”

সোনার বাংলা ইন্স্যুরেন্সের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. আব্দুল খালেক বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “আমাদের শাখার মাধ্যমে দাবির বিষয়টি লিখিত পেয়েছি। ইতিমধ্যে বিষয়টি সাধারণ বীমায় জানিয়ে দিয়েছি।

“যতদ্রুত সম্ভব দাবি নিষ্পত্তি করার জন্য কাজ করছি।“

শ্রীলংকার গণমাধ্যমের খবর অনুযায়ী, দেশটির নৌবাহিনীর প্রাথমিক তদন্তে জাহাজটিতে থাকা রাসায়নিকের মাধ্যমে আগুনের সূত্রপাত হয় বলে জানানো হয়েছে।

দেশটির পুলিশ অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা তদন্ত করছে। মঙ্গলবার কলম্বোর একটি আদালত জাহাজটির ক্যাপ্টেন, প্রকৌশলী ও সহকারী প্রকৌশলীকে দেশ ছাডার ওপর নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে।