লকডাউনে কারখানার পরিবহন পেয়েছিল মাত্র ৪% পোশাক শ্রমিক: জরিপ

মহামারীর দ্বিতীয় ঢেউ সামাল দিতে শুরু হওয়া লকডাউনের বিশেষ পরিস্থিতিতে মাত্র ৪ শতাংশ শ্রমিক তাদের কারখানা থেকে বিকল্প পরিবহন সেবা পাওয়ার কথা জানিয়েছেন।

নিজস্ব প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 6 June 2021, 04:42 PM
Updated : 6 June 2021, 06:45 PM

রোববার গবেষণা প্রতিষ্ঠান সানেম এক জরিপ প্রতিবেদনের ভিত্তিতে এমন তথ্য প্রকাশ করেছে।

কোভিড-১৯ সংকট চলাকালীন সময়ে বাংলাদেশের পোশাক শ্রমিকদের জীবনে কী ধরনের পরিবর্তন এসেছে তা বুঝতে সাউথ এশিয়ান নেটওয়ার্ক অন ইকোনমিক মডেলিং (সানেম) ও মাইক্রোফাইন্যান্স অপরচুনিটিজ (এমএফও) যৌথভাবে ধারাবাহিক জরিপ পরিচালনা করছে।

সানেম জানায়, গত ২৩ এপ্রিল এক হাজার ২৮৫ জন পোশাক শ্রমিকের একটি নির্বাচিত পুল থেকে ফোনে পরিচালিত জরিপের মাধ্যমে এসব তথ্য সংগ্রহ করা হয়েছে।

অংশগ্রহণকারীদের তিন-চতুর্থাংশের বেশি উত্তরদাতা নারী শ্রমিক।

রোববার এই জরিপের তথ্য প্রকাশ করেছে সানেম।

এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে প্রতিষ্ঠানটি জানিয়েছে, জরিপে অংশগ্রহণকারীদের মধ্যে অধিকাংশই বলেছেন তারা আগের মতই পায়ে হেঁটে কারখানায় যাতায়াত করেছেন।

৮ শতাংশ উত্তরদাতা জানিয়েছেন, এই সময়ে তাদের নিজেদের উদ্যোগে বিকল্প ব্যবস্থায় কারখানায় যাতায়াত করতে হয়েছে।

মাত্র ৪ শতাংশ জানিয়েছেন যে তারা কারখানার পরিবহন ব্যবস্থা ব্যবহার করেছেন।

জরিপে অংশগ্রহণকারীদের মধ্যে ৭৬ শতাংশ শ্রমিক পায়ে হেঁটে, ১০ শতাংশ রিকশায়, ৬ শতাংশ অটো-রিকশায় ২ শতাংশ বাসে এবং ২ শতাংশ সিএনজিতে করে কর্মস্থলে যান বলে জানিয়েছেন।

এতে দেখা গেছে, ৯২% উত্তরদাতা জানিয়েছেন- তাদের যাতায়াতের মাধ্যমে কোনো পরিবর্তন আসেনি।

সানেম বলেছে, এ থেকে বোঝা যায় অধিকাংশ শ্রমিক আগের মত হেঁটে কারখানায় গেছেন। বেশিরভাগ শ্রমিক সাধারণত হেঁটেই কর্মস্থলে যান।

চলতি বছর মার্চের পর থেকে দেশে করোনাভাইরাস সংক্রমণ বাড়তে শুরু করলে সরকার ৫ এপ্রিল থেকে প্রথমে একগুচ্ছ বিধিনিষেধ দিয়ে লকডাউন আরোপ করে।

এরপর ১৪ এপ্রিল থেকে কঠোর বিধিনিষেধ আরোপ করে দেশজুড়ে মানুষের চলাচল সীমিত করে।

তবে লকডাউনের পুরোটা সময় রপ্তানিমুখী শিল্প চালু রাখার অনুমোদন দিয়েছিল সরকার। শর্ত হিসেবে গণপরিবহন বন্ধ থাকায় কারখানা মালিকদের শ্রমিক ও কর্মীদের আনা নেওয়ার বিকল্প ব্যবস্থা করতে বলেছিল।

জরিপের এই ফলাফল নিয়ে সানেমের মন্তব্য হচ্ছে, এর মাধ্যমে বোঝা যায় যে, শ্রমিক পরিবহনের জন্য প্রয়োজনীয় পর্যাপ্ত যানবাহনের ব্যবস্থা করার যথাযথ পদক্ষেপ সব কারখানা নেয়নি।

সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে আরও বলা হয়, জরিপে অংশ্রগ্রহণকারী মাত্র ২% শ্রমিক কোভিড-১৯ এর টিকা নিয়েছেন বলে জানিয়েছেন।

টিকা প্রদান কর্মসূচির জন্য নির্বাচিত (যোগ্য বা উপযুক্ত) কিনা সেই প্রশ্ন করা হলে ৩৬% উত্তরদাতা জানিয়েছেন, তারা টিকাদানের জন্য নির্বাচিত, অর্থাৎ তারা চাইলে টিকা নিতে পারতেন।

এদের মধ্যে ৭৬% জানিয়েছেন তারা টিকা নিতে চান বলে সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে উল্লেখ করা হয়েছে।

২৮% জানিয়েছেন তারা টিকা কর্মসূচির জন্য নির্বাচিত নন এবং ৩৪% জানিয়েছেন এই বিষয়ে তারা কিছু জানেন না।

জরিপের তথ্য বিশ্লেষণ করে সানেম জানিয়েছে, সব মিলিয়ে ৬৯% উত্তরদাতা জানিয়েছেন সুযোগ থাকলে তারা টিকা নিতে আগ্রহী।

অন্যদিকে ৩১% জানিয়েছেন তারা টিকে নিতে চান না। এর কারণ হিসেবে তাদের মধ্যে ৪৮% তাদের শরীরে টিকার পার্শ্বপতিক্রিয়া হতে পারে, অসুস্থ হতে পারেন বা মারা যেতে পারেন- এমন আশংকায় কথা জানিয়েছেন।

‘গার্মেন্ট ওয়ার্কার ডায়েরিজ’ শীর্ষক প্রকল্পের অধীনে সানেম ও এমএফও ২০২০ সালের এপ্রিল থেকে বাংলাদেশের মূল পাঁচটি শিল্প এলাকায় (চট্টগ্রাম, ঢাকা শহর, গাজীপুর, নারায়ণগঞ্জ, এবং সাভার) কর্মরত পোশাক শ্রমিকদের নিয়ে এই জরিপ করছে।

শ্রমিকদের কর্মসংস্থান, আয়, খাদ্য নিরাপত্তা, মজুরির আধুনিকীকরণ ও স্বাস্থ্য সম্পর্কে প্রতি মাসে তথ্য সংগ্রহ করছে।

এই প্রকল্পের লক্ষ্য হচ্ছে নিয়মিত ও নির্ভরযোগ্য তথ্য সংগ্রহ ও বিশ্লেষণের মাধ্যমে তথ্যভিত্তিক নীতি গ্রহণ ও বৈশ্বিক ব্যান্ডগুলোকে শ্রমিকমুখী উদ্যোগ নিতে সহায়তা করা, যা পোশাক শ্রমিকদের জীবনে ইতিবাচক ভূমিকা রাখবে।

গ্লোবাল সাপ্লাই চেইনে স্বচ্ছতা বাড়ানোর প্রচেষ্টায় এবং তৈরি পোশাক খাতের শ্রমিকদের উপর কোভিড-১৯ এর প্রভাব আরও ভালোভাবে বুঝতে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে সহায়তার ক্ষেত্রেও প্রকল্পটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে।

রোববার রাতে সানেমের এই জরিপের ফলাফল সম্পর্কে পোশাক রপ্তানিকারকদের সংগঠন বিজিএমইএর জনসংযোগ শাখা থেকে পাঠানো এক লিখিত বক্তব্যে বলা হয়, “সব কারখানা গণপরিবহনের ব্যবস্থা করেনি। আবার সব শ্রমিকের গণপরিবহনের প্রয়োজনও পড়েনি।

“দ্বিতীয় দফায় লকডাউন চলার সময় কোনো কারখানা গণপরিবহন সুবিধা বাধ দিয়েছে বলে আমাদের জানা নেই; এ ধরনের কোনো অভিযোগ আসেনি।“

এতে আরও বলা হয়, আরেকটি বিষয় পরিষ্কার হওয়া প্রয়োজন, শ্রমিকদেরকে বেতনের সঙ্গে পরিবহন ভাতাও দেওয়া হয়। সেকারণে গণপরিবহনের ব্যবস্থা করাটা কোনো আইনি বাধ্যবাধকতার মধ্যে পড়ে না। তারপরও অনেক কারখানা শ্রমিকদের বিশেষ সুবিধা দেওয়ার জন্য পরিবহনের ব্যবস্থা করে থাকে।

সব সময় এই শিল্পের সমালোচনা না করে, শিল্প মালিকদের অব্যাহত প্রচেষ্টাকে সহানুভূতির সঙ্গে দেখা উচিত উল্লেখ করে বিজিএমই আরও জানায়, “নারী শ্রমিকদের জন্য বিআরটিসি বাসের ব্যবস্থা করতে ইতোমধ্যে আমরা সরকারকে অনুরোধ করেছি।“