কোভিড টিকা: ‘পেটেন্ট’ ছাড়ে যুক্তরাষ্ট্র সমর্থন দিলেও বিরোধিতা কমেনি

যুক্তরাষ্ট্রের সমর্থনের পরও সোমবার বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থায় (ডব্লিউটিও) কোভিড-১৯ টিকার মেধাস্বত্ব ছাড়ের প্রস্তাব নিয়ে আলোচনা ঐকমত্যের ধারে কাছেও যায়নি।

নিউজ ডেস্কবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 1 June 2021, 07:48 AM
Updated : 1 June 2021, 09:09 AM

নতুন একটি খসড়া নিয়ে কাঙ্ক্ষিত সন্দেহের কারণে ডব্লিউটিওতে নতুন করে শুরু আলোচনার এমন গতি হয়েছে বলে ঘনিষ্ঠ একটি সূত্র রয়টার্সকে জানিয়েছে।

গত সপ্তাহে ভারত, সাউদ আফ্রিকা ও আরও কয়েক ডজন উন্নয়নশীল দেশের উত্থাপিত একটি বহুল আলোচিত খসড়া নিয়ে এই আলোচনা শুরু হয়।

এ মাসের শুরুর দিকে হঠাৎ করেই যুক্তরাষ্ট্রের অবস্থান পরিবর্তনের ফলে ওষুধ প্রস্তুতকারকদের আবাস ইউরোপীয় ইউনিয়ন ও সুইজারল্যান্ডের মতো অনেকগুলো দেশের উপর পেটেন্ট মওকুফের জন্য ব্যাপক চাপ তৈরি হয়। পেটেন্ট ছাড়ের প্রস্তাব অক্টোবরে উত্থাপনের পর একাদশ অধিবেশনের এই আলোচনায় কোনো অগ্রগতি অর্জন করতে ব্যর্থ হয়েছে।

মূল অংশীজনদের বিষয়বস্তু সম্পর্কে আনুষ্ঠানিক মতামতের সুযোগ দিতে পেটেন্ট ছাড়ের প্রস্তাবের মূল সমর্থকরা সোমবার ডব্লিউটিওর একান্ত সভায় নতুন খসড়া উপস্থাপন করেন।

বৈঠকটি খুবই গুরুত্বপূর্ণ। কারণ মহাপরিচালক এনগোজি ওকনজো-ইওইলার অনুরোধ অনুযায়ী ‘টেক্সটভিত্তিক আলোচনা’ আগাবে কিনা তা এটা নির্ধারণ করবে।

জেনেভার এক বাণিজ্য কর্মকর্তা জানান, টেক্সটনির্ভর আলোচনা শুরু করার প্রস্তাব সোমবার যাদের নজর টেনেছে তাদের মধ্যে যুক্তরাষ্ট্র রয়েছে। দেশটি এর মধ্যেই টিকা উৎপাদন ও সরবরাহকে উত্সাহিত করতে পারে এমন প্রস্তাব নিয়ে আলোচনার জন্য উন্মুক্ত থাকার কথা জানিয়েছে।

সংশোধিত খসড়ার বিষয়বস্তু সরাসরি সমর্থন না করে যুক্তরাষ্ট্র বলছে, তারা এটি বিশ্লেষণ করছে।

দক্ষিণ কোরিয়া ও ব্রিটেনসহ প্রায় ১০টি দেশ সাউদ আফ্রিকা ও ভারতের প্রস্তাব নিয়ে সন্দেহ প্রকাশ করে তা পড়ে দেখার জন্য আরও সময় চেয়েছে।

সংশোধিত খসড়ার বিষয়বস্ততে সমস্যা দেখছে আলোচনা সংশ্লিষ্ট তিনটি সূত্র।

নামপ্রকাশে অনিচ্ছুক একজন বলেন, “এই ছাড়ের প্রস্তাব ও আমেরিকা যা চাইছে তার মধ্যে এক মহাসাগর তফাত আছে। এর জন্য অবশ্যই কোনও দ্রুত সমাধান নেই।”

প্রস্তাবের যে দুটি দিক দেখে বিরোধীদের মুখ শক্ত হয়ে যেতে পারে তা হল- এর পরিধি ও সময়কাল।

যুক্তরাষ্ট্রের বাণিজ্য প্রতিনিধি ক্যাথরিন তাই আগেই বলেছিলেন, তিনি কেবল টিকার সুযোগ বাড়ানোর দিকে দৃষ্টি নিবদ্ধ রাখছেন। তবে নতুন খসড়ায় তার সঙ্গে ডায়াগনস্টিকস, চিকিত্সা ও মেডিকেল ডিভাইসের কথাও অন্তর্ভুক্ত রয়েছে।

জেনেভাভিত্তিক এক সূত্র বলছে, “যুক্তরাষ্ট্রের পেটেন্ট ছাড়ের প্রস্তাব সমর্থনের মতো ‘বড় বোমা’ যখন রয়েছে, তখন অনেকে আশা করেছিল, সংশোধিত প্রস্তাবে ছাড়ের পরিধি কমিয়ে আনা হবে।”

খসড়াটি অস্থায়ী হিসাবে বিবেচিত পেটেন্ট ছাড়ের ‘কমপক্ষে তিন বছরের’ একটি সময়সীমা নির্ধারণ করেছে এবং ডব্লিউটিও ১৬৪ সদস্যের হাতে তা নির্ধারণের ক্ষমতা দিয়েছে। যেহেতু পূর্ণ ঐকমত্যের বাধ্যবাধকতা আছে, সেহেতু কোনো দেশ চাইলে এটা বারবার দীর্ঘায়িত করতে পারে।

ডব্লিউটিওর সাবেক কর্মী পিটার উঙ্গপাখর্ন এক ব্লগে বলেছেন, “প্রবক্তারা যদি এটি (সময়কাল) নিয়ে জেদ ধরেন, তাহলে প্যাটেন্ট মওকুফের বিষয়ে অবশ্যই কোনো সর্বসম্মত চুক্তি হবে না।"

জুনের শুরুতে টিকা উত্পাদন ও প্রাপ্যতা বাড়ানোর জন্য একটি বিকল্প পরিকল্পনা উপস্থাপন করতে চলেছে ইউরোপীয় ইউনিয়ন।