পাইকারিতে চালের দাম কমলেও খুচরায় প্রভাব কম

বোরো ফসল আর আমদানির কারণে পাইকারি বাজারে চালের দাম গত এক মাসে কেজিতে দুই থেকে চার টাকা পর্যন্ত কমলেও খুচরায় এর প্রভাব কম।

নিজস্ব প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 21 May 2021, 01:19 PM
Updated : 21 May 2021, 01:19 PM

শুক্রবার ঢাকার কারওয়ান বাজার ঘুরে দেখা গেছে, দেশি বিআর আটাশ চাল ৫০ কেজির বস্তা ২ হাজার ১০০ টাকায় পাওয়া যাচ্ছে, একমাস আগে যার দাম ছিল ২ হাজার ৩০০ টাক। আগের তুলনায় এই চালের দাম কেজিতে কমেছে ৪ টাকা।

একমাস আগে সরু চালের ৫০ কেজির বস্তার দাম ছিল ৩ হাজার টাকা। কেজি প্রতি যার দাম এখন ৪ টাকা কমে প্রতি বস্তা বিক্রি হচ্ছে ২ হাজার ৮০০ টাকায়।

মোটা চাল পাইজাম ও স্বর্ণা চালের দাম ২ হাজার ১০০ টাকায় নেমে এসেছে। মাসের শুরুতে ৩ থেকে ৪ টাকা বাড়তি দামে এই চালের ৫০ কেজির বস্তা ছিল ২ হাজার ২৫০ টাকা থেকে ২ হাজার ৩০০ টাকার মধ্যে।

চলতি মাসের শুরু থেকে দাম কমার এই ধারা চালের বাজারকে ‘স্বাভাবিক অবস্থায়’ ফিরিয়ে আনবে বলে আশা দিচ্ছেন পাইকারি ব্যবসায়ীরা।

কারওয়ান বাজারের কিশোরগঞ্জ রাইস এজেন্সির বিক্রেতা দেলোয়ার হোসেন বলেন, “বোরো মওসুমের ধান আসার পর থেকে, অর্থাৎ চলতি মে মাসের শুরু থেকেই চালের বাজার পড়তে শুরু করেছে।

“ইতোমধ্যে ভারত থেকে বেসরকারি পর্যায়ে চাল আমদানি বন্ধ হয়েছে। অনেক ব্যবসায়ী ভারতীয় চাল কিনে লোকসানের মুখে পড়েছে, কারণ দেশি চাল এখন ভারতীয় চালের চেয়ে কম দামে বিক্রি হচ্ছে।”

তিন জানান, ঈদের আগে ভারতীয় পাইজাম চালের ২৫ কেজির বস্তা ১ হাজার ২০০ টাকায় বিক্রি হয়েছে। এখন সেটা ১ হাজার ১০০ টাকায় বিক্রি করতে হচ্ছে।

জনতা রাইস এজেন্সির বিক্রেতা রাসেল বলেন, বাজারে এখন দুই রকম সরু চাল পাওয়া যাচ্ছে। নতুন মওসুমের চাল প্রতি ৫০ কেজির বস্তা বিক্রি হচ্ছে ২ হাজার ৭০০ টাকায়। আর পুরনো চাল এখনও ২ হাজার ৯০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।

ভারতীয় চালের দাম বস্তায় ১০০ টাকা করে কমেছে জানিয়ে তিনি বলেন, “বোরো ধান এখনও পুরোপুরি বাজারে আসেনি। ধান বাজারে বা চাতালে উঠলে দাম আরেক দফায় কমে আসতে পারে।”

অবশ্য পাইকারিতে দাম কমার প্রভাব খুচরা বাজারে তেমন দেখা যায়নি। শুক্রবারও মোহাম্মদপুরের মুদি দোকান ভাই ভাই স্টোরে প্রতি কেজি রশিদ মিনিকেট চালের দাম রাখা হচ্ছিল ৬৫ টাকা করে।

এই দোকানের ক্রেতা সাজিদুল হক বললেন, “চালের দাম কমেছে পত্রিকায় দেখলাম। আমাদের পাড়ার মুদি দোকানে এখনও দাম কমেনি।”

তবে পীরেরবাগের মুদি দোকানি ঝন্টু মিয়ার দাবি, ঈদের পরে দাম কিছুটা কমে এসেছে। মিনিকেট চালের ৫০ কেজির বস্তা একমাস আগে ৩২০০ টাকা থাকলেও এখন তা কমে তিন হাজার টাকায় নেমেছে। একইভাবে বিআর আটাশ চালের বস্তা ২৩০০ টাকায় এবং পাইজাম ও স্বর্ণা চাল ২২০০ টাকায় নেমেছে। ঈদের আগের তুলনায় সব ধরনের চালের দাম বস্তায় ৫০ টাকা থেকে ১০০ টাকা করে কমেছে।

“শুনেছি নতুন ধান বাজারে আসার পর চালের দাম কমতে শুরু করেছে। তাই আমরা পাইকারি মার্কেট থেকে কম কম করে কিনছি,” বলেন ঝন্টু।

আগের দামে ফিরছে মাছ-মাংস

ঈদের ছুটিতে সরবরাহ ঘাটতির কথা বলে দাম বাড়িয়ে দেওয়া মাছ-মাংসের দাম আবারও আগের অবস্থায় ফিরে আসছে।

এ সপ্তাহে রাজধানীর বিভিন্ন বাজারে ব্রয়লার মুরগি বিক্রি হচ্ছে প্রতিকেজি ১৩০ থেকে ১৩৫ টাকায়। আগের সপ্তাহে যা ছিল ১৫০ থেকে ১৬০ টাকা। সোনালী মুরগি ও লেয়ার মুরগির দামও কেজিতে ৫০ টাকা কমে বিক্রি হচ্ছে ২৫০ টাকায়।

পাশাপাশি গরুর মাংসের দামও কিছুটা কমেছে। শুক্রবার মিরপুর ও কারওয়ান বাজারে প্রতিকেজি গরুর মাংস বিক্রি হচ্ছিল ৫৮০ টাকায়, ঈদের ছুটিতে তা ৬০০ টাকা হয়েছিল।

আবারও চড়া পেঁয়াজ-রসুন

শুক্রবার কারওয়ান বাজারে প্রতিকেজি দেশি ও ভারতীয় পেঁয়াজ ৪২ থেকে ৫০ টাকায় বিক্রি হতে দেখা গেছে। আগের সপ্তাহে প্রতিকেজি ৩৬ টাকা থেকে ৪০ টাকায় বিক্রি হচ্ছিল।

পেঁয়াজ বিক্রেতা মোহাম্মদ মোশাররফ বললেন, প্রতি বছর মে মাসের শুরুতেই পেঁয়াজের দাম বাড়তে শুরু করে। এবার রোজা ও লকডাউনে চাহিদা কম ছিল। ঈদের পর পরিস্থিতি স্বাভাবিক হতে শুরু করেছে, দামও বাড়তে শুরু করেছে।

“কৃষকের হাতে থাকা পেঁয়াজ শেষ হওয়ার পর এখন সংরক্ষণে থাকা পেঁয়াজ বিক্রি শুরু হয়েছে। এই পরিস্থিতিতে পেঁয়াজের দাম প্রতিকেজি ৫০ টাকাও হয়ে যেতে পারে। বছরের বাকি সময়টায় ওই দামই থাকবে।”

গত এক সপ্তাহে চীন থেকে আমদানি রসুনের দাম কেজিতে ১০ টাকা বেড়ে বিক্রি হচ্ছে ১৩০ টাকায়। অবশ্য দেশি রসুন আগের মতই প্রতিকেজি ৯০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে।

কারওয়ান বাজারে কেনাকাটা করতে আসা জোবায়ের মিলন বললেন “তেল, চিনির দাম অনেক আগে থেকেই বাড়তি। এখন পেঁয়াজ রসুনের দাম বাড়তে শুরু করেছে। কয়দিন পর হয়তো শুনবেন আদা, হলুদ, মরিচের দাম বেড়ে গেছে।”

জিনিসপত্রের দাম সব সময় বাড়তেই থাকে মন্তব্য করে তিনি বলেন, “মাছ-মাংস, সবজির দাম কমেছে। পাশাপাশি নতুন মওসুমে চালের দাম কমায় ক্রেতাদের কিছুটা স্বস্তি দিলেও অন্যান্য জিনিসপত্রের দাম বেড়েই যাচ্ছে।”