লকডাউনে রমজানের প্রায় অর্ধেক সময় দোকানপাট বন্ধ রেখে বিক্রেতাদের ঘরে বসে থাকার কষ্টের অনেকটাই কেটে গেছে ঈদবাজারে শেষ সময়ের কেনাকাটায়।
বুধবার রাজধানীর বেশিরভাগ বিপণিবিতানে দিনভর ক্রেতাদের উপচে পড়া ভিড়ে স্বস্তির বিক্রিতে দোকানিরা ছিলেন মহাব্যস্ত, কথা বলার সময়ও ছিল কম।
রাজধানীর নিউমার্কেট, এলিফেন্ট রোড, মিরপুর রোডের বিভিন্ন মার্কেট, বসুন্ধরা সিটি শপিং মল, পুরান ঢাকার ওয়ারীর বিভিন্ন কাপড়ের দোকান ঘুরে দেখা যায় ঈদের কেনাকাটায় ক্রেতাদের ভিড়ে দোকানে ঢোকা বা ঢুকলেও বেশিক্ষণ দাঁড়িয়ে থাকা ছিল দায়।
বিপণিবিতানগুলোতে ক্রেতাদের কেনাকাটার আনন্দে বিক্রেতাদের খুশি উপচে পড়লেও যেভাবে গা ঘেষাঘেষি অবস্থা ছিল তাতে লকডাউনের রেশ মাত্র ছিল না।
সবগুলো বিপণিতে দেখা গেছে, ভাইরাস সংক্রমণ বিস্তারের ভয়ের বিষয়টি নিয়ে ভাবনাই যেন ছিল না ক্রেতা বা বিক্রেতাদের বেশিরভাগের মধ্যেই।
ক্রেতাদের ঈদের কেনাকাটার এই আনন্দের রেশে বেশি খুশি দোকানিরা। লকডাউনের কারণে যে হতাশা ছিল তার অনেকেই কেটেছে শেষ সময়ের ‘ভয় জাগানো’ এই ভিড়ে।
বুধবার দুপুরে গাউসিয়া মার্কেটে ভিড়ের কারণে প্রবেশ করাই ছিল কঠিন। মূলত দেশি-বিদেশি থ্রিপিস, শাড়ি, বাচ্চাদের পোশাক সাশ্রয়ী দামে বেশি পাওয়া যাওয়ায় সব এলাকার লোকজন আসেন এখানে।
বিপণিবিতানটির নিউ ফ্যাশন হাউজের মালিক আসলাম হোসেন বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “মার্কেটে সারাবছর বেচাকেনা হলেও ঈদের আগে ব্যবসাটা বেশি হয়। করোনাভাইরাসের কারণে গতবারের ঈদে ব্যবসা হয়নি। সেই ক্ষতি পোষাতে এবার বেশি বিনিয়োগ করেছিলাম।
“রোজার প্রথমদিকে লকডাউন হওয়ায় চিন্তায় পড়েছিলাম; তবে কয়েকদিন ধরে বেচাবিক্রি ভালো হচ্ছে।”
ছেলেদের প্যান্ট-শার্ট, বাচ্চাদের কাপড়েল জন্য অনেকেই আসেন নিউ মার্কেটে। ভিড় বাড়ার সঙ্গে প্রত্যাশা অনুযায়ী ক্রেতা পাওয়ায় কথা জানান এখানকার ব্যবসায়ীরাও।
নিউ মার্কেটে শার্ট প্যান্ট কিনতে আসা ইয়াছিন নামের আরেকজন ক্রেতা বলেন, “রাতে বাড়ি যাব, আজকে ঈদের কেনাকাটা করতে এসেছি। মার্কেটে এসে দেখি অবস্থা ভয়াবহ।
“এত মানুষ, সবাই কেনাকাটায় ব্যস্ত। এখন পর্যন্ত দুটি প্যান্ট ও দুটি শার্ট কিনেছি। এরপর পাঞ্জাবি কিনব। অন্যান্য সময়ের তুলনায় দাম অনেক বেশি। দাম বেশি হলেও কিনতে তো হবেই।”
রাজধানীর ওয়ারীতে একটি শাড়ি কাপড়ের দোকানে মানুষের ভিড়ে ভেতরে প্রবেশের উপায় নেই।
বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী তাসলিমা আক্তার বলেন, “এতদিন ঘর থেকে বের হইনি। ঈদ সামনে, কেনাকাটা তো করতেই হবে। বাসায় মা, দাদি আছেন। তাদের জন্য শাড়ি কিনতে এসেছি। বাচ্চাদের জন্যও জামাকাপড় কিনতে হবে। কিন্তু এত ভিড় যে কেনার কোনো অবস্থাই নেই।”
একটি পোশাকের দোকানের বিক্রেতা মোহাম্মদ ওসমান বলেন, “ভিড় যেমন বেচাকেনাও তেমন। আজকেই একটু বেশি ক্রেতার ভিড়। দুই একদিনে ক্রেতা বেড়েছে।”
ঈদ উপলক্ষে জমে উঠেছে এলিফ্যান্ট রোডের জুতোর দোকানগুলোও । এখানে জুতো, বেল্ট সাধ্য অনুযায়ী পাওয়া যায় বলে দূর থেকেও অনেকে আসেন।
বুধবার জুতোর দোকানগুলোতে ছিল উপচে পড়া ভিড়। এত ক্রেতা যে বিক্রেতাদের দম ফেলার সুযোগ নেই।
‘টপসুজ’এর বিক্রেতা কবির বলেন, “বিক্রি বেশ ভালো। আমাদের এখানে মেয়েদের নানা ধরনের জুতা-স্যান্ডেল পাওয়া যাচ্ছে ২৫০ থেকে এক হাজার ১০০০ টাকায়। শিশু ও কিশোর-কিশোরীদের ১০০ থেকে ৮০০ টাকায় নানা ধরণের জুতো পাওয়া যায়।”
নিম্নআয়ের মানুষের পাশাপাশি নিম্নবিত্ত এমনকি মধ্যবিত্তদের কেউ কেউ ভিড় জমান এসব ফুটপাতের দোকানে।
কামরাঙ্গীর চর থেকে আসা ফুটপাতের ব্যবসায়ী সবুর খান বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “মার্কেটের ভেতর থেকে কিনতে প্রতি জামায় লাগে দেড় থেকে দুই হাজার টাকা। আর ফুটপাতে তা মিলছে মাত্র দুইশ থেকে তিনশ টাকায়।”
গাউসিয়া মার্কেটের সামনের রাস্তায় কাপড় বিছিয়ে বাচ্চাদের জামা কাপড় বিক্রি করছিলেন আব্দুর রহিম।
তিনি বলেন, “কম দামে কিনি, তাই কম দামে বিক্রি করি। আমাদের এখান থেকে সব ধরনের লোক বাচ্চাদের কাপড় কিনে। আজকে দেখেন ভিড় বেশি, ব্যবসাও ভালো।“
শুক্রবার ঈদ হওয়ায় আরো একটা দিন সুযোগ পাবেন; হয়ত স্বাভাবিক সময়ের মতো ‘চাঁন রাতে’র বিক্রির আশাও করছেন কেউ কেউ।