বুধবার ঈদের আগে শেষ কর্মদিবসে পোশাক খাতের সার্বিক পরিস্থিতি নিয়ে সংবাদ সম্মেলনে এই আশার কথা শোনান তিনি।
ফারুক হাসান জানান, বিজিএমইএর সদস্যভূক্ত ১ হাজার ৯১৩টি (ঢাকায় ১ হাজার ৬৬৭টি ও চট্টগ্রামে ২৪৬টি) কারখানার মধ্যে মঙ্গলবার পর্যন্ত এপ্রিলের বেতন পরিশোধ করেছে ১ হাজার ৮৬৬টি কারখানা। শতাংশের হিসাবে যা ৯৭ দশমিক ৫৪।
ঢাকায় ১ হাজার ৬৫২টি এবং চট্টগ্রামে ২১৪টি কারখানা বেতন দিয়েছে। আর বোনাস দিয়েছে ১ হাজার ৮৮৩টি কারখানা বা ৯৯ শতাংশ কারখানা।
“বুধবারের মধ্যে ঢাকায় ১৫টি কারখানা এপ্রিল মাসের বেতন ও ১৮টি কারখানা বোনাস পরিশোধ করবে। সেই প্রস্তুতি তারা নিচ্ছে। চট্টগ্রামেও ৩২টি কারখানা এপ্রিলের বেতন ও ২৩টি কারখানা বোনাস পরিশোধ করবে,” বলেন এই ব্যবসায়ী নেতা।
করোনাভাইরাস সংক্রমণের ঊর্ধ্বগতি ঠেকাতে লকডাউন চলছে, এর মধ্যেই এবার উদযাপিত হচ্ছে মুসলিমদের সবচেয়ে বড় ধর্মীয় উৎসব ঈদুল ফিতর।
এই পরিস্থিতিতে সব নাগরিককে গ্রামের বাড়ি না গিয়ে নিজ কর্মস্থলে থেকে ঈদ উদযাপন করার আহ্বান জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
মহামারীর বিস্তার ঠেকাতে কঠোর বিধিনিষেধের মধ্য সরকারি ও বেসরকারি প্রতিষ্ঠান এবং দূরপাল্লার যাত্রীবাহী গাড়ি ও ট্রেন বন্ধ রয়েছে। তবে শিল্প-কারখানা চালু রয়েছে।
এবার ঈদের সাধারণ ছুটি তিনদিন। পোশাক শ্রমিকদের ক্ষেত্রেও ছুটি তিনদিন বহাল রাখার পরামর্শ দিয়েছে শ্রম মন্ত্রণালয়।
তবে ঢাকা, সাভার, গাজীপুরে বেশকিছু পোশাক কারখানা ঈদের ছুটি বাড়িয়ে দিতে আগেই শ্রমিকদেরকে দিয়ে সাপ্তাহিক ছুটির দিনে বাড়তি কাজ করিয়ে নিয়েছে। ফলে এসব কারখানায় ঈদের ছুটি কমিয়ে তিনদিনে সীমাবদ্ধ করতে গিয়ে ঘটেছে বিপত্তি।
সংবাদ সম্মেলনে সেই প্রসঙ্গটি তুলে এনে এই ঘটনার জন্য দুঃখ প্রকাশ করেন বিজিএমইএর সভাপতি। ছুটির বিষয়ে শ্রম আইনের ধারাগুলোও সবাইকে স্মরণ করিয়ে দেন তিনি।
“আমরা দুঃখের সঙ্গে লক্ষ্য করেছি, ছুটিকে কেন্দ্রে করে কিছু কারখানায় শ্রম অসন্তোষ ঘটেছে। শ্রমিক ভাই-বোনেরা ঈদের ছুটি কিছুটা বাড়িয়ে নিয়ে পরিবার পরিজন নিয়ে গ্রামে ঈদ করতে চাইবেন এটাই স্বাভাবিক, এর সঙ্গে আমাদের কোনো দ্বিমত নেই। কিন্তু এবারের বাস্তবতা সম্পূর্ণ ভিন্ন।”
তবে শ্রমিকরা চাইলে মালিক শ্রমিক আলোচনার ভিত্তিতে সপ্তাহিক ছুটির দিনে কাজ করে সেই দিনটি উৎসব ছুটির সঙ্গে যোগ করে ভোগ করতে পারবেন। এটা শ্রম আইনে বলা আছে।
তবে সাপ্তাহিক ছুটির দিনে কাজের জন্য বেতন বা অন্য কোনো অধিকার দেওয়া হবে না। সেই হিসাবে ঈদের ছুটি কারখানাভেদে ৪ থেকে ৮ দিন করে দেওয়া হয়ে থাকে,” বলেন তিনি।
“শ্রমিক ভাইবোনদের প্রতি অনুরোধ, ছুটি নিয়ে যে কোনো ধরনের বিভ্রান্তি ও বিশৃঙ্খলা এড়িয়ে চলুন। এবারের ঈদে গ্রামের যাওয়া থেকে বিরত থেকে কর্মস্থলের কাছাকাছি অবস্থান করে ঈদ উদযাপন করুন। এই ত্যাগ শিকারের মাধ্যমে সবার জীবন ও জীবিকা রক্ষা পাবে।”
কেমন যাচ্ছে পোশাক খাত
সংবাদ সম্মেলনে মহামারীর কারণে পোশাক খাতে খারাপ পরিস্থিতি তুলে ধরে আগামী বাজেটেও সরকারের কাছে বেশ কিছু নীতি সহায়তা চান পোশাক রপ্তানিকারকরা।
গত ২০১৯-২০২০ অর্থবছরে রপ্তানি ১৮ শতাংশ কমে যাওয়া এবং চলতি অর্থবছরের প্রথম ১০ মাসে রপ্তানি ২০১৮-১৯ অর্থবছরের তুলনায় ৮ দশমিক ৭২ শতাংশ কমেছে বলে সংবাদ সম্মেলনে জানান হয়।
সংবাদ সম্মেলনে আরো জানানো হয়, গত সেপ্টেম্বর থেকে পোশাকের দরপতন সাড়ে ৪ থেকে ৫ শতাংশ হারে অব্যাহত আছে। অনেক ক্রেতা বা ব্র্যান্ড ক্রয়াদেশের বিপরীতে মূল্য পরিশোধ করেনি। অনেকে আবার দেউলিয়া হয়ে গেছে।
এতে অনেক কারখানা আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। অনেক কারখানা মালিক পণ্য রপ্তানি করার পর মূল্য পাননি। তবুও তাকে ব্যাক টু ব্যাক এলসির দায় পরিশোধ করতে হয়েছে।
ফারুক হাসান বলেন, স্বাস্থ্যবিধি মেনে কারখানা চালাতে গিয়ে একদিকে খরচ বেড়েছে। অপরদিকে ক্রয়াদেশ কম থাকার কারণে কারখানার পুরো সক্ষমতা কাজে লাগাতে পারছি না।
ক্রেতাদের ‘সোর্সিং প্যাটার্নে’ পরিবর্তন এসেছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, তারা কম পরিমাণে স্বল্প সময়ের মধ্যে কেনাকাটা করতে চাচ্ছেন। সেই সঙ্গে তুলা ও সুতার মূল্য বেড়েছে, ফ্রেইট কস্ট বা পণ্য পরিবহনের ব্যয় বেড়েছে। এই পরিস্থিতিতে শুধু বাজার ধরে রাখতে ব্রেক ইভেনের চেয়েও কম মূল্যে কারখানা চালু রাখতে হচ্ছে।
২০২১-২০২২ অর্থবছরের বাজেট থেকে প্রত্যাশা
>> শ্রমিকের বেতন ভাতা পরিশোধের জন্য সরকারের দেওয়া প্রণোদনা ঋণ দুই বছরে ১৮টি কিস্তিতে পরিশোধ করার কথা। সেটা বাড়িয়ে তিন বছরে ৩০টি কিস্তিতে পরিশোধের সুযোগ চান পোশাক মালিকরা।
>> রপ্তানিমুখী তৈরি পোশাক শিল্পের জন্য রপ্তানির বিপরীতে প্রযোজ্য উৎসে কর ০.৫০ শতাংশ থেকে হ্রাস করে ০.২৫ শতাংশ করা এবং তা আগামী ৫ বছর পর্যন্ত কার্যকর রাখার দাবি জানানো হয়।
>> পোশাক শিল্পের জন্য করপোরেট কর ১২ শতাংশ এবং গ্রিন কারখানার জন্য ১০ শতাংশ করা আছে। এই নিয়ম আগামী ৫ বছর পর্যন্ত অপরিবর্তিত রাখার অনুরোধ জানায় বিজিএমইএ।
>> ক্ষতিগ্রস্ত পোশাক কারখানাগুলোর ব্যাংকের দায়কে সুদমুক্ত ব্লক অ্যাকাউন্টে ১০ বছরের জন্য স্থিতি অবস্থায় রাখতে বাজেটে বিশেষ বরাদ্দ। সেই সঙ্গে এসব কারখানাকে উৎপাদনে ফিরিয়ে আনতে ঋণ পুনঃতফসিলিকরণ এবং বর্ধিত মেয়াদে ৫% হারে নতুন ঋণ প্রদান করা।
>> নগদ সহায়তার উপর আয়কর কর্তনের হার ১০ শতাংশ থেকে শূন্য শতাংশে নামানো।