রোজার শেষ দিকের ঈদের এই কেনাকাটায় রাজধানীর বিপণিবিতানগুলোতে নারী-পুরুষদের চেয়ে শিশুদের পোশাকের দোকানে ভিড়ের পাশাপাশি বিক্রিও হচ্ছে বেশি।
মঙ্গলবার বৃষ্টির কারণে মার্কেটগুলোতে ক্রেতা সমাগম কম হলেও, শিশুদের পোশাক বিক্রিতে সন্তুষ্ট বিক্রেতারা।
নিউমার্কেট ও মিরপুর এলাকার বিপণিবিতানগুলো ঘুরে দেখা যায়, সেখানে শিশুদের পোশাকের চাহিদাই ছিল সবচেয়ে বেশি।
আবার কিছু জায়গায় ভিন্ন চিত্রও দেখা গেছে। যেমন ঈদের আগে মিরপুর ২ নম্বরের বৈশাখী ফ্যাশন হাউজে সব বয়সীদের পোশাকই বেশি বিক্রি হচ্ছে। তবে বাড়তি চাহিদা ছিল শিশুদের পোশাকের।
এই দোকানের বিক্রয়কর্মী নাজমুল হাসান জানান, ঈদ উপলক্ষে শিশুদের পোশাকের জন্য বাড়তি প্রস্তুতি নিয়েছেন তারা, সে অনুযায়ী সাড়াও পাচ্ছেন।
“মেয়ে বাবুদের ফ্রক, গাউন আর ছেলে বাবুদের পাঞ্জাবিটা আমরা বেশি সেল করছি। অনেকে গিফট আইটেম হিসেবেও এগুলো নিচ্ছেন।”
এই এলাকার বেবি শপে শিশুদের পোশাকের পাশাপাশি খেলনাও বেশ বিক্রি হচ্ছে।
তিনি বলেন, “আমাদের সব আইটেমই তো শিশুদের। সবসময়ই টুকটাক বিক্রি চলে। শুক্রবার, শনিবার বেশ বিক্রি হয়েছে। আজকে মনে হচ্ছে বৃষ্টির কারণে কাস্টমার একটু কম।”
মিরপুর ২ নম্বরে কেনাকাটা করতে আসা গোলাম মোস্তফা জানান, বাচ্চাদের কাপড় কিনতেই মার্কেটে এসেছেন তিনি।
তিনি বলেন, “আমাদের কাপড় আগেই কিনে রেখেছি। আজকে একটু সময় নিয়ে তিন বাচ্চার জন্য কাপড় কিনতে এসেছি। তাদের পছন্দের ব্যাপার আছে। ঈদটা তো তাদের জন্যই।”
মিরপুরের নান্নু মার্কেটে ছেলেদের প্যান্ট-শার্ট, টি-শার্টের মত গার্মেন্টস আইটেমগুলোই বেশি বিক্রি হয়।
এই মার্কেটের দোকানগুলো ঘুরে দেখা যায়, এসব দোকানে শিশুদের জিনস প্যান্ট, টি-শার্ট, শার্টই বিক্রি হচ্ছে বেশি।
এখানকার মনিরা ফ্যাশনের বিক্রেতা রাকিব বলেন, “ঈদের সময়ে আমাদের গার্মেন্টস আইটেমগুলো খুব বেশি বিক্রি হয় না। তবে যা বিক্রি হচ্ছে তার ম্যাক্সিমামই বাচ্চাদের। বাচ্চাদের আইটেম দিয়েই এখন দোকান চলছে।”
মিরপুরের শাহআলী প্লাজার বিক্রমপুর ড্রেস হাউজে শিশুদের পোশাকই তুলনামূলকভাবে বেশি। পাশের অন্যগুলোর চেয়ে এই দোকানে ক্রেতাদের ভিড় ছিল বেশি।
জানতে চাইলে বিক্রেতা মেহেদী হাসান বলেন, “আমাদের ছোট বাচ্চাদের প্রডাক্টগুলা ভালো সেল হচ্ছে। বাবা-মায়েরা বাচ্চাদের নিয়ে এসেও পছন্দ করে কিনে নিয়ে যাচ্ছে। আবার অনেকে নিজেরাই কিনে নিচ্ছে।
“অন্যান্য দোকানের চেয়ে আমাদের এখানে কিছুটা কাস্টমার বেশি দেখতেছি। বেবি প্রডাক্ট বেশি থাকায় মোটামুটি বিক্রি হচ্ছে।”
সাধারণ দোকানগুলোর পাশাপাশি ব্র্যান্ডের শোরুমগুলোতেও শিশুদের পোশাকের চাহিদা ছিল বেশি।
আড়ংয়ে মেয়ের জন্য পোশাক কিনতে আসা জান্নাত আরা বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “রোজার ঈদের আনন্দ পোশাকে। বাচ্চারা অপেক্ষায় থাকে দিনটাকে রঙিন করতে। আমাদের তো আর সেই বয়সটা নেই। এখানে অনেক কালেকশন থেকে দেখে নেয়া যাবে। আবার সাইজটা নিয়েও সমস্যা হবে না, তাই এখানেই চলে এলাম।”
এখানকার বিক্রয়কর্মী রাসেল জানান, এবার তাদের ছেলে শিশুদের পাঞ্জাবি-পায়জামা ও মেয়ে শিশুদের থ্রি-পিস আর ফ্রকই বেশি বিক্রি হচ্ছে।
“আজ বৃষ্টি থাকায় কাস্টমার কিছুটা কম ছিল। তারপরও তো দেখছেন, অনেক কাস্টমার আসছে। সব ড্রেসই চলছে, শিশুদেরটা একটু বেশিই বিক্রি হচ্ছে।”
অন্যান্য বিপণিবিতানের তুলনায় নিউ মার্কেট ও গাউসিয়ার দোকান ও ফুটপাতে ভিড় ছিল বেশি। তবে বৃষ্টির বাগড়ায় ফুটপাতের ব্যবসায়ীরা বিক্রিতে সুবিধা করতে পারেননি।
শিশুদের পোশাকের দোকান সাজুনি ফ্যাশনের ম্যানেজার আবু ইউসুফ জানান, তাদের দোকানে শিশুদের প্যান্ট, টি-শার্ট, ফ্রকের মত আইটেমগুলোই বেশি বিক্রি হচ্ছে।
“বাচ্চাদের ড্রেসের বেচাকেনা ভালো। এবার তো এমনিতে কমই বিক্রি হচ্ছে। মার্কেটের টাইম কমায় দিছে, আবার করোনার কারণে মানুষ বের হয় না। কিন্তু সেই অনুযায়ী ভালোই বিক্রি হচ্ছে বাচ্চাদের আইটেম।”
তিনি বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “তিন-চারদিন ভালোই কাস্টমার পাইছি। কিন্তু আজকে খুব কম কাস্টমার ছিল। অনেকে তো আবার বাড়িতে চলে গেছে। এ কারণেও হয়ত কাস্টমার কম ছিল।”
গাউছিয়া মার্কেটে বাচ্চাদের নিয়ে পোশাক কিনতে আসা পুরান ঢাকার ফারিয়া রহমান বলেন, “গতবার ঈদে তেমন কিছু কেনাকাটা করতে পারিনি। এবার পরিস্থিতিটা একটু ভালো মনে হচ্ছে। তাই নিজের জন্যও কিনেছি, বাচ্চাদের জন্যও কিনেছি।”
আরও পড়ুন