চীনের সঙ্গে ফ্লাইট চায় পদ্মা রেল সংযোগের ঠিকাদার

করোনাভাইরাস মহামারীর কারণে আন্তর্জাতিক ফ্লাইট বন্ধ থাকায় পদ্মা সেতুর রেল সংযোগসহ অন্যান্য বড় প্রকল্পের কাজ ব্যাহত হওয়ার কথা তুলে ধরে চীনের সঙ্গে উড়োজাহাজ চালুর দাবি উঠেছে।

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 17 April 2021, 07:09 PM
Updated : 17 April 2021, 07:09 PM

শনিবার পদ্মা সেতু রেল সংযোগ প্রকল্পের ঠিকাদার প্রতিষ্ঠান চায়না রেলওয়ে গ্রুপ লিমিটেডের (সিআরইসি) পক্ষে সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়।

সিআরইসি বলছে, করোনাভাইরাস মহামারীর কারণে প্রকল্পের সঙ্গে জড়িত কর্মকর্তা এবং প্রকল্প এলাকার শ্রম ব্যবস্থাপনা ক্রমাগত ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। এখন ফ্লাইট বন্ধ রাখায় প্রকল্পের অগ্রগতি আরও বাধাগ্রস্ত হচ্ছে।

‘সর্বাত্মক লকডাউনে’বাংলাদেশ থেকে সব আন্তর্জাতিক ফ্লাইট বন্ধ থাকায় শুধু পদ্মা সেতু রেল সংযোগ নয়, তা অন্যান্য মেগা প্রকল্পেও প্রভাব ফেলছে বলে মনে করছে সিআরইসি।

প্রতিষ্ঠানটি বলেছে, পদ্মা সেতু রেল সংযোগ প্রকল্প চীন ও বাংলাদেশের গুরুত্বপূর্ণ একটি যৌথ প্রকল্প। বর্তমানে, পুরোদমে চলছে এটির কাজ। এ কারণে প্রকল্প সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের উভয় দেশের মধ্যে প্রায়ই ভ্রমণ করতে হচ্ছে।

চীনা ঠিকাদার কোম্পানিটি জানায়, প্রায় ৩০ জন ব্যক্তিকে প্রতি সপ্তাহে চীন ও বাংলাদেশে আসা-যাওয়া করতে হয়, যাদের মধ্যে রয়েছেন প্রকল্প পরিচালক, সুরক্ষা ও মান যাচাই এবং কারিগরি নির্মাণ কর্মকর্তাদের মতো গুরুত্বপূর্ণ পদে থাকা ব্যক্তি।

সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা চীন থেকে নির্মাণ স্থানে সময়মতো ফিরতে না পারলে বেশ কয়েকটি কাজের প্রক্রিয়া বাস্তবায়ন কঠিন হয়ে পড়বে এবং কিছু কাজ বাধ্য হয়ে স্থগিত করতে হবে। এটি নির্মাণের অগ্রগতিতে সরাসরি নেতিবাচক প্রভাব ফেলবে।

সিআরইসি জানায়, বর্তমানে চীনে বৈশ্বিক মহামারি পরিস্থিতি কার্যকরভাবে নিয়ন্ত্রণ করা হচ্ছে। সেখান যেসব কর্মী বাংলাদেশে এসেছেন তারা সবাই দুই ডোজ টিকা গ্রহণ করেছেন। সে কারণে তারা এ দেশে করোনাভাইরাস সংক্রমণের ক্ষেত্রে ঝুঁকি তৈরি করবেন না।

একই সঙ্গে কোম্পানির নির্বাহী পদে থাকা ব্যক্তিরা জানিয়েছেন, বাংলাদেশ সরকার যদি ভবিষ্যতে বাংলাদেশে ফিরে আসা চীনা কর্মীদের জন্য নির্ধারিত স্থানে সেন্ট্রালাইজড কোয়ারান্টাইনের নীতিমালা তৈরি করে, তবে তারা আর আসতে চাইবেন না। এই বিষয়গুলো প্রকল্পের অগ্রগতিতে মারাত্মক প্রভাব ফেলেছে।

সিআরইসি জানায়, ফ্লাইট চলাচল স্থগিত থাকার প্রভাব পড়ছে নৌপথে পণ্য পরিবহনের ক্ষেত্রেও। এতে চট্টগ্রামে প্রকল্পের জন্য অর্ডার করা ইস্পাত বিম, ইস্পাত বার ও ভূ-প্রযুক্তিগত সামগ্রী বহনকারী জাহাজের জটও দেখা দিয়েছে।

এছাড়া, বন্দরে উচ্চ হারে ডেমারেজ ফি, অতিরিক্ত পোর্ট স্টোরেজ চার্জ ও জ্বালানি চার্জ প্রকল্পটির মারাত্মক আর্থিক ক্ষতি করছে। ইস্পাত বিম, রেল এবং আরও জিনিসপত্র আসতে দেরি হচ্ছে, যা প্রকল্পের সরঞ্জাম সরবরাহের ক্ষেত্রেও একটি চ্যালেঞ্জ বলে উল্লেখ করেছে চীনা ঠিকাদার প্রতিষ্ঠানটি।

দেশে করোনাভাইরাস মহামারীর সংক্রমণ বাড়তে থাকায় ১৪ এপ্রিল থেকে শুরু ‘সর্বাত্মক লকডাউনে’ বাংলাদেশ থেকে আন্তর্জাতিক ফ্লাইট বন্ধ রয়েছে। তবে শনিবার থেকে প্রবাসীদের বিদেশে পাঠাতে বিশেষ ফ্লাইট পরিচালনার সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার।

কোভিড -১৯ নিয়ন্ত্রণে বাংলাদেশ সরকারের নেওয়া প্রচেষ্টার প্রশংসা করে সিআরইসি বলেছে, তারা সরকারের মহামারি প্রতিরোধ বিধি অনুসরণ করবে।

এসব বিষয় বিবেচনা করে, সিআরইসি বাংলাদেশে চীনা প্রতিষ্ঠানগুলোর প্রতিনিধি হিসেবে চীন ও বাংলাদেশের মধ্যে ফ্লাইট পুনরায় চালুর আবেদন জানায়।

পদ্মা সেতু রেল সংযোগ প্রকল্পের (পিবিআরএলপি) পরিচালক গোলাম ফখরুদ্দিন এ চৌধুরীর সঙ্গে এ বিষয়ে একাধিকবার চেষ্টা করা হলেও টেলিফোনে পাওয়া যায়নি।

এ প্রকল্পের আওতায় পদ্মা সেতু হয়ে ঢাকা থেকে যশোর পর্যন্ত ৩৯ হাজার ২৫৮ কোটি ১৩ লাখ টাকা ব্যয়ে ১৭৩ কিলোমিটার ব্রডগেজ রেলপথ বসানো হচ্ছে।

২০২৪ সালের জুনের মধ্যে প্রকল্পের কাজ শেষ করার লক্ষ্য নির্ধারণ করা হয়েছে।

আরও পড়ুন