এক প্রজন্ম থেকে নতুনদের কাছে নেতৃত্বের এই হাতবদল পোশাক শিল্পের অগ্রগতি এবং সক্ষমতা অর্জনের পথে এগিয়ে যাওয়ার ইঙ্গিত হিসেবে দেখছেন খাত সংশ্লিষ্টরা।
তৈরি পোশাক প্রস্তুত ও রপ্তানিকারকদের সমিতি বিজিএমইএর দ্বিবার্ষিক নির্বাচন রোববার অনুষ্ঠিত হয়। এতে প্রতিদ্বন্দ্বীতাকারী দুই প্যানেল থেকে পরিচালক পদে নির্বাচন করা পাচ তরুনের বাবা অথবা মা ছিলেন সংগঠনের সাবেক সভাপতি। এরমধ্যে চারজন বিপুল ভোটে জয়ী হয়েছেন।
এদের বাইরে আরও অন্তত চার উদ্যোক্তার ছেলে ও মেয়ে এবার জয়ী হয়েছেন।
ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের প্রয়াত মেয়র আনিসুল হক একসময় বিজিএমইএর নেতৃত্ব দিয়েছিলেন। তার স্ত্রী রুবানা হক বর্তমান সভাপতি। তাদের ছেলে নাভিদ হক নির্বাচনে প্রথমবারের মতো পরিচালক হিসেবে জিতে এসেছেন। নির্বাচনে মা ও ছেলে উভয়ই জয়ী হয়েছেন।
একইভাবে সাবেক সভাপতি সিদ্দিকুর রহমানের ছেলে ইমরানুর রহমান, সাবেক সভাপতি আবদুস সালাম মুর্শেদীর মেয়ে শেহরিন সালাম ঐশী, আরেক সভাপতি কুতুবুদ্দিনের ছেলে তানভীর আহমেদ এবারই পরিচালক নির্বাচিত হয়েছেন।
এর বাইরেও চট্টগ্রামের ব্যবসায়ী নেতা মাহবুবুর রহমানের ছেলে তানভীর হাবিব, দেশের শুরুর দিককার পোশাক কারখানা উদ্যোক্তা নুরুল কাদির খানের মেয়ে ভিদিয়া অমৃত খানসহ আরও বেশ কয়েকজন পরিচালক পদে নির্বাচিত হয়েছেন।
“দ্বিতীয় প্রজন্মের মধ্যে অনেকেই আছেন যারা এই খাতকে নেতৃত্ব দিতে সক্ষম। বিজিএমইএ সঠিক সময়ে দ্বিতীয় প্রজন্মকে নেতৃত্বে নিয়ে এসেছে,” বলেন হাতেম।
বিকেএমইএর আরেক নেতা ফজলে শামীম এহসান বলেন, এক দশকেরও বেশি সময় আগে পোশাক শিল্পে দ্বিতীয় প্রজন্মের লোকজন ব্যবস্থাপনায় যুক্ত হয়েছে। এবার ঢাকা ও চট্টগ্রাম থেকে নির্বাচিত ৩৫ পরিচালকের মধ্যে চারজনের বাবা অথবা মা বিজিএমইএর সভাপতি ছিলেন। এর বাইরেও ৮ থেকে ১০ জন রয়েছেন যারা বয়সে তরুণ এবং দ্বিতীয় প্রজন্মের ব্যবসায়ী হিসেবে প্রথমবারের মতো নেতৃত্বে এসেছেন।
গত একমাস ধরে পোশাক রপ্তানিকারকদের দুই জোট ফোরাম ও সম্মিলিত পরিষদ নির্বাচনে জয়ী হতে ব্যাপক প্রচারণা চালায়। দুই পক্ষই চমক হিসেবে নেতৃত্বে নবীন ও অভিজ্ঞদের যৌথ নেতৃত্বের কথা প্রচার করে আসছিল।
নবনির্বাচিত নাভিদুল হক মনে করেন, এই নির্বাচন একদিকে যেমন পোশাকখাতে তার অবদান রাখার সুযোগ করে দিয়েছে, তেমনি খাত সংশ্লিষ্ট অনেক মানুষের সঙ্গে পরিচিত হওয়ার সুযোগও তৈরি করেছে।
“এই এক মাসে ছোট ও মাঝারিসহ অনেক উদ্যোক্তার সঙ্গে মিশেছি। তাদের ব্যবসা বিষয়ক অনেক ঘটনা সম্পর্কে জানতে পেরেছি। এমনকি আমার বাবা আনিসুল হক ও আম্মা রুবানা হকের সঙ্গেও যারা চলাফেরা করেন এমন অনেকের সঙ্গেও আলাপ আলোচনা হয়েছে। সত্যিকার অর্থে এই নির্বাচন অনেক অভিজ্ঞতা দিয়েছে,” বলেন নাভিদ।
এ খাতের উন্নয়নে কী ধরনের কাজ করার পরিকল্পনা রয়েছে জানতে চাইলে তিনি বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “ছোটখাটো ব্যবসায়িক সংগঠনের কাজ করার অভিজ্ঞতা আগেও ছিল। গত দুই বছরে আম্মার সঙ্গে বিজিএমইএর বিভিন্ন কাজে যুক্ত থেকেছি। ফলে এখন জ্যেষ্ঠরা যে দায়িত্ব দেবেন তা পালন করতে পারবো।“
২০১২ থেকে ২০১৪ সাল পর্যন্ত বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন অব সফটওয়্যার অ্যান্ড ইনফরমেশন সার্ভিস বা বেসিসের পরিচালক ছিলেন নাভিদ। বর্তমানে বাংলাদেশ ইন্ডেপিন্ডেন্ট পাওয়ার প্রডিউসার্স অ্যাসোসিয়েশনের সহসভাপতি তিনি। বিজিএমইএর গত পর্ষদে অনলাইন ডিউটি কমিটিতে কাজ করেছেন তিনি।
নির্বাচনে জিতে আসার অনুভূতি ব্যক্ত করে সাবেক সভাপতি সিদ্দিকুর রহমানের ছেলে ইমরানুর রহমান সম্মিলিত পরিষদের সবাইকে ধ্যন্যবাদ জানিয়ে বলেন, জ্যেষ্ঠ নেতৃত্ব যে ধরনের কাজ দেবেন, তাই পালন করার ইচ্ছা আছে। এর আগেও সংগঠনের ফরেন মিশন সেল নামের স্ট্যান্ডিং কমিটির সভাপতি হিসাবে কাজ করেছেন তিনি। শ্রমিক, কর্মকর্তা-কর্মচারীদের সমন্বয়ে ফুটবল টুর্নামেন্টের প্রচলন করার কথা জানিয়ে তিনি বলেন, যা এখনও সব মহলে প্রশংসিত।