লকডাউন: পথের ভোগান্তি মেনে কাজে শ্রমিকরা

সারাদেশে ‘লকডাউনের’ প্রথম দিনে আগের মত সচল রয়েছে শিল্প-কারখানা। ন্যূনতম স্বাস্থ্যবিধি মেনে কাজে এসেছেন শ্রমিকরা। আসার পথে সড়কে অবশ্য তাদের বেশ ঝামেলা পোহাতে হয়েছে।

নিজস্ব প্রতিবেদকও সাভার প্রতিনিধিবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 5 April 2021, 12:54 PM
Updated : 5 April 2021, 02:33 PM

এক সপ্তাহের লকডাউন শুরুর প্রথম দিন সোমবার রাজধানী ঢাকাসহ আশেপাশের শিল্প অধ্যুষিত এলাকাগুলোতে ঢিলেঢালা ভাব থাকলেও চলেনি গণপরিবহন।

এতেই মূলত দৈনন্দিন চলাফেরায় ছন্দপতন ঘটে শ্রমিক, কর্মচারী ও ব্যক্তিগত গাড়ির সুবিধা না থাকা কর্মকর্তাদের। তাদের কারখানায় পৌঁছাতে বেশ বেগ পেতে হয়। বিশেষ করে দূরের শ্রমিকদেরকে হেঁটে কর্মস্থলে যাওয়ার ভোগান্তি ছিল অনেক বেশি।

সোমবার কয়েকটি রপ্তানিমুখী পোশাক কারখানার খোঁজ নিয়ে দেখা যায়, দেশে করোনাভাইরাস সংক্রমণের প্রথম দিকে স্বাস্থ্যবিধি মেনে চালু থাকা সুরক্ষার ব্যবস্থা সময়ের ব্যবধানে অনেকটাই শিথিল হয়ে যায়। সব কারখানায় আগের মত মাস্ক, হ্যান্ড সেনিটাইজার ও তাপমাত্রা মাপার যন্ত্র ব্যবহার করে কর্মীদের কাজে যোগ দেওয়ার কার্যক্রমে ভাটা পড়ে। আবার সংক্রমণ বাড়লেও খুব একটা কড়াকড়ি নেই এখনও।

তবে কারও মধ্যে অসুস্থতা দেখা দিলে তাকে আইসোলেশনে রাখাসহ অন্যান্য পদক্ষেপ ইতোমধ্যে চালু হয়েছে বলে জানিয়েছেন কারখানা সংশ্লিষ্টরা।

ঢাকার অদূরে সাভার ও গাজীপুরের কারখানা অধ্যুষিত এলাকায় খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, হঠাৎ গণপরিবহন বন্ধে বেশিরভাগ শ্রমিক যাওয়া আসায় বিপত্তিতে পড়েছেন। বিশেষ করে যারা দূরে থাকেন তাদের ভোগান্তি ছিল সীমাহীন। কারখানার আশেপাশে অবস্থানকারীদের জীবনযাত্রায় লকডাউনের প্রভাব সীমিত।

মহামারীর বিস্তার বেড়ে যাওয়ার কারণে সোমবার থেকে সারাদেশে সাত দিনের জন্য গণপরিবহন বন্ধ রাখাসহ বেশকিছু বিধিনিষেধ কার্যকর করেছে সরকার। এর মেয়াদ বাড়বে কিনা সেই সিদ্ধান্ত জানা যাবে আগামী বৃহস্পতিবার। এর আগে পর্যন্ত এভাবেই প্রতিদিন কষ্ট করে কারখানায় আসার ঝক্কি পোহানো নিয়ে দুশ্চিন্তার কথা জানিয়েছেন শ্রমিকরা।

রাজধানীর তেজগাঁওয়ের একটি পোশাক কারখানায় ঢোকার আগে কর্মীদের শরীরের তাপমাত্রা পরীক্ষা করা হচ্ছে । ছবি: মাহমুদ জামান অভি

সার্বিক পরিস্থিতি সম্পর্কে জানতে তৈরি পোশাক প্রস্তুতকারক ও রপ্তানিকারদের সংগঠন বিজিএমইএ এর সভাপতি রুবানা হক বলেন, লকডাউনের প্রথমদিন ভালোভাবেই কেটেছে। শ্রমিক ও কারখানায় এর প্রভাব বুঝতে আরেকটু সময় লাগবে।

সোমবার সকালে মিরপুর- ২ নম্বরে ব্রেনারসন অ্যাপারেল নামের কারখানায় গিয়ে দেখা যায়, ভবনের নিচ তলায় ১০ থেকে ১২ জন শ্রমিক খুব কাছাকাছি দূরত্বে থেকে কাপড় গোচ্ছাচ্ছেন। তাদের দু’একজনের মুখে মাস্ক থাকলেও অধিকাংশই ছিলেন মাস্কবিহীন।

বহুতল এই ভবনের অন্যান্য ফ্লোরগুলোর পরিস্থিতি কেমন ছিল তা ঘুরে দেখতে কর্তৃপক্ষের অনুমোদন মেলেনি।

যদিও কারখানার মানবসম্পদ বিভাগের মহাব্যবস্থাপক ওমর শরীফের দাবি মহামারী শুরুর পর থেকেই তারা স্বাস্থ্যবিধি মেনে কারখানা সচল রেখেছেন।

তিনি বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে জানান, তাদের কারখানায় ৬০০ থেকে ৭০০ শ্রমিক কাজ করেন। অধিকাংশই আশপাশে বসবাস করায় সোমবার তাদের কষ্ট করতে হয়নি।

“আমাদের আইসোলেশন সেন্টার আছে। স্বাস্থবিধি পালন করার পর্যাপ্ত সরঞ্জামও রয়েছে। ফলে সবকিছু স্বাভাবিকভাবে চালিয়ে নিতে সমস্যা হচ্ছে না,” বলেন ওমর শরীফ।

সাভারের আশুলিয়ার পরিস্থিতি ছিল অবশ্য কিছুটা ভিন্ন। সেখানে পোশাক শ্রমিকদের অনেককে পায়ে হেঁটে, রিকশা, ভ্যান কিংবা অটোরিকশায় গাদাগাদি করে কাজে যোগ দিতে আসতে হয়েছে বলে জানিয়েছেন সাভার প্রতিনিধি।

সেখানকার একাধিক পোশাক শ্রমিক বলেন, লকডাউনের মধ্যে কারখানা খোলা রাখায় তাদের যাওয়া আসার ভোগান্তি বেড়েছে। সংক্রমণের শঙ্কার কথাও বলেছেন কেউ কেউ।

সাভারে আল মুসলিম গ্রুপের সহকারী মহাব্যবস্থাপক (এজিএম, নিরাপত্তা) ফরহাদ আলী জানান, তাদের কারখানায় ১৬ হাজারের বেশি শ্রমিক রয়েছে। স্বাস্থ্যবিধি মেনে কাজ চলছে। সকাল ৭টা ও সাড়ে ৭টায় দুই ভাগে শ্রমিকরা এসেছেন। মূল ফটকের সামনে রয়েছে স্প্রে করার যন্ত্র, ভেতরে রয়েছে হাত ধোয়ার ব্যবস্থা। হ্যান্ড স্যানিটাইজার ব্যবহারও করা হয়।

রাজধানীর তেজগাঁওয়ে সোমবার একটি পোশাক কারখানার প্রবেশপথে সাবান দিয়ে হাত ধুয়ে নিচ্ছেন কর্মীরা। ছবি: মাহমুদ জামান অভি

তিনি জানান, এছাড়া প্রত্যেক শ্রমিকের তাপমাত্রা মেপে কারখানার ভেতরে প্রবেশ করানো হচ্ছে। সরকারি স্বাস্থ্যবিধির সব কিছুই মানা হচ্ছে বলে দাবি করেন তিনি।

এদিকে, লকডাউনের নির্দেশনা বাস্তবায়নে সোমবার সকাল থেকে সাভারের বিভিন্ন স্থানে নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট মো. আব্দুল্লাহ আল মাহফুজের নেতৃত্বে অভিযান চালানো হয়েছে।

অভিযানে শ্যামলী পরিবহনের একটি যাত্রীবাহী বাসকে দেড় হাজার ও সাভার বাসস্ট্যান্ডের সুরুচি খাবার হোটেলকে তিন হাজার, হেমায়েতপুরের লাল টাওয়ারে এনজেল প্রসাধনীর দোকান মালিককে চার হাজার টাকা জরিমানা করা হয়।

নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট জানান, লকডাউনের সরকারি নির্দেশনা কঠোরভাবে পরিচালনা করা হবে।

সাভার ও গাজীপুর এলাকায় শ্রমিকদের ওপর লকডাউনের প্রভাব সম্পর্কে শ্রমিক নেত্রী জলি তালুকদার বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “স্বাস্থ্যবিধি মানার সুযোগ না দিয়ে এ ধরনের লকডাউন শ্রমিকদের স্বাস্থ্যঝুঁকি ও ভোগান্তি আরও বাড়িয়ে তুলেছে। গাজীপুরে প্রথমদিনেই অনেক শ্রমিককে লম্বা দূরত্ব হেঁটে কারখানায় যেতে হয়েছে বলে শুনেছি।“

“কারখানা খোলা রেখে এ লকডাউন করোনার সংক্রমণ কমাবে বলে মনে হচ্ছে না। এটা ভোগান্তি ছাড়া কিছু নয়,”বলে মন্তব্য তার।