মহামারীর মধ্যেই রোববার বিজিএমইএ নির্বাচন

করোনাভাইরাস মহামারীর ব্যাপক বিস্তারের মধ্যেই নতুন নেতৃত্ব বেছে নিতে রোববার ভোট দেবেন তৈরি পোশাক প্রস্তুতকারক ও রপ্তানিকারকদের সংগঠন বিজিএমএইর দুই হাজারের বেশি সদস্য।

নিজস্ব প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 3 April 2021, 09:48 AM
Updated : 3 April 2021, 09:48 AM

বেশ কয়েক দিনের সরব প্রচার শেষে নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বীতাকারী দুই প্যানেলের প্রার্থীরা এখন সর্বশেষ প্রস্তুতিতে রয়েছেন।

সম্মিলত পরিষদ ও ফোরাম প্যানেল থেকে ৩৫ পরিচালক পদে জয়ী হতে দ্বিবার্ষিক এ নির্বাচনে প্রার্থী হয়েছেন ৭০ জন।

উভয় প্যানেলে এবার বেশ কয়েকজন তরুণ প্রার্থী রয়েছেন। তাদের বাবা-মা বর্তমানে এবং আগে বিভিন্ন মেয়াদে বিজিএমইএকে নেতৃত্ব দিয়েছেন।

ঢাকায় হোটেল র‍্যাডিসন ব্লু এবং চট্টগ্রামে বিজিএমইএ এর নিজস্ব আঞ্চলিক কার্যালয়ে ভোট নেওয়া হবে। এ নির্বাচনে বিজয়ী পরিচালকরা এরপর সভাপতি ও সহসভাপতি নির্বাচন করবেন।

করোনাভাইরাস সংক্রমণ বেড়ে যাওয়ায় ভোটের সময়েও কিছুটা পরিবর্তন আনা হয়েছে। নতুন সূচি অনুযায়ী তিন ঘণ্টা সময় বাড়িয়ে রোববার সকাল ৯টা থেকে ৭টা পর্যন্ত ভোট হবে। আগের সময় ছিল সকাল ১০টা থেকে বিকাল ৫টা পর্যন্ত।

তফসিল অনুযায়ী, ঢাকা অঞ্চলে ১ হাজার ৮৫৩ এবং চট্টগ্রাম অঞ্চলে ৪৬১ পোশাক কারখানা মালিক ভোট দেবেন।

দেশে গত কয়েকদিন ধরে রেকর্ড কোভিড-১৯ সংক্রমণের মধ্যে রোববার বিজিএমইএর এই নির্বাচন হতে যাচ্ছে। যদিও নির্বাচন কমিশন ১১ এপ্রিল অনুষ্ঠিতব্য বেশ কিছু নির্বাচন স্থগিত করেছে। অন্যদিকে সোমবার থেকে এক সপ্তাহের জন্য ‘লকডাউন’ আসার কথা শনিবার সকালে জানিয়েছেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের।

বিজিএমইএ এর নির্বাচন পরিচালনা বোর্ড সার্বিক পরিস্থিতি বিবেচনায় ঝুঁকি এড়াতে বেশ কিছু সতর্কতামূলক পদক্ষেপ নিয়েছে। তবে ভোটারদের কেন্দ্রে উপস্থিত করা এবং স্বাস্থ্যঝুঁকি কমিয়ে আনার নিয়ে সংশয়ে আছেন প্রার্থীরা।

নির্বাচনী বোর্ডের চেয়ারম্যান অধ্যাপক সৈয়দ ফরহাত আনোয়ার বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “আমরা স্বাস্থ্যবিধি মেনে ভোটগ্রহণ সম্পন্ন করতে বাধ্য। নির্বাচন আয়োজনও সরকারের পরিকল্পনা; আর স্বাস্থ্যবিধি পালন করাও সরকারের নির্দেশ। যে ১৮ দফা নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে তা সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়ে পালন করা হবে।”

“স্থানীয় সরকার নির্বাচনগুলো আমাদের স্বাধীন নির্বাচন কমিশন নিয়ন্ত্রণ করতে পারে। কিন্তু এ ধরনের ট্রেড বডির নির্বাচনগুলোর বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত দেয় বাণিজ্য মন্ত্রণালয়। এ নিয়ে আমাদের কিছু বলার নেই,” বলেন ফরহাত।

করোনাভাইরাস মহামারীর মধ্যে নির্বাচন আয়োজন সম্পর্কে বক্তব্য জানতে ‘সম্মিলিত পরিষদ’ এর প্যানেল প্রধান ফারুক হাসানকে ফোন করা হলেও তিনি ধরেনি।

প্রতিদ্বন্দ্বী প্যানেল ‘ফোরাম’ এর প্রার্থী ও বর্তমান সভাপতি রুবানা হকের কাছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, “মহামারীর মধ্যে অনেক কিছুই তো চলছে। ঝুঁকি নিয়েই মানুষ কাজগুলো চালিয়ে নিচ্ছে। এখনকার পরিস্থিতিতে নির্বাচন হলে আমাদের তাতে কোনো আপত্তি নেই।”

মহামারীর বর্তমান পরিস্থিতিতে অবশ্য বিজিএমইএর একাধিক সদস্য ভোট চালু রাখা নিয়ে উদ্বেগ জানিয়েছেন।

তবে ভোট কেন্দ্রে স্বাস্থ্যবিধি বজায় রাখতে বেশ কিছু পদক্ষেপ নেওয়ার কথা জানিয়েছেন নির্বাচন পরিচালনায় যুক্ত কর্মকর্তারা। নির্বাচন বোর্ডের সচিব অবসরপ্রাপ্ত মেজর রফিকুল ইসলাম বলেন, “মহামারী বিবেচনায় রেখে ভোট নেওয়ার সময় বাড়িয়ে সকাল ৯টা থেকে সন্ধ্যা ৭টা পর্যন্ত করা হয়েছে। যাতে গাদাগাদি না হয়, ভোটাররা

তাদের নির্ধারিত সময়ে এসে ভোট দিয়ে যেতে পারেন।”

তিনি জানান, ভোটারদের বিভিন্ন ভাগে ভাগ করে, তাদের ভোট দেওয়ার সময় নির্দিষ্ট করে দেওয়া হচ্ছে। মোবাইল ফোনে এসএমএস পাঠিয়ে নির্ধারিত সময় জানিয়ে দেওয়া হচ্ছে। এছাড়া মাস্ক, হ্যান্ড স্যানিটাইজারসহ অন্যান্য স্বাস্থ্য সুরাক্ষা সমগ্রীও থাকবে।

নির্বাচনী বোর্ডের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ফরহাত জানান, নির্বাচনে শৃঙ্খলা রক্ষায় আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সাহায্য চাওয়া হয়েছে। এছাড়া ফলাফল যাতে তাড়াতাড়ি প্রকাশ করা যায় সেই ব্যবস্থাও নেওয়া হচ্ছে।

এর আগে ২০১৩ সালে ফোরাম ও সম্মিলিত পরিষদ প্যানেল প্রতিদ্বন্দ্বী হিসেবে বিজিএমইএ নির্বাচনে অংশ নিয়েছিল। সেবার ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের বর্তমান মেয়র আতিকুল ইসলাম সম্মিলিত পরিষদ থেকে সভাপতি হয়েছিলেন।

দুই বছর পর সমঝোতার ভিত্তিতে নেতৃত্ব নির্বাচনে যায় উভয় প্যানেল। সম্মিলিত পরিষদের সিদ্দিকুর রহমানকে সভাপতি করে নতুন পর্ষদ গঠন করা হয়।

এরপর নানা কারণে কমিটির মেয়াদ দুই বছর থেকে তিন দফায় বাড়িয়ে চার বছর (৪৩ মাস) করা হয়েছিল। ২০১৯ সালে আবারও সমঝোতার নেতৃত্ব আনার চেষ্টা করা হলেও শেষ মুহূর্তে স্বাধীনতা পরিষদের উত্থানে ভোটগ্রহণের বাধ্যবাধকতা তৈরি হয়। ওই বছর ফোরাম ও সম্মিলিত পরিষদ জোটবদ্ধ হয়ে নির্বাচন করে ৩৫টি পদের সবগুলোতে বিজয়ী হয়।

চূড়ান্ত প্রার্থী যারা

ফোরাম এর প্রার্থীরা হলেন: হান্নান গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক এবিএম শামসুদ্দিন মিয়া; প্যানেল লিডার।

ঢাকা অঞ্চল: এমজি শার্টেক্সের রুবানা হক, হান্নান ফ্যাশনসের এ বি এম সামসুদ্দিন, এজে ফ্যাশনসের আনোয়ার হোসেন চৌধুরী, আমিতি ডিজাইনের শিহাবুদৌজা চৌধুরী, অনন্ত গার্মেন্টের এনামুল হক খান বাবু, দেশ গার্মেন্টের ভিদিয়া অমৃত খান, দিগন্ত সোয়েটারের কামাল উদ্দিন, ড্রেসম্যান গার্মেন্ট মাশিদ রুম্মান আবদুল্লাহ, দুলাল ব্রাদার্সের এম এ রহিম ফিরোজ, এভিটেক্স ড্রেস শার্ট শাহ রিয়াদ চৌধুরী, ফেব্রিকা নিট কমপোজিটের মিজানুর রহমান, ফ্যাশন ডটকমের খান

মনিরুল আলম, ফ্যান্ডস স্ট্যাইলওয়্যারের এ এম মাহমুদুর রহমান, ইমপ্রেস নিউটেক্স কমপোজিট টেক্সটাইলের নাফিস উদ দৌলা, কেইলক নিউএজ বাংলাদেশের আসিফ ইব্রাহিম, ম্যাগপাই নিটওয়্যারের মজুমদার আরিফুর রহমান, মানামি ফ্যাশন্সের তাহসিন উদ্দিন খান, এমজি নিট ফ্লেয়ারের নাভিদুল হক, নেক্সাস সোয়েটারের রশীদ আহমেদ হোসাইনি, ওডিশা ফ্যাশন্সের ইকবাল হামিদ কোরাইশী আদনান, রাইজিট অ্যাপারেলসের মাহমুদ হাসান খান বাবু, সফটটেক্স সোয়েটারের রেজওয়ান সেলিম, সুরমা গার্মেন্টের ফয়সাল সামাদ, ট্রাউজার লাইনের রানা লায়লা হাফিজ, ওয়েগা ফ্যাশন সুয়েটারের মেজবাহ উদ্দিন আলী ও জিসাস ফ্যাশন্সের নজরুল ইসলাম।

চট্টগ্রাম অঞ্চল: অ্যারিয়ন ড্রেসের মোহাম্মদ আতিক, চিটাগং এশিয়ান অ্যাপারেলসের মোহাম্মদ আবদুস সালাম, ক্লিপটন অ্যাপারেলসের এম মহিউদ্দিন চৌধুরী, ম্যাগি অ্যান্ড লিজ অ্যাপারেলসের এনামুল আজিজ চৌধুরী, মেলো ফ্যাশনসের শরীফ উল্লাহ, রিজি অ্যাপারেলসের মির্জা মো. আকবর আলী চৌধুরী, রেন্সকো সোয়েটারের মোহাম্মদ দিদারুল আলম, দ্য নিড অ্যাপারেলসের রিয়াজ ওয়েজ ও উল ওয়ার্ল্ডের খন্দকার বেলায়েত হোসেন।

সম্মিলিত পরিষদ এর প্রার্থীরা হলেন: জায়ান্ট টেক্সটাইলের ফারুক হাসান প্যানেল লিডার।

ঢাকা অঞ্চল: অ্যাডামস অ্যাপারেলসের শহিদুল হক মুকুল, ব্রাদার্স ফ্যাশন্সের আবদুল্লাহ হিল রাকিব, ক্লাসিক ফ্যাশনসের শহীদউল্লাহ আজিম, ক্রনি ফ্যাশনসের নীরা হোসনে আরা, ডেনিম এক্সপার্টের মহিউদ্দিন রুবেল, ডিজাইন অ্যান্ড সোর্সের জাহাঙ্গীর আলম, ডিজাইন টেক্সট

নিটওয়্য্যারের খন্দকার রফিকুল ইসলাম, এনভয় ডিজাইনের শিরিন সালাম ঐশী, এনভয় ফ্যাশন্সের

তানভীর আহমেদ, হামিদ সোয়েটারের ইন্তেখাবুল হামিদ অপু, জে. এফ. কে ফ্যাশন্সের কফিল উদ্দিন আহমেদ, লায়লা স্টাইলের ইমরানুর রহমান, মেইকস গার্মেন্টের আশিকুর রহমান তুহিন, মিসামি গার্মেন্টের মিরান আলী, নিপা ফ্যাশন্সের খসরু চৌধুরী, পশমী সোয়েটারের মশিউল আজম সজল, সাদমা ফ্যাশন্স ওয়্যারের নাছির উদ্দিন, সেহা ডিজাইনের এস এম মান্নান কচি, স্পারো

অ্যাপারেলসের শোভন ইসলাম, তরকা ফ্যাশন্সের মোহাম্মদ কামাল উদ্দিন, টিআরজেড গার্মেন্টের

হারুন অর রশীদ, তুসুকা ফ্যাশন্সের আরশাদ জামাল দিপু, উর্মি গার্মেন্টের আসিফ আশরাফ, ভিনটেজ

ডেনিমের সাজ্জাদুর রহমান মৃধা শিপন ও ইয়াং ফরেভারের রাজীব চৌধুরী।

চট্টগ্রাম অঞ্চল: এএসআর অ্যাপারেলের এ. এম শফিউল করিম খোকন, অ্যামেকো ফেব্রিক্সের এম আহসানুল হক, ফোর এইচ অ্যাপারেলের মো. হাসান জেকি, এইচকেসি অ্যাপারেলের রকিবুল আলম চৌধুরী, লেগেসি ফ্যাশন্সের তানভীর হাবিব, এনএলজেড ফ্যাশনসের মোহাম্মদ মেরাজ-ই-মোস্তফা, আরএসবি ইন্ড্রাস্ট্রিয়ালের অঞ্জন শেখর দাশ, টপ স্টার ফ্যাশনসের আবসার হোসেন ও ওয়েল ডিজাইনার্সের সৈয়দ নজরুল ইসলাম।