জমে উঠছে বিজিএমইএ নির্বাচন

পুরোনো দুই শিবিরে ভাগ হয়ে নেতৃত্ব নির্বাচনের প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নেমেছে পোশাক রপ্তানিকারকদের সবচেয়ে বড় সংগঠন বিজিএমইএ।

ফয়সাল আতিক নিজস্ব প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 6 March 2021, 02:40 PM
Updated : 6 March 2021, 02:40 PM

গত ৪ মার্চ প্রার্থী তালিকা চূড়ান্ত হওয়ার পর ঘরোয়াভাবে প্রচার শুরু করেছেন সম্মিলিত পরিষদ ও ফোরাম নামে দুটি প্যানেলের প্রার্থীরা। পাশাপাশি ঘটা করে প্যানেল পরিচিতি অনুষ্ঠান করার প্রস্তুতিও চলছে।

এবারের নির্বাচনে ঢাকা ও চট্টগ্রামে সমিতির ৩৫টি পরিচালক পদের জন্য দুই প্যানেলের ৩৫ জন করে মোট ৭০ জন প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন।

আর স্বাধীনতা পরিষদের নেতা জাহাঙ্গীর আলম এর আগে পূর্ণ প্যানেল নিয়ে নির্বাচনের ঘোষণা দিলেও এখন সম্মিলিত পরিষদের সঙ্গে একীভূত হয়ে নির্বাচন করছেন।

এদিকে ভোটার তালিকা ও ভোটগ্রহণের স্থান নিয়ে দুই প্যানেলের মধ্যে মতবিরোধ দেখা দিয়েছে। দুই পক্ষের পাল্টাপাল্টি বক্তব্যে সরগরম হয়ে উঠছে নির্বাচনের মাঠ।

ঘোষিত তফসিল অনুযায়ী, আগামী ৪ এপ্রিল ঢাকায় হোটেল র‌্যাডিসন ব্লুতে এবং চট্টগ্রামে বিজিএমইএর আঞ্চলিক কার্যালয়ে সকাল ১০টা থেকে বিকেল ৫টা পর্যন্ত এ নির্বাচনের ভোট হবে।

চূড়ান্ত ভোটার তালিকায় ঢাকা অঞ্চলে ১ হাজার ৮৫৩ জন এবং চট্টগ্রাম অঞ্চলে ৪৬১ জন ভোটার রয়েছেন।

এবারের নির্বাচনে বর্তমান সভাপতি রুবানা হকের প্যানেল ‘ফোরামের’ নেতৃত্ব দিচ্ছেন হান্নান গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক এবিএম শামসুদ্দিন মিয়া। রুবানা নিজেও তার প্যানেল থেকে নির্বাচনে থাকছেন। 

শামসুদ্দিন বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “আমাদের প্রতিদ্বন্দ্বী প্যানেলের তৎপরতা নির্বাচনের পরিবেশ নষ্ট করছে। স্বচ্ছতার জন্য বায়োমেট্রিক পদ্ধতিতে যে ভোটার তালিকা তৈরির কথা ছিল, সেটাতে তারা বাধা দিয়েছে। হোটেল র‌্যাডিসনে ভোটগ্রহণের তফসিল হলেও তারা এখন চাইছে উত্তরায় জনমানবশূন্য নির্মাণাধীন বিজিএমইএ ভবনে ভোট করতে। এসব তৎপরতা থেকে বোঝা যায়, নির্বাচন নিয়ে তাদের খারাপ মোটিভ আছে।”

প্রতিদ্বন্দ্বী প্যানেলের নেতাদের প্রসঙ্গে তিনি বলেন, “তারা বিজিএমইএর পদ পদবি ব্যবহার করে শিল্পের স্বার্থে কাজ না করে মন্ত্রী-এমপি হওয়ার জন্য ব্যস্ত ছিলেন। তাই তাদের সঙ্গে কিছু মন্ত্রী-এমপি দেখা গেছে। আমরা সম্পূর্ণ শিল্পের স্বার্থ এবং মালিকদের জন্য প্রয়োজনীয় দর কষাকষিতে থাকতে চাই।

“আমাদের এখনকার প্রেসিডেন্ট রুবানা হককে দিনরাত ২৪ ঘণ্টা ফোন করে যে কোনো সমস্যার কথা বলতে পেরেছেন ভোটাররা। কিন্তু অন্য প্যানেল থেকে নেতা নির্বাচিত হলে সেই সুযোগটি পাওয়া যাবে না বলেই ভোটারদের ধারণা।”

‘সমঝোতার মাধ্যমে নেতৃত্ব নির্বাচনের সংস্কৃতি’ থেকে বেরিয়ে আসার দাবি নিয়ে ২০১৯ সালে ‘স্বাধীনতা পরিষদ’ নামের নতুন প্যানেল গঠন করা ডিজাইন অ্যান্ড সোর্সের ব্যবস্থাপনা পরিচালক জাহাঙ্গীর আলম এবার পূর্ণ প্যানেল নিয়ে ত্রিমুখী প্রতিদ্বন্দ্বিতার আভাস দিয়েছিলেন। কিন্তু শেষ মুহূর্তে তিনি নিজের প্যানেল নিয়ে সম্মিলিত পরিষদে ভেড়েন।

এ বিষয়ে জাহাঙ্গীর বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “আমার মূল দাবিটি ছিল নির্বাচন যেন চলমান থাকে। এবার নির্বাচন হচ্ছে বিধায় সেই দাবি পূরণ হচ্ছে। সম্মিলিত পরিষদের সিনিয়র নেতাদের অনুরোধে ওই প্যানেলের সঙ্গে জোট করে এবার নির্বাচন করছি।”

এবারের নির্বাচনে স্বাধীনতা পরিষদ থেকে কেবল জাহাঙ্গীর আলমকেই জোটের প্রার্থী হিসাবে রেখেছে সম্মিলিত পরিষদ। তবে কিছু বিষয়ে তিনি ফোরাম নেতাদের বক্তব্যের সঙ্গেও সহমত প্রকাশ করেছেন।

“বায়োমেট্রিক পদ্ধতিতে ভোটার তালিকা করলেই বেশি ভালো হত বলে আমি মনে করি। আর র‌্যাডিসনে ভোটগ্রহণ করার সিদ্ধান্তেও আমার আপত্তি নেই। তবে একটা সমস্যা এখানে আছে, সেটা হচ্ছে এখানে গাড়ি রাখার জায়গা কম। উত্তরায় বিজিএমইএর অফিসে ভোট হলে সেখানে পর্যাপ্ত খোলা জায়গা পাওয়া যেত,” বলেন জাহাঙ্গীর।

এর আগে গত মাসের শেষে গুলশানে সম্মিলিত পরিষদের প্যানেল লিডার ফারুক হাসানের নির্বাচনী কার্যালয় উদ্বোধনের সময় বায়োমেট্রিক ভোটার তালিকা নিয়ে নিজেদের বিরোধিতার কথা জানিয়েছিলেন এ প্যানেলের সমন্বয়ক বিজিএমইএর সাবেক সভাপতি আবদুস সালাম মুর্শেদীসহ অন্য নেতারা।

সম্মিলিত পরিষদের প্রচার দলের সদস্য ফজলে শামীম এহসান বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, বায়োমেট্রিক ভোটার তালিকা বাধ্যতামূলক করলে ভবিষ্যতে নির্বাচন নিয়ে জটিলতার সৃষ্টি হবে।

“দেশ-বিদেশে অবস্থান করা একজন ভোটারও যদি এই প্রক্রিয়া থেকে বাদ পড়ে আদালতের দ্বারস্ত হয়, তাহলে নির্বাচনটাই থেমে যাবে। তাই আমরা বলেছি- গঠনতন্ত্র সংশোধন ব্যাতীতে আপাতত এই নিয়ম চালু করা যাবে না।”

উত্তরা কার্যালয়ে ভোটগ্রহণের পক্ষে যুক্তি দিয়ে শামীম বলেন, বিজিএমইএর হাজার হাজার সদস্যের গাড়ি রাখার মত জায়গা র‌্যাডিসনে নেই।

“উত্তরায় তারা যদি নিরাপত্তা নিয়ে ভয় পেয়ে থাকেন, তাহলে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর সহযোগিতা নিলেই হয়ে যায়। নিজেদের মধ্যে এতো সন্দেহ অবিশ্বাস কাম্য নয়।”  

এর আগে ২০১৯ সালে ফোরাম ও সম্মিলিত পরিষদ জোটবদ্ধ হয়ে নির্বাচন করে ৩৫টি পদের সবগুলোতে বিজয়ী হয়েছিল।

এর আগে ২০১৩ সালে এ দুই প্যানেল প্রতিদ্বন্দ্বী হিসেবে বিজিএমইএ নির্বাচনে অংশ নিয়েছিল। সেবার ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের বর্তমান মেয়র আতিকুল ইসলাম সম্মিলিত পরিষদ থেকে বিজিএমইএ সভাপতি হয়েছিলেন।

দুই বছর পর সমঝোতার ভিত্তিতে নেতৃত্ব নির্বাচনে যায় দুই প্যানেল। সম্মিলিত পরিষদের সিদ্দিকুর রহমানকে বিজিএমইএর সভাপতি করে নতুন পর্ষদ গঠন করা হয়।

এরপর নানা কারণে কমিটির মেয়াদ দুই বছর থেকে তিন দফায় বাড়িয়ে চার বছর (৪৩ মাস) করা হয়েছিল। ২০১৯ সালে আবারও সমঝোতার নেতৃত্ব আনার চেষ্টা করা হলেও শেষ মুহূর্তে স্বাধীনতা পরিষদের উত্থানে ভোটগ্রহণের বাধ্যবাধকতা তৈরি হয়।

চূড়ান্ত প্রার্থী যারা

ফোরাম: এ প্যানেলে  হান্নান গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক এবিএম শামসুদ্দিন মিয়া প্যানেল লিডার হিসাবে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন।

ঢাকা অঞ্চলে এমজি শার্টেক্সের রুবানা হক, হান্নান ফ্যাশনসের এ বি এম সামসুদ্দিন, এজে ফ্যাশনসের আনোয়ার হোসেন চৌধুরী, আমিতি ডিজাইনের শিহাবুদৌজা চৌধুরী, অনন্ত গার্মেন্টের এনামুল হক খান বাবু, দেশ গার্মেন্টের ভিদিয়া অমৃত খান, দিগন্ত সোয়েটারের কামাল উদ্দিন, ড্রেসম্যান গার্মেন্ট মাশিদ রুম্মান আবদুল্লাহ, দুলাল ব্রাদার্সের এম এ রহিম ফিরোজ, এভিটেক্স ড্রেস শার্ট শাহ রিয়াদ চৌধুরী, ফেব্রিকা নিট কমপোজিটের মিজানুর রহমান, ফ্যাশন ডটকমের খান মনিরুল আলম, ফ্যান্ডস স্ট্যাইলওয়্যারের এ এম মাহমুদুর রহমান, ইমপ্রেস নিউটেক্স কমপোজিট টেক্সটাইলের নাফিস উদ দৌলা, কেইলক নিউএজ বাংলাদেশের আসিফ ইব্রাহিম, ম্যাগপাই নিটওয়্যারের মজুমদার আরিফুর রহমান, মানামি ফ্যাশন্সের তাহসিন উদ্দিন খান, এমজি নিট ফ্লেয়ারের নাভিদুল হক, নেক্সাস সোয়েটারের রশীদ আহমেদ হোসাইনি, ওডিশা ফ্যাশন্সের ইকবাল হামিদ কোরাইশী আদনান, রাইজিট অ্যাপারেলসের মাহমুদ হাসান খান বাবু, সফটটেক্স সোয়েটারের রেজওয়ান সেলিম, সুরমা গার্মেন্টের ফয়সাল সামাদ, ট্রাউজার লাইনের রানা লায়লা হাফিজ, ওয়েগা ফ্যাশন সুয়েটারের মেজবাহ উদ্দিন আলী ও জিসাস ফ্যাশন্সের নজরুল ইসলাম।

চট্টগ্রাম অঞ্চলে অ্যারিয়ন ড্রেসের মোহাম্মদ আতিক, চিটগং এশিয়ান অ্যাপারেলসের মোহাম্মদ আবদুস সালাম, ক্লিপটন অ্যাপারেলসের এম মহিউদ্দিন চৌধুরী, ম্যাগি অ্যান্ড লিজ অ্যাপারেলসের এনামুল আজিজ চৌধুরী, মেলো ফ্যাশনসের শরীফ উল্লাহ, রিজি অ্যাপারেলসের মির্জা মো. আকবর আলী চৌধুরী, রেন্সকো সোয়েটারের মোহাম্মদ দিদারুল আলম, দ্য নিড অ্যাপারেলসের রিয়াজ ওয়েজ ও উল ওয়ার্ল্ডের  খন্দকার বেলায়েত হোসেন ফোরাম থেকে নির্বাচন করছেন।

সম্মিলিত পরিষদ: জায়ান্ট টেক্সটাইলের ফারুক হাসান প্যানেল লিডার হিসাবে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন।

ঢাকা অঞ্চলে অ্যাডামস অ্যাপারেলসের শহিদুল হক মুকুল, ব্রাদার্স ফ্যাশন্সের আবদুল্লাহ হিল রাকিব, ক্লাসিক ফ্যাশনসের শহীদউল্লাহ আজিম, ক্রনি ফ্যাশনসের নীরা হোসনে আরা, ডেনিম এক্সপার্টের মহিউদ্দিন রুবেল, ডিজাইন অ্যান্ড সোর্সের জাহাঙ্গীর আলম, ডিজাইন টেক্সট নিটওয়্য্যারের খন্দকার রফিকুল ইসলাম, এনভয় ডিজাইনের শিরিন সালাম ঐশী, এনভয় ফ্যাশন্সের তানভীর আহমেদ, হামিদ সোয়েটারের ইন্তেখাবুল হামিদ অপু, জে. এফ. কে ফ্যাশন্সের কফিল উদ্দিন আহমেদ, লায়লা স্টাইলের ইমরানুর রহমান, মেইকস গার্মেন্টের আশিকুর রহমান তুহিন, মিসামি গার্মেন্টের মিরান আলী, নিপা ফ্যাশন্সের খসরু চৌধুরী, পশমী সোয়েটারের মশিউল আজম সজল, সাদমা ফ্যাশন্স ওয়্যারের নাছির উদ্দিন, সেহা ডিজাইনের এস এম মান্নান কচি, স্পারো অ্যাপারেলসের শোভন ইসলাম, তরকা ফ্যাশন্সের মোহাম্মদ কামাল উদ্দিন, টিআরজেড গার্মেন্টের হারুন অর রশীদ, তুসুকা ফ্যাশন্সের আরশাদ জামাল দিপু, উর্মি গার্মেন্টের আসিফ আশরাফ, ভিনটেজ ডেনিমের সাজ্জাদুর রহমান মৃধা শিপন ও ইয়াং ফরেভারের  রাজীব চৌধুরী।

চট্টগ্রাম অঞ্চলে এএসআর অ্যাপারেলের এ. এম শফিউল করিম খোকন, অ্যামেকো ফেব্রিক্সের এম আহসানুল হক, ফোর এইচ অ্যাপারেলের মো. হাসান জেকি, এইচকেসি অ্যাপারেলের রকিবুল আলম চৌধুরী, লেগেসি ফ্যাশন্সের তানভীর হাবিব, এনএলজেড ফ্যাশনসের মোহাম্মদ মেরাজ-ই-মোস্তফা, আরএসবি ইন্ড্রাস্ট্রিয়ালের অঞ্জন শেখর দাশ, টপ স্টার ফ্যাশনসের আবসার হোসেন ও ওয়েল ডিজাইনার্সের সৈয়দ নজরুল ইসলাম এ প্যানেল থেকে প্রার্থী হয়েছেন।