ডেল্টা লাইফ: প্রশাসক বসানের পর ঘুষের অভিযোগ প্রত্যাহারের উদ্যোগ

দুর্নীতি দমন কমিশনে (দুদক) বীমা খাতের নিয়ন্ত্রণ সংস্থার চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধে ৫০ লাখ টাকার ঘুষ দাবির যে অভিযোগ ডেল্টা লাইফ ইন্সুরেন্স করেছিল, তা প্রত্যাহার করতে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাকে চিঠি দিয়েছেন ওই কোম্পানিতে সদ্য নিয়োগ পাওয়া প্রশাসক।

নিজস্ব প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 19 Feb 2021, 05:51 PM
Updated : 19 Feb 2021, 05:51 PM

ডেল্টা লাইফের স্থগিত পর্ষদের পরিচালক জীহাদ রহমান বলেছেন, বীমা উন্নয়ন ও নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষের (আইডিআরএ) নিয়োগ দেওয়া প্রশাসক সুলতান-উল-আবেদীন মোল্লা গত বুধবার কোম্পানির জয়েন্ট এক্সিকিউটিভ ভাইস চেয়ারম্যান পল্লব ভৌমিককে চিঠি দিয়ে ওই অভিযোগ প্রত্যাহার করে নিতে বলেন।

চিঠিতে বলা হয়, “ডেল্টা লাইফ ইন্সুরেন্স কোম্পানি লিমিটেডের পরিচালনা পর্ষদের অডিট কমিটির ৭৮তম সভায় বিবিধি এজেন্ডার সিদ্ধান্ত মোতাবেক আপনাকে ইন্সুরেন্স ডেভলপমেন্ট অ্যান্ড রেগুলেটরি অথরিটির চেয়ারম্যান ড. মোশাররফ হোসেন, এফসিএ মহোদয়ের বিরুদ্ধে ৫০ লক্ষ টাকার উৎকোচ দাবির অসত্য ও বানোয়াট অভিযোগ দিয়ে হয়ারনির করার জন্য আপনাকে দুর্নীতি দমন কমিশনের চেয়ারম্যান বরাবরে অভিযোগ দাখিলের দায়িত্ব প্রদান করা হয়েছিল।

“উহাতে ভীত ও বিভ্রান্ত হয়ে আপনি উহা দাখিল করিয়াছিলেন। আপনার দাখিলকৃত অসত্য অভিযোগ প্রত্যাহার করিবার জন্য এ সংক্রান্ত বিশেষ কমিটির সুপারিশে ডেল্টা লাইফ ইন্সুরেন্স কোম্পানি লিমিটেডের পক্ষ থেকে সিদ্ধান্ত প্রদান করা হইল।”

জীহাদ রহমান বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “পল্লব ভৌমিক কোম্পানির একজন কর্মকর্তা হিসেবে আইডিআরএ এর চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধে ৫০ লক্ষ টাকা ঘুষ চাওয়ার অভিযোগটি দুদকে দাখিল করেছেন। এরই মধ্যে কোম্পানিতে প্রশাসক নিয়োগ হল। প্রশাসক সেখানে সমান ভূমিকা পালন করার কথা ছিল। কিন্তু তিনি আইডিআিএ’র চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধে ঘুষ দুর্নীতির অভিযোগ প্রত্যাহারে ব্যস্ত হয়ে পড়লেন। এ জন্য তিনি পল্লব ভৌমিককে একটি চিঠি পাঠিয়ে দুদকের অভিযোগ প্রত্যাহার করতে বলেছেন।”

পল্লব ভৌমিককে সেজন্য ‘চাপও দেওয়া হয়েছে’ অভিযোগ করে জীহাদ রহমান বলেন, “তিনিও (পল্লব) চাকরির কথা চিন্তা করছেন। আমাদের কথা হল- অডিও রেকর্ডসহ আইডিআরএ’র চেয়ারম্যানের ঘুষ চাওয়ার বিষয়টি দুদকে অভিযোগ আকারে জমা দেওয়া হয়েছে। কোনো অভিযোগ জমা হলে দুদক স্বাধীন প্রতিষ্ঠান হিসেবে তদন্ত করে দেখবে। প্রমাণ হলে ব্যবস্থা নেবে দুদক, আমরা এমন প্রত্যাশা করি।”

অভিযোগ প্রত্যাহারের জন্য ‘চাপ দেওয়ার’ যে কথা জীহাদ রহমান বলেছেন, সে বিষয়ে কথা বলতে পল্লব ভৌমিককে একাধিকার ফোন করা হলেও তিনি ধরেননি। পরে এসএমএম পাঠিয়েও তার সাড়া পাওয়া যায়নি।

গত ৭ ফেব্রুয়ারি সংবাদ সম্মেলন করে আইডিআরএ চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধে ঘুষ চাওয়ার ওই অভিযোগ করেছিল ডেল্টা লাইফের পরিচালনা পর্ষদ।

তার আগেই গত ৯ ডিসেম্বর আইডিআরএ’র চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধে দুর্নীতি দমন কমিশনে লিখিত অভিযোগ অভিযোগটি করেন পল্লব ভৌমিক।

সংবাদ সম্মেলন করে বিষয়টি তারা সামনে আনলে ১১ ফেব্রুয়ারি কোম্পানির পর্ষদ ভেঙে দিয়ে সেখানে সুলতান-উল-আবেদীন মোল্লাকে প্রশাসক হিসেবে নিয়োগ দেয় আইডিআরএ। সুলতান আইডিআরএ’র সাবেক সদস্য।

ওই অভিযোগ প্রত্যাহার করতে চিঠি দেওয়ার কারণ জানতে চাইলে সুলতান-উল-আবেদীন মোল্লা বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “এ বিষয়ে (চিঠি) গতকাল বিভিন্ন পত্র-পত্রিকায় আমার বক্তব্য এসেছে, সেখান থেকে দেখে নিতে পারেন।”

আইডিআরএ’র চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধে ঘুষ চাওয়ার অভিযোগ প্রত্যাহারের নির্দেশের কারণ জানতে চাইলে তিনি বলেন, “আপনার এই কথাটা আমি বুঝলাম না। আমাকে সরকার নিয়োগ দিয়েছে। আইন অনুযায়ী আমি কাজ করে যাব।”

দুদক ওই অভিযোগের বিষয়ে অনুসন্ধান করতে চাইলে তাতে ডেল্টা লাইফের পক্ষ থেকে কোনো আপত্তি থাকবে কি না- এ প্রশ্নে প্রশাসক বলেন, “দুদক তার আইন মত কাজ করবে, এতে আমাদের কোনো বাধা থাকবে না। আমরা আইনের প্রতি শ্রদ্ধাশীল।”

দুদকে দুর্নীতি ও অনিয়মের কোনো অভিযোগ দাখিল করে তা প্রত্যাহার করা যায় কিনা জানতে চাইলে কমিশনের পরিচালক (জনসংযোগ) প্রনব কুমার ভট্টাচার্য্য বলেন, এই সুযোগ কমিশনের আইনে নেই।

“কারো বিরুদ্ধে অভিযোগ এলে তা যাচাই-বাছাই করে অনুসন্ধান যোগ্য হলে যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়া হয়। দুর্নীতি ও অনিয়মের ঘটনা মীমাংসাযোগ্য নয়। কমিশনে কারো ইচ্ছা-অনিচ্ছায় অনুসন্ধান বা তদন্ত হয় না। দুদক একটি স্বাধীন প্রতিষ্ঠান।”

ডেল্টা লাইফের প্রধান কার্যালয়ে গত ৭ ফেব্রুয়ারির সংবাদ সম্মেলনে কোম্পানির নির্বাহী পরিচালক চৌধুরী কামরুল আহসান বলেছিলেন, “বীমা উন্নয়ন ও নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষের বর্তমান চেয়ারম্যান এম মোশারফ হোসেন উদ্দেশ্যমূলকভাবে ডেল্টা লাইফের ২০১৯ সালের একচ্যুয়ারিয়াল ভ্যালুয়েশন এর বেসিস অনুমোদ না দিয়ে, মুখ্য নির্বাহী কর্মকর্তার নিয়োগ নবায়নে অনুমোদন না দিয়ে এবং কোম্পানিকে নানা অযুহাতে অন্যায়ভাবে জরিমানা আরোপের হুমকি দিয়ে চলেছেন। এমনকি তিনি কোম্পানির পরিচালনা পর্ষদ সাসপেন্ড করে প্রশাসক বসানোর হুমককি দিচ্ছেন।”

এ বিষয়গুলো নিয়ে কথা বলতে গেলে মোশারফ হোসেন ডেল্টা লাইফের একজন কর্মকর্তার কাছে প্রথমে ২ কোটি, পরে ১ কোটি এবং শেষে ৫০ লাখ টাকা ‘উৎকোচ’ দাবি করেন বলে অভিযোগ করা হয় ওই সংবাদ সম্মেলনে।

ওই আলোচনার একটি কথিত অডিও রেকর্ডও সেদিন সংবাদ সম্মেলনে বাজিয়ে শোনানো হয়।

ওই অডিও প্রকাশ পাওয়ার পর জানুয়ারিতে মানহানির অভিযোগ এনে ডেল্টা লাইফের তৎকালীন মূখ্য নির্বাহী কর্মকর্তা আদিবা রহমানসহ প্রতিষ্ঠানটির ছয়জনের বিরুদ্ধে আদালতে একটি মানহানির মামলা করেন আইডিআএ চেয়ারম্যান মোশাররফ। পল্লব ভৌমিককেও সেখানে বিবাদী করা হয়।