কারখানার বর্জ্য কাপড় পুনঃব্যবহারের উদ্যোগ বাংলাদেশে

পোশাক কারখানায় তৈরি হওয়া কাপড়ের বর্জ্য ও পুরোনো কাপড় প্রক্রিয়াজাত করে নতুন পণ্যের কাঁচামাল হিসাবে কাজে লাগানোর একটি আন্তর্জাতিক উদ্যোগের অংশ হয়েছে বাংলাদেশের পোশাক খাত।

ফয়সাল আতিক নিজস্ব প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 16 Feb 2021, 06:04 PM
Updated : 16 Feb 2021, 06:04 PM

ব্যবহৃত পণ্যকে নতুন পোশাকপণ্য উৎপাদনের কাজে লাগাতে বাংলাদেশের পোশাক কারখানাগুলোর এই উদ্যোগের সহযোগী হিসাবে এগিয়ে এসেছে এইচঅ্যান্ডএম, এমঅ্যান্ডএস ও সিঅ্যান্ডএসের মতো বিশ্বের বড় পোশাক ব্র্যান্ডগুলো।

এই উদ্যোগের মধ্য দিয়ে ২০৩০ সালের আগে বৈশ্বিক উষ্ণতায় ম্যানুফ্যাকচারিং শিল্প, বিশেষ করে পোশাক তৈরি শিল্পখাতের দায় কমিয়ে আনার চেষ্টা করা হচ্ছে বলে উদ্যোক্তারা জানিয়েছেন।

সার্কুলার ফ্যাশন পার্টনারশিপ নামের একটি নতুন জোট সম্প্রতি ঘোষণা করে, এই উদ্যোগের সঙ্গে তারা ৩০টির বেশি আন্তর্জাতিক ব্র্যান্ড, বাংলাদেশের বেশ কিছু পুনঃপ্রক্রিয়াকরণ কারখানা এবং পোশাক উৎপাদনকারীদের যুক্ত করছে।

এই উদ্যোগের মূল উদ্দেশ্য হচ্ছে, পোশাক কারখানায় উৎপাদিত কাপড়ের বর্জ্যগুলো যে কোনো নতুন পণ্য তৈরিতে কাজে লাগানো।

এর অন্যতম উদ্যোক্তা গ্লোবাল ফ্যাশন এজেন্ডা (জিএফএ) রয়টার্সকে জানায়, বাংলাদেশের এই উদ্যোগ সফল হলে ইন্দোনেশিয়া, ভিয়েতনামসহ পোশাক রপ্তানিকারী অন্যান্য দেশেও এই উদ্যোগ বাস্তবায়ন করা হবে। বিশেষ করে পোশাকখাত থেকে কীভাবে দূষণ কমানো যায়, সেই চেষ্টা করা হবে।

২০১৮ সালে এই খাত থেকে গ্রিনহাউজ গ্যাস নিঃসরণের পরিমাণ ছিল ২ বিলিয়ন টন। গ্লোবাল ক্লাইমেট গোলস এর পরিকল্পনা ২০৩০ সালের মধ্যে এই নিঃসরণ অর্ধেকে নামিয়ে আনা।

জিএফএ‘র মুখপাত্র এলিস রোবার্ট টেইলর বলেন, গ্রিন হাউজ গ্যাসের মতো অন্যান্য পরিবেশ দূষণের বিষয়গুলো কমিয়ে আনতে হবে সম্মিলিত উদ্যোগের মাধ্যমে।

“এই উদ্যোগ পোশাক খাতে সৃষ্ট বর্জ্যের পরিমাণ কমাবে এবং নতুন পণ্য তৈরিতে পুরোনো কাপড়ের পুনঃব্যবহার বাড়াবে। এর ফলে একদিকে পোশাক পণ্য উৎপাদন খাতে কার্বন নিঃসরণ যেমন কমাবে, তেমনি জীবাশ্ম জ্বালানি জাতীয় কাঁচামালের চাহিদাও কমবে।”

২০১৫ সালের প্যারিস জলবায়ু সম্মেলনে ২০৫০ সালের মধ্যে গ্রিনহাউজ গ্যাসের উৎপাদন শূন্যের কোটায় নামিয়ে আনতে এবং বৈশ্বিক উষ্ণতা কমাতে একমত হয়েছে বিশ্বের প্রায় ২০০টি দেশ।

গত বছর জিএফএ এবং ম্যাকিনজি অ্যান্ড কোম্পানির একটি গবেষণা প্রতিবেদনের তথ্য অনুযায়ী, ফ্যাশন খাত থেকে বৈশ্বিক উষ্ণতার ৪ শতাংশ আসছে। এটা ফ্লান্স, জার্মানি ও ব্রিটেনের বার্ষিক নিঃসরণের সমান।

জাতিসংঘের পরিবেশ প্রকল্পের (এনভাইরনমেন্টাল প্রোগ্রাম) ২০১৯ সালের তথ্য অনুযায়ী, পোশাক খাত হচ্ছে বিশ্বে পানির দ্বিতীয় বৃহত্তম ভোক্তা। এই খাত থেকে প্রতিবছর বৈশ্বিক কার্বন নিঃসরণের ১০ শতাংশ আসে এবং তা সব আন্তর্জাতিক বিমান চলাচল ও সামুদ্রিক জাহাজের নিঃসরণ থেকেও বেশি।

জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবে ক্ষতিগ্রস্ত বাংলাদেশ বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম পোশাক রপ্তানিকারক দেশ। মোট রপ্তানি আয়ের ৮৫ শতাংশ আসে পোশাক খাত থেকে।

জিএফএর ভাষ্য হচ্ছে, কিন্তু এই দেশে পোশাক খাত থেকে তৈরি হওয়া বর্জ্যের অধিকাংশই কমমূল্যে রপ্তানি করা হয় অথবা ফেলে দেওয়া হয়। জিএফএ এই ধারার পরিবর্তন করতে চায়। তারা এসব বর্জ্যকে আরও মূল্যবান কাজে লাগাতে চায়।

দেশের একটি পোশাক কারখানা। ফাইল ছবি

এই প্রক্রিয়ার সঙ্গে যুক্ত বিজিএমইএর পরিচালক মিরান আলী বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, প্রতিবছর বাংলাদেশ থেকে এক লাখ টন পুরোনো কাপড় ও কারখানার কাটছাঁট করা কাপড় ভারতে রপ্তানি হয়।

তিনি বলেন, “পোশাক কারখানার বর্জ্য হিসাবে আপাতত এই কাপড়কেই আমরা পুনঃব্যবহার প্রকল্পে অন্তর্ভুক্ত করছি। পুরোনো কাপড় থেকে সুতা তৈরি করে তা নতুন কাপড় বুননে ব্যবহার করা হবে।”

বিশ্বের সবচেয়ে বেশি গ্রিন বা পরিবেশবান্ধব কারখানা বাংলাদেশে রয়েছে দাবি করে মিরান বলেন, নতুন এই উদ্যোগ বাস্তবায়ন হলে বাংলাদেশ সার্কুলার ইকনোমিতে নেতৃত্বের স্থান দখল করবে।

বিজিএমইএ, পোশাকের ক্রেতা ও আন্তর্জাতিক পরিবেশবাদী সংগঠনগুলোর ত্রিপক্ষীয় প্রচেষ্টায় প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করা হবে।

মিরান বলেন, বিজিএমইএ একদিকে কারখানাগুলোকে এই প্রক্রিয়ার সঙ্গে যুক্ত করবে, অন্যদিকে ক্রেতাদেরকে এই উদ্যোগের সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দেবে।

অনেক ক্রেতা নিজেদের আগ্রহ থেকেই এধরনের পরিবেশ সহায়ক রিসাইক্লিনিং পণ্য কিনতে আগ্রহ দেখাচ্ছে বলেও জানান তিনি।

উন্নয়নশীল দেশগুলোকে ক্লিন এনার্জি বা পরিবেশ সম্মত জ্বালানির ব্যবহারে যুক্ত করতে এবং জলবায়ু পরিবর্তনের সঙ্গে খাপ হওয়াতে গঠিত গ্রিন ক্লাইমেট ফান্ড গত বছর বাংলাদেশে পোশাকখাতে কার্বন নিঃসরণ রোধে পৃথক প্রকল্প হাতে নিয়েছে।

বাংলাদেশ থেকে পোশাকের অন্যতম ক্রেতা এইচঅ্যান্ডএম বলছে, তারা তাদের পুরো ব্যবসাকে পরিবেশবান্ধব ও সার্কুলার বিজনেস মডেলে নিয়ে যেতে চায়। ফলে তারা তাদের সরবরাহকারীদের পূর্ণ জলবায়ু সহনশীল (ক্লাইমেট নিউট্রাল) করে গড়ে তুলতে চায়।