পিপিই, মাস্ক, ওষুধে বেক্সিমকোর ‘সফল’ বছর

করোনাভাইরাসের মহামারীর মধ্যে দেশের ব্যবসা-বাণিজ্য যেখানে দারুণ সঙ্কটে, তখনও বেক্সিমকো গ্রুপ কী করে ‘ভালো’ ব্যবসা করতে পারল, সেই গল্প শোনালেন গ্রুপের অন্যতম পরিচালক সৈয়দ নাভিদ হোসেন।

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 14 Jan 2021, 02:54 PM
Updated : 14 Jan 2021, 04:01 PM

তিনি জানালেন, পিপিই, মাস্ক আর ওষুধ সামগ্রীর ব্যবসাই তাদের একটি ‘সফল বছর’ উপহার দিয়েছে। 

রাষ্ট্রায়ত্ত জনতা ব্যাংকের ২০২০ সালের সর্বোচ্চ রপ্তানি ট্রফি ও সেরা গ্রাহকের সম্মাননা পেয়েছে দেশের অন্যতম বড় শিল্প গোষ্ঠী বেক্সিমকো গ্রুপের প্রতিষ্ঠান বেক্সিমকো লিমিটেড।

জনতা ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক আব্দুছ ছালাম বৃহস্পতিবার ব্যাংকের প্রধান কার্যালয়ে এক অনুষ্ঠানে বেক্সিমকোর গ্রুপের পরিচালক ও টেক্সটাইল ডিভিশনের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা নাভিদ হোসেনের হাতে ট্রফি তুলে দেন।

অনুষ্ঠানে জানানো হয়, ২০২০ সালে বেক্সিমকো লিমিটেড ২ হাজার ৩২৬ কোটি ৫৪ লাখ টাকার পণ্য রপ্তানি করেছে। আর বেক্সিমকো গ্রুপের মোট রপ্তানির পরিমাণ ছিল ৪ হাজার ৭১৩ কোটি ৯১ লাখ টাকা।

পুনঃতফশিলকৃত বা পুনর্গঠিত ঋণের কিস্তি বাবদ বেক্সিমকো গ্রুপ গতবছর ৪২৬ কোটি ৬১ লাখ টাকা জনতা ব্যাংককে দিয়েছে।

আর বেক্সিমকো গ্রুপের কাছ থেকে জনতা ব্যাংকের সব মিলিয়ে আয় হয়েছে ৪৮৩ কোটি ৯২ লাখ টাকা, যা এ ব্যাংকের গ্রাহকদের মধ্যে সবচেয়ে বেশি।

পুরস্কার গ্রহণের আগে সংক্ষিপ্ত বক্তব্যে নাভিদ হোসেন বলেন, তাদের কোম্পানি যা উৎপাদন করে, তার অর্ধেকই রপ্তানি হয়।

“গত বছর যখন কোভিড-১৯ মহামারী শুরু হল, তখন সারাবিশ্বের প্রায় সকল দেশই লকডাউনে চলে যায়। তখন আমরাও বিপুল ক্ষতির শঙ্কায় পড়ে যাই। কারণ আমাদের কোম্পানিতে প্রায় ৪০ হাজার লোক কাজ করে।

“কিন্তু আমরা হাল ছেড়ে না দিয়ে ভালো সুযোগের অপেক্ষায় ছিলাম। তখনই যুক্তরাষ্ট্র থেকে প্রায় ৬৫ লাখ পিপিই রপ্তানির আদেশ পেয়ে যাই।”

নাভিদ হোসেন বলেন, এরপর বিশ্বের অনেক দেশ থেকেই পিপিই, মাস্ক, ওষুধ সামগ্রীসহ মহামারীর জন্য প্রয়োজনীয় বিভিন্ন পণ্য রপ্তানির অর্ডার পেতে থাকে বেক্সিমকো।

“সকল অর্ডারই আমরা সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন করার মাধ্যমে একটি ব্যবসা সফল বছর কাটাতে পেরেছি।”

মহামারীর মধ্যে চীন থেকেও অনেক ক্রেতা এসে বেক্সিমকোর কাছ থেকে পণ্য কিনেছে জানিয়ে তিনি বলেন, “যে কোনো প্রতিষ্ঠানের সুনাম ও অর্জন আসে তার কার্ক্রমের মাধ্যমে। দেশে ও দেশের বাইরে আমাদের সুনাম ছিল বলেই বিশেষ করে যুক্তরাষ্ট্রের মত দেশ চীনকে বাদ দিয়ে আমাদের কাছ থেকে পণ্য নিয়েছে। এটা আমাদের জন্য অনেক বড় পাওয়া।

বাংলাদেশের ওপর উন্নত রাষ্ট্রগুলোর আস্থা বেড়েছে জানিয়ে বেক্সিমকো গ্রুপের এই পরিচালক বলেন, “প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বাংলাদেশে বিদ্যুৎ, জ্বালানি, যোগাযোগ অবকাঠামো ও শিল্পায়নে ব্যাপক উন্নয়ন করেছে। শেখ হাসিনার এই উন্নয়ন ও বিচক্ষণতার খবর সারা বিশ্বে ছড়িয়ে পড়েছে। তারই ফসল হচ্ছে উন্নত রাষ্ট্রগুলোও এখন বাংলাদেশকে রপ্তানি আদেশ দিতে ভয় পাচ্ছে না।”

বেক্সিমকো গ্রুপের চেয়ারম্যান হিসেবে আছেন এ এস এফ রহমান। আর তার ভাই সালমান এফ রহমান আছেন ভাইস চেয়ারম্যান পদে, যিনি প্রধানমন্ত্রীর বেসরকারি শিল্প ও বিনিয়োগ উপদেষ্টা।

১৯৭০ এর দশকে যাত্রা শুরু করা বেক্সিমকোর ব্যবসা এখন ছড়িয়ে আছে বস্ত্র, ওষুধ, প্লাস্টিক, সিরামিকস, নির্মাণ, আবাসন, তথ্য-প্রযুক্তি, ব্যাংক, জ্বালানি, পাটসহ বিভিন্ন খাতে।

ইনডিপেনডেন্ট টেলিভিশন ও ডেইলি ইনডিপেনডেন্ট বেক্সিমকো গ্রুপেরই সহযোগী কোম্পানি।

বেক্সিমকো গ্রুপের আর্থিক প্রতিষ্ঠানের মধ্যে রয়েছে আইএফআইসি ব্যাংক এবং বেক্সিমকো সিকিউরিটিজ।

এ গ্রুপের কোম্পানিগুলোর মধ্যে বেক্সিমকো লিমিটেড, বেক্সিমকো সিনথেটিকস, বেক্সিমকো ফার্মাসিউটিক্যালস লিমিটেড এবং শাইনপুকুর সিরামিকস বাংলাদেশের পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত।