‘কারসাজিতে’ চালের দাম বৃদ্ধি: কৃষিমন্ত্রী

আমনের ভরা মৌসুমে আড়তদার-মিলাররা ‘কারসাজি করে’ চালের দাম বাড়াচ্ছে বলে মন্তব্য করেছেন কৃষিমন্ত্রী আব্দুর রাজ্জাক।

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 27 Dec 2020, 11:59 AM
Updated : 27 Dec 2020, 11:59 AM

রোববার সচিবালয়ে এক অনুষ্ঠানে সাংবাদিকদের প্রশ্নের উত্তরে বলেন, ঘাটতি মেটানোর জন্য সরকার ৫ থেকে ৬ লাখ টন চাল বিদেশ থেকে আমদানি করার নীতিগত সিদ্ধান্ত নিয়েছে।

“সরকারি গুদামে চাল কমে গেছে। গত বছর প্রায় ১৩ লাখ টনের মত খাদ্য ছিল, এ বছর সেটা কমে ৭ লাখ টনে নেমে এসেছে।

“এই যে ৫ থেকে ৬ লাখ ঘাতটি যদি না মেটাতে পারি… বাংলাদেশের মিলাররা, আড়তদাররা, জোতদাররা, যারা বাজারকে নিয়ন্ত্রণ করে, তারা চালের দাম বাড়ায় এবং এবারও তারা সেই কাজ করছে। মৌসুমের সময় তারা এখনও ধান কিনছে এবং ধান ও চালের দাম দুটোই বাড়িয়ে দিয়েছে।”

এখন আমনের ভরা মৌসুম চললেও ধান ও চাল-দুটোরই দাম গত বছরের তুলনায় বেশি। সরকারের ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশের (টিসিবি) তথ্য অনুযায়ী, গত এক মাসে নাজিরশাইল ও মিনিকেটের দাম বেড়েছে ৯ দশমিক ৮২ শতাংশ। আর ইরি বা স্বর্ণার মত মোটা চালের দাম ১২ দশমিক ৯৪ শতাংশ বেড়েছে। মাঝারি মানের চাল পাইজাম বা লতার দাম বেড়েছে ১৯ দশমিক ৩৫ শতাংশ।

এই পরিস্থিতিতে ভারতসহ অন্যান্য দেশ থেকে চাল আমদানির সুযোগ তৈরি করা হয়েছে জানিয়ে মন্ত্রী বলন, “২৫ শতাংশ শুল্ক দিয়ে বিদেশ থেকে চাল আমদানি করা যাবে। প্রাইভেট সেক্টরকেও সেই সুযোগ দেওয়া হবে। প্রাইভেট সেক্টর এবং সরকার ৫ থেকে ৬ লাখ টন চাল আনতে পারবে। এর বেশি হলে আমরা আর অনুমতি দেব না। যখনই ৬ লাখ টনের এলসি দেওয়া হবে, তারপর আর এলসির সুযোগ দেওয়া হবে না।”

চাল আমদানিতে ৬২ দশমিক ৫ শতাংশের মত শুল্ক দিতে হত। তা কমিয়ে ২৫ শতাংশ করার কথা রোববারই জানিয়েছেন খাদ্যমন্ত্রী।

সরকার বাজার নিয়ন্ত্রণ করার জন্য ‘সর্বাত্মক উদ্যোগ’ গ্রহণ করেছে জানিয়ে মন্ত্রী বলেন, “অতটা চালের ঘাটতি আমাদের নাই। কিন্তু এই সুযোগে মিলাররা নানা রকম কারসাজি করে চালের দাম বৃদ্ধি করার চেষ্টা করছে। আমরা যদি চালের সরবরাহ বিদেশ থেকে নিয়ে আসি, আমার মনে হয় না খুব অসুবিধা হবে।”

কৃষিমন্ত্রী জানান, ইতোমধ্যে চাল আসা শুরু হয়েছে, ভারতে সঙ্গে সরকারিভাবে চুক্তি হয়েছে। থাইল্যান্ড, ইন্দোনেশিয়া, ভিয়েতনাম থেকেও চাল আনার চেষ্টা করা হবে। সব মিলিয়ে সরকারের পূর্ণ উদ্যোগ ও প্রস্তুতি রয়েছে চালের ঘাটতি মেটানোর জন্য।

“যেহেতু চালের দাম একটু অস্বাভাবিক বেশি হয়েছে, এজন্য বিশেষ বিবেচনায় প্রাইভেট সেক্টরকে চাল আমদারি সুযোগ দেওয়া হবে। সরকারও চাল আমদানি করে ঘাটতি মেটাবে। যাতে একটি মানুষও কষ্ট না পায়। কেউ যেন ক্ষুধার্ত না থাকে, সেই নিশ্চয়তা আমি দিতে চাই।“

চাল আমদানির বিরোধিতা করে মিলাররা বলছেন, এতে কৃষক ক্ষতির মুখে পড়বে। এ বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলে মন্ত্রী বলেন, “১২০০ টাকা দরে ধান বিক্রি হচ্ছে, কোনো কোনো এলাকায়... নোয়াখালীতে ১ হাজার ৪০ টাকা। এক হাজার টাকাও বিক্রি করতে পারে, আমনের যে খরচ হয়েছে, তাতে লস হওয়ার কারণ নেই। কৃষক অসন্তুষ্ট হবে, দাম পাবে না- এটার কোনো কারণ নেই। ৯০০ টাকার বিক্রি করলেও লাভ হবে। কিন্তু ১২০০ টাকা খুব বেশি।”

সরকারের ওএমএস কর্মসূচি অব্যহত থাকবে এবং বিদেশ থেকে চাল আসতে শুরু করায় চালের দাম নিম্ন আয়ের মানুষের ক্রয় ক্ষমতায় মধ্যে চলে আসবে বলে আশা প্রকাশ করেন কৃষিমন্ত্রী। 

এবার আমন উৎপাদন কম হওয়ার কারণ ব্যাখ্যা করে তিনি বলেন, বন্যায় এক লাখ ৫ হাজার হেক্টর জমির ধান নষ্ট হয়েছে। এ হিসাবে ১৫ থেকে ২০ লাখ টন ধান কম হয়েছে। এসব কারণে চালের বাজার ঊর্ধ্বমুখী।

“আউশ ও আমনের যে ক্ষতি হয়েছে তার ফলেই এ ভরা মৌসুমে আমনের দাম একটু বেশি। সরকার চেষ্টা করছে... কোনক্রমে রিকশাওয়ালা, ভ্যানওয়ালা, যারা নিম্ন আয়ের মানুষ, তাদের যেন কষ্ট না হয় সে বিবেচনা নিয়ে সরকার ওএমএস চালু করেছে এবং অব্যাহতভাবে খোলা বাজারে চাল বিক্রি করছে।”

ঘাটতি মেটাতে এবার লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে ৫০ হাজার হেক্টর বেশি জমিতে বোরা চাষ করা হবে জানিয়ে কৃষিমন্ত্রী বলেন, “২ লাখ হেক্টর জমিতে হাইব্রিড ধান হবে, এটা মোটা চাল হলেও এর জন্য প্রণোদনা ও বীজ দেওয়া হয়েছে। বোরোতে আমরা ভালো করব যদি কোনো প্রাকৃতিক দুর্যোগ না হয়।”

গোপালগঞ্জ জেলায় বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইন্সটিউটের কৃষি গবেষণা কেন্দ্রের পূর্তকাজের উদ্বোধন উপলক্ষে আয়োজিত এ অনুষ্ঠানে কৃষি সচিব মো. মেসবাহুল ইসলামসহ মন্ত্রণালয়ের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।