পূর্বাচলে ১৭ মার্চ বাণিজ্য মেলা শুরুর প্রস্তুতি ইপিবির

ঢাকা আন্তর্জাতিক বাণিজ্য মেলা পূর্বাচলে আগামী ১৭ মার্চ শুরুর প্রস্তুতি ধরে এগোচ্ছে রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরো (ইপিবি)।

নিজস্ব প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 24 Dec 2020, 01:54 PM
Updated : 24 Dec 2020, 04:45 PM

তাহলে শেরেবাংলা নগর থেকে ২৫ কিলোমিটার দূরে নতুন ঠিকানায় বসতে যাচ্ছে বাণিজ্য মেলার ২৬তম আসর।

১৯৯৫ সাল থেকে শেরেবাংলা নগরে অনুষ্ঠিত হচ্ছে ঢাকা আন্তর্জাতিক বাণিজ্য মেলা। এই কারণে স্থানটি মেলা মাঠ নামেও পরিচিতি পেয়েছে।

এই মেলাকে কেন্দ্র করে মাসজুড়ে যানজট লেগে থাকে শেরেবাংলা নগর, আগারগাঁও, শ্যামলীসহ আশপাশের সড়কগুলোতে।

শেরেবাংলা নগর থেকে মেলা রাজউকের নতুন শহর পূর্বাচলে সরিয়ে নেওয়া হবে বলে গত কয়েক বছর ধরে বলা হচ্ছিল; যদিও তার বাস্তবায়ন হচ্ছিল না। তবে এবার চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত হয়েছে।

মেলার আয়োজক ইপিবির মেলা ও প্রদর্শনী বিষয়ক পরিচালক মাহমুদুল হাসান বৃহস্পতিবার বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “পূর্বাচলে এবারের মেলা আয়োজনের জন্য বাংলাদেশ-চায়না ফ্রেন্ডশিপ এক্সিবিশন সেন্টারটি পুরোপুরি প্রস্তুত। আগামী ৩০/৩১ ডিসেম্বর চীনা কর্তৃপক্ষ স্থাপনাটি ইপিবির কাছে হস্তান্তর করবে।”

প্রতিবছর ১ জানুয়ারি বাণিজ্য মেলা শুরু হলেও করোনাভাইরাস মহামারীর কারণে এবার তাতে ছেদ পড়েছে।

অনিশ্চয়তার মধ্যেও ২০২১ সালের ১৭ মার্চ জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মদিনে মেলা ও প্রদর্শনী কেন্দ্রের উদ্বোধনের প্রস্তুতি নিচ্ছে ইপিবি।

ইপিবির সচিব ইফতেখার আহমেদ চৌধুরী বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “আমরা মাঠ পর্যায়ের প্রস্তুতি সম্পন্ন করেছি। মেলা আয়োজনের দিন তারিখের বিষয়টি মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর সম্মতির উপর নির্ভর করছে।

“এখন মহামারীকাল অতিক্রম হচ্ছে। সব দিক বিবেচনায় নিয়ে প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনার আলোকে ১৭ মার্চ থেকে এবারের মেলা শুরু করা যায় কি না, সেই বিষয়টি মাথায় রেখে কাজ চালিয়ে যাচ্ছি।”

পূর্বাচলে মেলার জন্য নির্ধারিত স্থান বাংলাদেশ-চীন ফ্রেন্ডশিপ এক্সিবিশন সেন্টারে স্থায়ী ছাদের নিচে এবারের মেলা কবে, কখন, কীভাবে আয়োজন করা হবে, তা নিয়ে দফায় দফায় বৈঠক চলছে ইপিবিতে।

অন্যান্য বছর মেলা শুরুর তিন মাস আগে থেকেই অস্থায়ী অবকাঠামো নির্মাণ ও স্টল বরাদ্দের জন্য উন্মুক্ত বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করা হলেও এবার তা করা হয়নি।

মাহমুদুল বলেন, “মেলা আয়োজনের বিষয়ে বোর্ড মিটিংয়ে নীতিগত সিদ্ধান্ত হয়েছে। স্টল বরাদ্দসহ অন্যান্য কাজের বিভিন্ন টেন্ডারের বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিতে স্টিয়ারিং কমিটির বৈঠক হয়েছে।”

পূর্বাচলে মেলার পরিসর আগের তুলনায় কিছুটা ছোট করার পরিকল্পনা রয়েছে জানিয়ে তিনি বলেন, আগে ১৩টি ক্যাটাগরিতে জায়গা বরাদ্দ দেওয়া হত। এবার সেটা চার ক্যাটাগরিতে নিয়ে আসা হবে।

পূর্বাচলে প্রদর্শনী কেন্দ্রটি নির্মাণ করেছে একটি চীনা নির্মাণ প্রতিষ্ঠান। প্রকল্প দেখভালের দায়িত্বে ছিলেন ইপিবি কর্মকর্তা (পিডি) রেজাউল করিম।

তিনি বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে জানান, পূর্বাচলে ২০ একর জমির ওপর বাংলাদেশ-চীন ফ্রেন্ডশিপ এক্সিবিশন সেন্টারের নির্মাণ হয়েছে। সেখানে ৯ বর্গফুট আয়তনের ৮০০টি স্টল রয়েছে। এর বাইরে রয়েছে ছয় একর খোলা জায়গা। চাইলে সেখানেও অস্থায়ী স্টল বসানো যাবে।

শেরেবাংলা নগরে গাড়ি রাখার স্থানসহ মেলা প্রাঙ্গণের আয়তন গতবার ছিল ৩২ একর। গতবারের মেলায় স্টল-প্যাভিলিয়নের সংখ্যা ছিল ৪৮৩টি।

বাণিজ্য মেলায় বড় পরিসরে এক ডজনেরও বেশি প্রতিষ্ঠান নিয়ে জাঁকজমকের সঙ্গে অংশ নিয়ে থাকে যেসব প্রতিষ্ঠান, তার একটি প্রাণ আরএফএল গ্রুপের বিপণন বিভাগের পরিচালক কামরুজ্জামান কামাল মেলা স্থানান্তরে সমস্যার চেয়ে সম্ভাবনার দিকটিই বড় করতে দেখছেন।

তিনি বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, শেরে বাংলানগর থেকে বাণিজ্যমেলা পূর্বাচলে স্থানান্তর করলে প্রাথমিক অবস্থায় দর্শনার্থী-ক্রেতা খানিকটা কমে যাবে।

তবে পূর্বাচলে বিশ্বমানের অবকাঠামো নির্মাণ করা গেলে এবং পর্যাপ্ত যানবাহন বা যাতায়াত ব্যবস্থা নিশ্চিত করা গেলে অচিরেই সেখানে মেলা জমে উঠবে বলে মনে করেন তিনি।

“উন্নত বিশ্বে স্থায়ী অবকাঠামোতেই মেলা ও প্রদর্শনীর আয়োজন হয়ে থাকে। শেরে বাংলানগরে অস্থায়ী মাঠে যে মেলার আয়োজন হতো সেখানে স্টল, প্যাভিলিয়ন নির্মাণ করতে গিয়ে কোম্পানিগুলোর অপ্রয়োজনীয়ভাবে অনেক অর্থ ব্যয় হয়ে যেত। পূর্বাচলে গেলে এই সমস্যাটার সমাধান হবে।”