ভুটানের সঙ্গে পিটিএ সই রোববার

মুক্তিযুদ্ধের সময় ১৯৭১ সালের ৬ ডিসেম্বর বাংলাদেশকে স্বাধীন ও সার্বভোম রাষ্ট্র হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়া ভুটানের সঙ্গে একই দিনেই শুল্কমুক্ত বাজার সুবিধা সম্প্রসারণের লক্ষ্যে দুই দেশ অগ্রাধিকারমূলক বাণিজ্য চুক্তি (পিটিএ) সই হচ্ছে।

নিজস্ব প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 5 Dec 2020, 01:12 PM
Updated : 5 Dec 2020, 01:12 PM

ভার্চুয়াল এক অনুষ্ঠানে রোববার দুই দেশের প্রধানমন্ত্রীর উপস্থিতি এই চুক্তি সই হবে।

শনিবার রাজধানীর বাংলাদেশ ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে এক সংবাদ সম্মেলনে এ বিষয়ে বিস্তারিত তুলে ধরা হয়।

২০১০ সাল থেকে বাংলাদেশ ভুটানকে ১৮টি পণ্যে শুল্কমুক্ত বাজার সুবিধা দিচ্ছে। আর বাংলাদেশের ৯০টি পণ্য ভুটানে শুল্কমুক্ত বাজার সুবিধা পাচ্ছে। ভুটান আরও কিছু পণ্যে শুল্কমুক্ত সুবিধা চাওয়ায় দুই দেশের মধ্যে ‘দ্বিপক্ষীয় অগ্রাধিকারমূলক বাণিজ্য চুক্তি’ নিয়ে আলোচনা শুরু হয়।

২০১৯ সালের ১২-১৫ এপ্রিল ভুটানের প্রধানমন্ত্রীর বাংলাদেশ সফরের সময় এ নিয়ে আলোচনা হয়। এর ধারাবাহিকতায় ওই বছরের ২১-২৩ অগাস্ট দুই দেশের মধ্যে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে একটি বৈঠক হয়। এরপর গত ১৯ জুন হয় দ্বিতীয় বৈঠক। এসব বৈঠকের আলোকে গত সেপ্টেম্বরে বাণিজ্য চুক্তির খসড়ায় অনুমোদন দেয় মন্ত্রিসভা।

এই চুক্তির ফলে বাংলাদেশের ১০০টি পণ্য ভুটানে এবং ভুটানের ৩৪টি পণ্য বাংলাদেশে শুল্কমুক্ত সুবিধা পাবে। ভূটান থেকে শুল্কমুক্ত সুবিধার আওতায় পাথর আমদানি করা গেলে বাংলাদেশের দেশের জন্য নির্মাণ সামগ্রীর ব্যয় হ্রাস পাবে, যা নির্মাণ খাতের উন্নয়নে সহায়ক হবে। এছাড়া স্বল্পমূল্যে কৃষি প্রক্রিয়াজাতকরণ পণ্যের কাঁচামাল আমদানি করা সহজ হবে।

সংবাদ সম্মেলনে পাথর আনার বিষয়টি একাধিকবার তুলে ধরা হয়।

২০০৮-০৯ অর্থ বছরে দুই দেশের দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্যের পরিমাণ ছিল ১২ দশমিক ১৬ মিলিয়ন মার্কিন ডলার; যা ক্রমান্বয় বেড়ে ২০১৮-১৯ অর্থ বছরে ৫৭ দশমিক ৯০ মিলিয়ন মার্কিন ডলারে উন্নীত হয় ।

বাংলাদেশ থেকে ভুটানে মূলত তৈরি পোশাক, খাদ্য সামগ্রী, প্লাস্টিক, ওষুধ, গৃহসজ্জা সামগ্রী, বৈদ্যুতিক পণ্য রপ্তানি হয়। ভুটান থেকে বাংলাদেশ সবজি ও ফলমূল, খনিজ দ্রব্য, নির্মাণ সামগ্রী, বোল্ডার পাথর, পাল্প, রাসায়নিক আমদানি করে।

সংবাদ সম্মেলনে বাণিজ্য সচিব মো. জাফর উদ্দিন বলেন, “ভুটানের ইকোনমিক অ্যাফেয়ার্স মিনিস্টার এবং বাংলাদেশের বাণিজ্যমন্ত্রী নিজ নিজ দেশের পক্ষে চুক্তিতে সই করবেন।

“ভুটান কিছু রিচুয়াল মানে বলে তাদের চুক্তি সই রেকর্ডেড। আগেই সেটা করা হয়েছে। চুক্তিতে সই করে আমাদের রাষ্ট্রদূতের কাছে দেওয়া হয়েছে। আমাদের পার্ট লাইভ হবে। সেখানে ভুটানের মান্যবর রাষ্ট্রদূত থাকবেন।”

সংবাদ সম্মেলনে বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি বলেন, “এই চুক্তি আরও আগেই স্বাক্ষর হতে পারত। কিন্তু ৬ ডিসেম্বর ঐতিহাসিক দিন বিবেচনায় এদিন করা হচ্ছে।”

বাংলাদেশ-ভুটানের কূটনৈতিক সম্পর্কের ৫০ বছর পূর্তির এই দিন দুই দেশের প্রধানমন্ত্রী কেক কেটে উদযাপন করবেন বলে সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়।

ভুটানের সঙ্গে  বাংলাদেশের বাণিজ্য সম্পর্ক অল্প হলেও কেন এই চুক্তি এমন প্রশ্নে বাণিজ্য সচিব বলেন, “ভুটানের সাথে আমাদের এই চুক্তির ফলে ডিউটি লস হবে সত্যি কিন্তু এক্সপোর্ট বাড়বে। পণ্যের কনজাম্পশান বাড়বে, মানে ভ্যাট বাড়বে। দীর্ঘমেয়াদে লাভ হবে।”

একই প্রশ্নে জবাবে মন্ত্রী টিপু মুনশি বলেন, “এটা ঠিক ভুটান ছোট দেশ। কিন্তু আমরা শুরুটা করলাম। তেমন ক্ষতি হবে না। আর শুরুটা করলাম এমন একটা দেশের সাথে যাকে খুব প্রয়োজনের সময় পাশে পেয়েছিলাম। এটা আবেগ এখানে আছে।"

লিখিত বক্তব্যে বাণিজ্য মন্ত্রী বলেন, ২০২৪ সালে স্বল্পোন্নত দেশ থেকে বাংলাদেশ উন্নয়নশীল দেশে উন্নীত হবে। এলডিসি গ্রাজুয়েশনের ফলে বর্তমানে প্রাপ্ত বাংলাদেশের কিছু বাণিজ্য সুবিধা হ্রাস পাবে।

তিনি বলেন, প্রধানমন্ত্রীর শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বর্তমান সরকারের অঙ্গীকার ও নির্দেশনার পরিপ্রেক্ষিতে বাণিজ্য মন্ত্রণালয় বিশ্ব বাণিজ্যে বাংলাদেশের অংশীদারিত্ব বাড়ানোর কার্যক্রম নেওয়া হয়েছে। এসব কার্যক্রমের মধ্যে রয়েছে বিভিন্ন দেশের সঙ্গে বিদ্যমান চুক্তি সময়োপযোগী করা, অগ্রাধিকারমূলক বাণিজ্য চুক্তি ও মুক্তবাণিজ্য চুক্তি সম্পাদন করা।