অল্প সময়ে বাংলাদেশে ডিজিটাল লেনদেনে বড় সাফল্যের সাক্ষী ডাক বিভাগের ডিজিটাল উদ্যোগ ‘নগদ’ এর হেড অব করপোরেট ব্র্যান্ড মনসুর আজিজ মনে করেন, ছোট-বড় ধাক্কা, অনেক ব্যর্থতার অভিজ্ঞতা পাওয়ার পরই একজন ব্যক্তির বা প্রকল্পে সাফল্য ধরা দেয়।
২০০৮ সালে বাংলাদেশ ব্র্যান্ড ফোরামের মাধ্যমে করপোরেট ও ব্র্যান্ডিংয়ের জগতে পা রাখা মনসুর নিজেও অনেক সফল ও ব্যর্থ প্রকল্পের উদ্যোক্তা।
নতুন উদ্যোক্তাদের সামনে পুরোনো উদ্যোক্তাদের ব্যর্থতার দিকগুলোর চুলচেরা বিশ্লেষণ নিয়ে আসছে তার প্রতিষ্ঠিত ‘রিভার্স স্কুল’।
সম্প্রতি এক আলাপচারিতায় মনসুর আজিজ বলেন, “সফল ব্যক্তিরা সব সময় মঞ্চে এসে সাফল্যের গল্প শোনান খুবই গ্লোরিফায়েডভাবে। তাদের সারকথা হচ্ছে- আমি অল্প দিনের মধ্যে এটা করে ফেলছি, তুমিও চাইলে আমার মতো হতে পারো। এর মাঝামাঝি যেন কিছুই নেই।
“নিজে উদ্যোক্তাদের সঙ্গে কাজ করতে গিয়ে আমি দেখেছি যে পুরো গল্পটাই আসলে মাঝামাঝি অবস্থানের। সবাই যে আইডিয়া দিয়ে যাত্রা শুরু করে শেষ পর্যন্ত ওই আইডিয়ার মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকতে পারেনা। ফেইল করে, মোডিফাই করে। এক কথায় পরিকল্পনা মতো হুবহু কাজ সাধারণত হয়ে উঠে না, অন্তত আমি দেখিনি। কিন্তু গল্প বলার সময় আমরা এমনভাবে বলি, যেন সবকিছু ছকে বাঁধা ছিল।”
বর্তমান কর্মস্থল ‘নগদ’ এর উদাহরণ টেনে তিনি বলেন, “এই পর্যায়ে আসতে নগদকে ২০১৬ সাল থকে ২০১৯ সাল পর্যন্ত নানা গবেষণায় সময় পার করতে হয়েছে। এরপরেই এসেছে একের পর এক সাফল্য। কিন্তু সবাই জানে যে, নগদ ২০১৯ সালে যাত্রা শুরু করেছে।
“একটা বড় বিষয় হচ্ছে সব পরিকল্পনা ঠিক থাকা সত্ত্বেও অনেক সময় ব্যর্থতা আসে। সেই বিষয়টি মাথায় নিয়েই আমি ‘রিভার্স স্কুল’ নামের প্রতিষ্ঠানটি করি। বাংলাদেশে সামাজিকভাবে আমার ফেইলিওর নিয়ে কমফোর্টেবল নই। আমরা সব সময় বলতে চাই যে আমরা ভালো আছি। কারণ আমরা মনে করি যে ভালো থাকতেই হবে। কেউ যদি বলে যে ভালো নেই, অন্যরা বিষয়টি নেতিবাচকভাবে নেয়। কিন্তু একটা মানুষের পক্ষে কি সব সময় ভালো থাকা সম্ভব? আমরা কি সময় ভালো থাকতে পারি?”
কী করছে রিভার্স স্কুল
আপাতত বক্তৃতা ও অভিজ্ঞতা বিনিময়ের মধ্যেই সীমাবদ্ধ আছে রিভার্স স্কুলের কার্যক্রম। ভবিষ্যতে আরও বড় পরিসরে কাজ করার পরিকল্পনাও রয়েছে।
আপাতত ধানমন্ডির ইএমকে সেন্টারে বাছাই করা উদ্যোক্তাদের নিয়ে সেশনের আয়োজন করা হচ্ছে। পরে এসব সেশনের ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে দেওয়া হচ্ছে।
মনসুর আজিজ বলেন, “সমাজে অনেকদিন ধরে সফলতার রোগটা তৈরি হয়েছে। এর বিরুদ্ধেই আমরা মুভমেন্ট তৈরি করতে চাই। ফেইলিওর বা ব্যর্থতা যে কোনো আস্বাভাবিক বা ভেঙে পড়ার মতো বিষয় নয়, সেই বিষয়টা মানুষকে রিয়ালাইজ করাতে চাই। যদি এমন কোনো মেকানিজম করতে পারি, যা সম্ভাব্য পথগুলো পর্যালোচনা করে উদ্যোক্তাকে একটা সঠিক ও বাস্তবসম্মত গাইডলাইন দিতে পারবে।
“এটি কোনো ব্যবসায়িক উদ্যোগ নয়। মানবিক দিক বিবেচনা করে আপাতত উদ্যোক্তাদের বিষয়টি মাথায় নিয়ে আমি কাজটা করছি।”