ভ্যাট: ইএফডিতে কেনাকাটায় পুরস্কার দেবে এনবিআর

ইলেক্ট্রনিক ফিসক্যাল ডিভাইস (ইএফডি) যেসব দোকানে আছে, সেখান থেকে কেনাকাটায় নাগরিকদের উৎসাহিত করতে পুরস্কারের ঘোষণা দিয়েছেন জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের চেয়ারম্যান আবু হেনা মো. রহমাতুল মুনিম।

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 26 Nov 2020, 02:09 PM
Updated : 9 Dec 2021, 12:58 PM

ইএফডির মাধ্যমে লেনদেনের রেকর্ড রাখে এমন দোকানের ক্রেতাদের মধ্যে থেকে লটারির মাধ্যমে প্রতিমাসে এই পুরস্কার দেওয়া হবে।

বৃহস্পতিবার রাজধানীর একটি হোটেলে আয়োজিত সেমিনারে পুরস্কারের এই ঘোষণা দেন এনবিআর চেয়ারম্যান।

ইএফডির ব্যবহার এবং এর সুবিধা সম্পর্কে ব্যবসায়ীদের অবহিত করতে এই সেমিনরের আয়োজন করা হয়। 

ইএফডি যেসব দোকানে থাকে, সেখানে পস মেশিন বা ইলেক্ট্রনিক ক্যাশ রেজিস্ট্রারের মত যন্ত্রে পণ্যের দাম নেওয়া হয় বলে ক্রেতার দেওয়া ভ্যাট সরকারের খাতায় যোগ হওয়া নিশ্চিত হয়।

এনবিআর চেয়ারম্যান বলেন, “আগামী জানুয়ারি মাস থেকে ইএফডির ইনভয়েস লটারি হবে। এর মাধ্যমে ভোক্তা ভ্যাট দেবেন এবং প্রতি মাসে পুরস্কার পাবেন।”

যারা পুরস্কার পাবেন, তাদের লটারি নম্বর গণমাধ্যমে প্রকাশ করা হবে এবং নিকটস্থ ভ্যাট অফিস থেকে পুরস্কারের টাকা তারা নিতে পারবেন বলে জানান আবু হেনা।

তিনি বলেন, “আশা করছি এখন থেকে যাদের দোকানে ইএফডি আছে, ভোক্তারা সেইসব দোকান খুঁজে পণ্য কিনতে শুরু করবেন।”

তবে প্রতি মাসে কতজন ক্রেতা কত টাকার পুরস্কার পাবেন, সে বিষয়ে সেমিনারে বিস্তারিত বলেননি এনবিআর চেয়ারম্যান।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে এনবিআরের একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “আমরা এ বিষয়ে একটি নীতিমালা তৈরি করব। তখনই ঠিক হবে কতজনকে কত টাকার পুরস্কার দেওয়া হবে।”

পুরস্কার চালুর কারণ ব্যাখ্যা করতে গিয়ে এনবিআর চেয়ারম্যান সেমিনারে বলেন, “ভ্যাটের কারণে এখন অনেকেই ইএফডি দোকান থেকে কেনাকাটা করতে চাইছেন না বলে ব্যবসায়ীরা আমাদের জানাচ্ছেন। পুরস্কার ঘোষণা করায় সেই অনীহা দূর হবে বলে আমার বিশ্বাস। যারা ভাবছেন ইএফডি নেওয়ার কারণে বিক্রি কম হচ্ছে, এটা ভুল।”

তিনি বলেন, ভ্যাট দেওয়া ও আদায় নিয়ে নানা জনের মধ্যে নানা রকম কথা আছে। যারা দোকান মালিক, তাদের পক্ষ থেকে এক ধরনের কথা আছে। আবার ভোক্তারা বলেন, তারা ভ্যাট দেন ঠিকই, কিন্তু দোকান মালিক সেটা সরকারের কোষাগারে জমা দেন না।

“ভ্যাট তো দোকান মালিক দেবেন না, ভ্যাট দেবে ভোক্তা। সেই ভ্যাট সরকারের আমানত, দোকান মালিক শুধু সেটা সরকারকে বুঝিয়ে দেবেন।”

রাষ্ট্রের উন্নয়নের সঙ্গে বেশি কর দেওয়ার বিষয়টি জড়িত মন্তব্য করে আবু হেনা এ বিষয়ে সহযোগিতার হাত বাড়াতে ব্যবসায়ীদের প্রতি আহ্বান জানান।

তিনি বলেন, “দেশের যোগাযোগ অবকাঠামো উন্নয়নের মাধ্যমে দেশের উন্নয়ন হচ্ছে। কিন্তু ভ্যাট দেবেন না, ট্যাক্স দেবেন না, তাহলে সরকার দেশের উন্নয়ন করবে কীভাবে?”

নিজেদের অর্থায়নে দেশের বিভিন্ন উন্নয়ন প্রকল্পের কথা তুলে ধরে এনবিআর চেয়ারম্যান বলেন, “বিদেশিদের কাছ থেকে হাত পেতে ভিক্ষা করে এনে দেশের উন্নয়ন করবেন? বাংলাদেশ এখন সেই জায়গায় নেই।

“আমরা নিজেদের অর্থায়নে পদ্মা সেতু করছি। ঢাকা শহরে মাটির নিচ দিয়ে গাড়ি চলবে। ফ্লাইওভার হচ্ছে, মহাশূন্যে আমরা স্যাটেলাইট পাঠিয়েছি। এসব দেখে কি আমাদের ভালো লাগে না?”

এনবিআরের মূসক বাস্তবায়ন ও আইটি সদস্য মান্নান শিকদার বলেন, “১৯৯১ সালে ভ্যাট নেওয়া শুরু করার পর বলা হয়েছিল, ভ্যাট দিলে ব্যবসা টিকবে না। কিন্তু আজকের বাস্তবতা হচ্ছে রাজস্ব আহরণের সবচেয়ে বড় খাত এখন ভ্যাট।”

দেশকে এগিয়ে নেওয়ার তাগিদ দিয়ে তিনি ব্যবসায়ীদের উদ্দেশ্যে বলেন, “দেশকে এগিয়ে নিতে হলে ভ্যাট আদায় নিশ্চিত করতে হবে। আমরা আরও এগিয়ে যেতে চাই। আমরা আর পেছনে থাকতে চাই না।

ঢাকা দক্ষিণ কাস্টমস এক্সইজ ও ভ্যাট কমিশনারেট আয়োজিত এ সেমিনারে সভাপতিত্ব করেন ঢাকা দক্ষিণ কাস্টমস এক্সইজ ও ভ্যাট কমিশনারেটের কমিশনার এস এম হুমায়ুন কবীর।