নগরীর ফুটপাতগুলোতে সারা বছর ধরে যারা শার্ট, টি-শার্ট, প্যান্ট বিক্রি করেন, তারাই এখন তুলেছেন রঙ-বেরঙের শীতের কাপড়। তাদের হাঁকডাকে পথচারীরাও নেড়েচেড়ে দেখছেন, যদিও বিক্রি তেমন নেই।
বায়তুল মোকাররম মসজিদের উত্তর গেইটে আলাদা ধরনের শীত বস্ত্রের পসরা নিয়ে পাশাপাশি বসেছেন কয়েকজন হকার। তাদের মধ্যে মো. হানিফ বিক্রি করছেন বড়দের সোয়েটার।
বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে তিনি বললেন, সপ্তাহ দুই হল শীতের কাপড় এনেছেন। শনিবার সারা দিনে বিক্রি হয়েছে আটশ টাকার মত।
“শীতের কাপড়ের ব্যবসা হয় অল্প কয় দিন, এখন তো খচরই উঠছে না। দিনে যদি আট-নয় হাজার টাকা বিক্রি হয়, তখন বেশ লাভ থাকে। না হয় লোকসানই হবে।”
ফুটপাতে হানিফের দোকান থেকে দুটো সোয়েটার কিনেছেন একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের কর্মী রফিকুল ইসলাম।
তিনি বললেন, “আজকে শীতের কাপড় কেনার পরিকল্পনা ছিল না। এই এলাকা দিয়ে যাওয়ার সময় হাতের কাছে পেয়ে কিনে ফেললাম। এগুলো তো আর কয়দিন পরই লাগবে, সব সময় তো হাতে সময় থাকে না, সে জন্যই নেওয়া।”
মহামারীর মধ্যে এবার দুই ঈদ আর পূজায় ব্যবসা সেভাবে না হওয়ায় শীত সামনে রেখে আশায় বুক বাঁধছেন বিক্রেতারা।
ঢাকা নিউ মার্কেট, বঙ্গবাজার ছাড়াও গুলিস্তান, পল্টন, মালিবাগ-মৌচাকসহ নগরীর বিভিন্ন এলাকায় দোকানে ঝোলানো পোশাকের ধরনও বদলাতে শুরু করেছে।
ফুটপাতেও সোয়েটার, জ্যাকেট, কম্বল, চাদর, শাল, বাচ্চাদের কাপড়ের জুতা, হাত ও পায়ের মোজা, কানটুপিসহ নানা শীতবস্ত্রের পসরা সাজিয়ে বসেছেন বিক্রেতারা।
কোনো কোনো ব্যবসায়ী গুদামে শীতবস্ত্র মজুদ করছেন; শীত পড়লেই দোকানে বের করবেন।
তবে এবার শীতের কাপড়ের দাম গতবারের চেয়ে একটু বেশি হবে বলেই আভাস মিলেছে বিক্রেতাদের সঙ্গে কথা বলে।
তারা বলছেন, মহামারীর কারণে অনেক কোম্পানি কাপড়, সুতা ও অন্যান্য এক্সেসরিজ সময়মত আমদানি করতে পারেনি। ফলে অন্য বছরের চেয়ে এবার শীত মৌসুমের কাপড় প্রস্তুত কম হয়েছে। এর প্রভাবে পাইকারি বাজারে দাম তুলনামূলকভাবে বেশি।
আবার শীতের সঙ্গে যদি করোনাভাইরাসের প্রকোপ বাড়ে, ক্রেতা যদি সেভাবে না পাওয়া যায়, সেই শঙ্কাও আছে ব্যবসায়ীদের মনে।
“কিন্তু বিক্রি নেই বললেই চলে। শীত পড়তে শুরু করলে তখন মানুষ হয়ত কিনবে।”
বায়তুল মোকাররমের পশ্চিম পাশের ফুটপাতে বাচ্চাদের রঙ-বেরঙের সোয়েটার তুলেছেন সাহাদাত হোসেন।
তিনি বললেন, “গত সপ্তাহে হঠাৎ করে হালকা শীতের একটা আবহ দেখা দিয়েছিল, তখন অনেক দোকানী শীতের কাপড় উঠিয়েছেন, কিন্তু এখন তো গরমই বলা চলে। তাই বিক্রি তেমন হয় না। হঠাৎ হঠাৎ কোনো কাস্টমার এসে দরদাম করছে। অল্প লাভেই বিক্রি করে দিচ্ছি।”
গতবারের চেয়ে এবার শীতবস্ত্রের দাম কিছুটা বেশি জানিয়ে তিনি বলেন, গতবছর পাইকারিতে যে সোয়েটার ২৬০ টাকায় কিনেছিলেন, এবার সেটা ৩০০ টাকা।
“কারখানাগুলো করোনার কারণে মাল কম তৈরি করেছে। শীত যদি বেশি পড়ে তখন মানুষের কাপড়ের চাহিদা বাড়বে, তখন হয়ত বাজারে শীতের কাপড়ের স্বল্পতা দেখা দিতে পারে। আবার বড় কাপড় ব্যবসায়ীদের সিন্ডিকেটও আছে।”
নিউ মার্কেটের একটি কাপড়ের দোকানের ব্যবসায়ী আনিছুর রহমান বলেন, “শীতের কাপড় তো উঠাইছি, বিক্রি নেই। খুব অল্প-স্বল্প কাস্টসার শীতের কাপড় কিনছে। শীত বাড়লে তখন বিক্রি হবে, আমাদের কাছে ভালো কালেকশন আছে।”
ঢাকা কলেজের উল্টো দিকে ফুটপাতে কাপড়ের পসরা নিয়ে বসেছিলে ভ্রাম্যমাণ বিক্রেতা মো. শাহনুর।
তিনি বলেন, “এই এলাকায় অনেকে শপিং করতে আসেন, তারা আমাদের কাছ থেকেও কাপড় কিনে নিয়ে যান। ছোট-বড়, সব বয়সী মেয়েদের সোয়েটার, মোটা কাপড়ের সর্টস, লং কুর্তি আছে। দাম ২০০ টাকা থেকে ৫০০ টাকার মধ্যে। গত দুই-তিন দিনে বিক্রি একটু বাড়ছে।”
“আমরা শীতকালে দেশি-বিদেশি, ছোট-বড় নানা ধরনের ও দামের কম্বল বিক্রি করি। আমাদের এখানে ভালো মানের চাদর ও শাল রয়েছে। দুই সপ্তাহ ধরে কম্বল বিক্রি জন্য শো করা হয়েছে, তবে বিক্রি তেমন হয় না।”
তিনি বলেন, শীত না পড়লে কম্বল বিক্রি হবে, এমনটা আশাও করা যায় না। এটাই তাদের ব্যবসার ধরন।
একই এলাকা থেকে চার হাজার টাকায় একটি কম্বল কিনেছেন যাত্রাবাড়ির বাসিন্দা এমদাদুল ইসলাম।
তিনি বলেন, “আজকে অফিস নেই বলে কম্বল নিতে এলাম। শীত আসছে, এটা তো লাগবে। আগামী সপ্তাহের ছুটির দিনে অন্য কাজে ব্যস্ত থাকব, পরে সময় করতে পারব না ভেবে কিনে নিলাম।”