বিশ্বের সবচেয়ে বড় বাণিজ্য জোটের গোড়াপত্তন হল এশিয়ায়

চীনের উদ্যোগে এশিয়া ও প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলের ১৫টি দেশ নিয়ে গঠিত হল বিশ্বের সবচেয়ে বড় মুক্ত বাণিজ্য জোট, আগামী দিনের বিশ্ব বাণিজ্যে যার বড় ধরনের প্রভাব পড়বে বলে বিশ্লেষকদের ধারণা।

নিউজ ডেস্কবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 15 Nov 2020, 07:42 AM
Updated : 15 Nov 2020, 09:04 AM

বার্তা সংস্থা রয়টার্স জানিয়েছে, রোববার ভিয়েতনামের রাজধানী হ্যানয়ে আসিয়ান শীর্ষ সম্মেলনের শেষদিন ‘রিজিওনাল কম্প্রিহেনসিভ ইকোনমিক পার্টনারশিপ (আরসিইপি)’ নামে নতুন এই জোট গঠনের চুক্তি হয়।

দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার জোট আসিয়ানের ১০ দেশের সঙ্গে চীন, জাপান, দক্ষিণ কোরিয়া, অস্ট্রেলিয়া ও নিউ জিল্যান্ড এই জোটে থাকছে।

আন্তর্জাতিক বাণিজ্যে চীনের প্রভাব খর্ব করতে বারাক ওবামার সময়ে ১২ দেশের ‘ট্রান্স প্যাসিফিক পার্টনারশিপ’ (টিপিপি) চুক্তি করেছিল যুক্তরাষ্ট্র। ডনাল্ড ট্রাম্প প্রেসিডেন্ট হওয়ার পর সেই চুক্তি থেকে যুক্তরাষ্ট্রকে বের করে আনেন।

আরসিইপি চুক্তি ওবামার সেই জোটের জন্যও বড় ধাক্কা হয়ে এল এবং চীনের অর্থনৈতিক উচ্চাশা পূরণের পথকে আরও মজবুত করল বলে মনে করছেন বিশ্লেষকরা।

সিঙ্গাপুর ন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির অধ্যাপক আলেকজান্ডার ক্যাপ্রি বলেন, “এই জোট চীনের ভূ-রাজনৈতিক অভিলাষ পূরণে নিশ্চিতভাবেই সাহায্য করবে।"

বিবিসি লিখেছে, নতুন এই জোটের আওতায় পড়বে বিশ্বের মোট জিডিপির ৩০ শতাংশ। এর মধ্য দিয়ে যে মুক্ত বাণিজ্য এলাকা তৈরি হবে, তা আকারে যুক্তরাষ্ট্র, কানাডা ও মেক্সিকো নিয়ে গঠিত মুক্ত বাণিজ্য অঞ্চল বা ইউরোপীয় ইউনিয়নের চেয়েও বড় হবে।

এশিয়ার আরেক বড় অর্থনীতির দেশ ভারতেরও এই চুক্তিতে আসার কথা ছিল। কিন্তু সস্তা চীনা পণ্যে বাজার ভরে যাওয়ার আশঙ্কায় নরেন্দ্র মোদীর দেশ গতবছর এ আলোচনা থেকে বেরিয়ে যায়।

এরপরও নয়া দিল্লির জন্য দরজা খোলা থাকছে বলে রোববার আসিয়ান দেশগুলোর নেতারা মন্তব্য করেছেন।

চীনের উদ্যোগে বিশ্বের সবচেয়ে বড় এ বাণিজ্য জোট এবং ওবামার সময়ে হওয়া টিপিপিতে অনুপস্থিতির ফলে ব্যবসা-বাণিজ্যে বিশ্বের মধ্যে সবচেয়ে দ্রুত বর্ধিষ্ণু অঞ্চল এশিয়ায় যুক্তরাষ্ট্রের স্বার্থ ঝুঁকিতে পড়বে বলে মত বিশ্লেষকদের।

কেবল তাই নয়,  পশ্চিমা দেশগুলোর বাজার ও প্রযুক্তির উপর বেইজিংয়ের যে নির্ভরশীলতা রয়েছে, আরসিইপি তা থেকে তাদের সরে আসার ক্ষেত্রেও বড় ধরনের সুবিধা করে দেবে বলে ধারণা আইএনজির বৃহত্তর চীন বিষয়ক প্রধান অর্থনীতিবিদ আইরিস পেংয়ের। 

আরসিইপির মাধ্যমে চীন এশিয়ায় যুক্তরাষ্ট্রকে পাশ কাটিয়ে দক্ষিণপূর্ব এশিয়ার দেশগুলোর পাশাপাশি জাপান ও দক্ষিণ কোরিয়ার অর্থনৈতিক অংশীদার হওয়ার ক্ষেত্রেও নিজেদের অবস্থানকে পাকাপোক্ত করতে পারবে; এর মাধ্যমে এশিয়ায় বাণিজ্য নীতি কেমন হবে, তা ঠিক করার ক্ষেত্রেও বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম অর্থনীতির দেশ বেশ সুবিধাজনক অবস্থায় চলে যাবে বলে মত পর্যবেক্ষকদের।

সামনের দিনগুলোতে বিভিন্ন অঞ্চলে ক্রমান্বয়ে শুল্ক কমিয়ে আনাই নতুন এই আরসিইপি জোটের লক্ষ্য বলে জানিয়েছে রয়টার্স।

দক্ষিণ চীন সাগরের উত্তেজনা ও মহামারী পরবর্তী অর্থনীতি পুনরুদ্ধার নিয়ে অনলাইনে আসিয়ান দেশগুলোর নেতাদের সম্মেলনের সাইডলাইনে রোববার এই আরসিইপি চুক্তিটি স্বাক্ষরিত হয়েছে।

“আরসিইপি শিগগিরই স্বাক্ষরকারী দেশগুলোতে অনুমোদিত হবে এবং এরপর এটি কার্যকর হবে; এটি কোভিড-১৯ মহামারী পরবর্তী অর্থনীতি পুনরুদ্ধারে অবদান রাখবে,” আশাবাদ  ভিয়েতনামের প্রধানমন্ত্রী নগুয়েন জুয়ান ফুকের।

চীনের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, নতুন এ জোটের প্রতিশ্রুতিগুলোর মধ্যে সদস্য দেশের ভেতর কিছু শুল্ক তুলে নেওয়ার কথাও রয়েছে। এর মধ্যে কিছু কিছু শুল্ক শিগগিরই উঠে যাবে; কিছু কিছু উঠতে ১০ বছরেরও বেশি সময় লাগতে পারে।

তবে কোন কোন পণ্যে শুল্ক কমবে এবং কোন কোন দেশ শিগগিরই শুল্ক কমানোর পদক্ষেপ নিতে যাচ্ছে সে বিষয়ে বিস্তারিত কিছু জানা যায়নি।