স্টার গ্রুপের চ্যানেল বন্ধের হুমকি কোয়াবের

জাদু ভিশনের বিভিন্ন নেটওয়ার্কে বন্ধ করে দেওয়া স্টার গ্রুপের সিগন্যাল পুনঃসংযোগ না দিলে আগামী ৪ নভেম্বর থেকে এসব চ্যানেল সম্প্রচার বন্ধের হুমকি দিয়েছে বাংলাদেশের কেবল অপারেটররা।

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 28 Oct 2020, 12:15 PM
Updated : 28 Oct 2020, 01:52 PM

বুধবার জাতীয় প্রেস ক্লাবে কেবল অপারেটর অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (কোয়াব) ঐক্য পরিষদের এক সংবাদ সম্মেলনে এ হুমকি দেওয়া হয়।

কোয়াবের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি এসএম আনোয়ার পারভেজ আগামী ৭ দিনের মধ্যে সমস্যা সমাধানের দাবি জানিয়ে বলেন, “বিভিন্ন নেটওয়ার্কে জাদু ভিশন লিমিটেডের বন্ধ করে দেওয়া স্টার গ্রুপের সিগন্যাল পুনঃসংযোগ না দিলে স্টার গ্রুপের স্টার প্লাস, স্টার জলসা, ন্যাশনাল জিওগ্রাফিক, স্টার গোল্ড ও লাইফ ওকে চ্যানেল সম্প্রচার বন্ধ করে দেওয়া হবে।”

কেবল টিভি নেটওয়ার্ক চ্যানেলগুলোতে ফ্রি-টু এয়ার চ্যানেল ছাড়াও সরকার অনুমোদিত বিদেশি পে-চ্যানেল রয়েছে বলে জানান তিনি।

পারভেজ বলেন, “বর্তমানে বাংলাদেশে ৪টি বিদেশি পে-চ্যানেল পরিবেশক রয়েছে। এর মধ্যে জাদু ভিশন লিমিটেড স্টার গ্রুপের (স্টার প্লাস, স্টার জলসা, ন্যাশনাল জিওগ্রাফিক, স্টার গোল্ড ও লাইফ ওকে) বাংলাদেশের পরিবেশক হিসেবে ২০১০ সাল থেকে ব্যবসা করে আসছে। গত ১০ বছর ধরে এ প্রতিষ্ঠানের সাথে নিরবচ্ছিন্ন ব্যবসা পরিচালনা করে আসছি।”

গত কয়েকমাস ধরে জাদু ভিশনে নিয়োগকৃত দেশি ও বিদেশি কর্মচারীরা কেবল অপারেটরদের সঙ্গে অসৌজন্যমূলক আচরণ করে যাচ্ছে বলে তার অভিযোগ।

তিনি বলেন, “নানা অজুহাতে এ মহামারীর মধ্যে তাদের পরিবেশিত পে-চ্যানেল বন্ধ করে দিচ্ছে।”

গত জুন নাগাদ কেবল অপারেটরদের কাছে জাদু ভিশনের সব পাওনা পরিশোধ থাকলেও এরপর থেকে নানা অজুহাতে কেবল অপারেটরদের পে-চ্যানেল বন্ধ করে দিচ্ছে বলে অভিযোগ করেন পারভেজ।

অজুহাতের বিষয়ে জানতে চাইলে পারভেজ বলেন, “এক-দুই মাসের ফি বকেয়া হলেই সংযোগ বন্ধ করে দিচ্ছে, যা আগে কখনও করা হত না।”

৭ থেকে ৮টি বড় নেটওয়ার্কে চ্যানেল সরবরাহ বন্ধ করে দেওয়ায় ৫ লাখের বেশি দর্শক এ গ্রুপের চ্যানেল দেখতে পারছে না বলে জানান পারভেজ।

অপারেটরদের কাছে কত বকেয়া রয়েছে- জানতে চাইলে পারভেজ বলেন, “এটাকে আমরা বকেয়া বলতে চাই না। আমাদের সমস্যা সমাধান করলেই সব ফি আমরা দিতে প্রস্তুত রয়েছি।”

সমস্যার বিষয়ে পারভেজ বলেন, “তারা আইপি ট্যানজিট ব্যবহার করে ঢাকার বাইরে কেবল ব্যবসায়ীদের বাইরে একটি অংশকে ব্যবসায় নামাচ্ছে বলে চট্টগ্রামসহ বিভিন্ন এলাকায় এ ব্যবসায় অস্থির পরিস্থিতি তৈরি হচ্ছে। এর ফলে এলাকায় এলাকায় দুই ধরনের কেবল ব্যবসায়ীদের মধ্যে সমস্যা তৈরি হচ্ছে।

“তাদের বিল পে করলেও তারা নবায়ন ফির কোনো রশিদ দিচ্ছে না। ফলে বিল দেওয়ার প্রমাণও কেবল অপারেটররা পাচ্ছে না। ফলে অস্বচ্ছতা তৈরি হচ্ছে এবং সরকার রাজস্ব আয়ে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে।”

কেবল অপারেটরদের দেওয়া পে-চ্যানেল নবায়ন ফির পরিশোধের বিপরীতে টাকা প্রাপ্তির রশিদ দেওয়া ও জাদু ভিশন লিমিটেডের অঙ্গ প্রতিষ্ঠান জাদু ডিজিটারের মাধ্যমের অবৈধ কেবল ব্যবসা পরিচালনার দ্রুত সমাধান দাবি জানানো হয় সংবাদ সম্মেলনে। 

জাদু ভিশনের মালিকানা ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের মেয়র প্রয়াত আনিসুল হকের ছেলে নাভিদুল হকের।

জাদু ভিশন লিমিটেডের প্রধান নির্বাহী কুনাল দেশমুখ বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “জাদু ভিশন কোনো প্রকার সাবস্ক্রিপশন চার্জ বৃদ্ধি করেনি এবং তারা এ বিষয়ে গুজব ছড়াচ্ছে।

“এ সংগঠনের নেতৃবৃন্দ চাইছে সংগঠনের ব্যবসায়ীদের থেকে টাকা সংগ্রহ করে আমাদের বিল দেবে, যা সুস্থ ব্যবসায়িক চর্চা হতে পারে না। তারা গত জুনের পর কোনো বিল দেয়নি।”

কুনাল দেশমুখ বলেন, “বেশ কয়েকটি কেবল অপারেটরের কাছ থেকে জাদু ভিশনের বিপুল পরিমাণ বকেয়া পাওনা রয়েছে, তারা তা পরিশোধ না করতেই এ আন্দোলনের ডাক দিয়েছে।”

জাদু ভিশন সরকারের ভ্যাট ট্যাক্স দিয়েই ব্যবসা পরিচালনা করে আসছে জানিয়ে কুনাল বলেন, “তারা ১০০ জনকে চ্যানেল সরবরাহ করলেও আমাদের বিল দেওয়ার সময় দেখানো হয় মাত্র ২টি। এ কারণে আমরা প্রকৃত বিল থেকে বঞ্চিত হচ্ছি।”

ঢাকার বাইরে কোনো ধরনের সংযোগ জাদু ভিশন দেয়নি বলেও দাবি করেন কুনাল।

কেবল অপারেটর এবং পে-চ্যানেল সরবরাহকারীর মধ্যে সরকার অনুমোদিত একটি সার্বজনীন সাবস্ক্রিপশন চুক্তি সরকার থেকে বাধ্যতামূলক করে দেওয়ার দাবি জানিয়ে কুনাল বলেন, “এটি হলে সুস্পষ্ট চুক্তির মাধ্যমে ব্যবসা পরিচালনা হলে কোনো বিভ্রান্তি থাকবে না।”