ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীদের সহযোগিতায় ব্যাংকগুলোকে আন্তরিক হতে বললেন প্রধানমন্ত্রী

করোনাভাইরাস মহামারীতে সরকার ঘোষিত প্রণোদনা প্যাকেজে স্বল্প সুদে ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীদের আর্থিক সহযোগিতা দেওয়ার পদক্ষেপ নেওয়া হলেও এই ব্যাপারে বেসরকারি ব্যাংকগুলোকে ‘আরেকটু’ আন্তরিক হওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

নিজস্ব প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 28 Oct 2020, 11:29 AM
Updated : 16 Dec 2021, 07:21 PM

বুধবার সকালে প্রধানমন্ত্রীর ত্রাণভাণ্ডারে বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন অব ব্যাংকসের (বিএবি) দেওয়া কম্বল গ্রহণ অনুষ্ঠানে গণভবন থেকে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে যুক্ত হয়ে তিনি ব্যাংকের উদ্যোক্তাদের উদ্দেশে বলেন, “আমি জানি একটু আপনাদের চাপ পড়ে বেশি, খরচ পড়ে বেশি। সরকারিভাবে আমরা দিয়ে যাচ্ছি কিন্তু বেসরকারি ব্যাংকগুলোও যদি এদিকে এগিয়ে আসেন…।

“শুরুতে হয়ত একটু সমস্যা হবে, পরবর্তীতে এরা যখন ব্যবসা-বাণিজ্যটা চালু করতে পারবে তখন বেসরকারি ব্যাংকগুলোই কিন্তু লাভবান হবে, এতে কোনো সন্দেহ নেই। সেভাবে প্রত্যেকটা ক্ষেত্রে আপনারা যেভাবে পাশে দাঁড়ান আমি বলব যে, মানুষের পাশে দাঁড়াতে হবে।”

মুজিববর্ষে দেশে কেউ গৃহহীন, ভূমিহীন থাকবে জানিয়ে শেখ হাসিনা তিনি বলেন, “আপনাদের নিজ নিজ এলাকায় যদি কেউ ভূমিহীন থাকে, গৃহহীন থাকে, আপনারাও তাদের কিছু ঘরবাড়ি তৈরি করে দিতে পারেন। আমরা সরকারের পক্ষ থেকে দিচ্ছি, আবার বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানও দিচ্ছে। আপনারাও সেভাবে একটু সহযোগিতা করতে পারেন, মানুষের পাশে দাঁড়াতে পারেন।”

আওয়ামী লীগ সরকার দেশের উন্নতির কথা বিবেচনায় নিয়ে এতো বেসরকারি ব্যাংক করার অনুমতি দিয়েছে বলে উল্লেখ করেন প্রধানমন্ত্রী।    

“আমি যখন সরকারে আসি তখন থেকেই প্রাইভেট ব্যাংকগুলো দেবার জন্য আমরা পদক্ষেপ নেই। অনেক বাধা বিঘ্ন ছিল। অনেকেরই আপত্তি ছিল। অনেক আন্তর্জাতিক সংস্থা আপত্তি জানিয়েছে যে, বাংলাদেশে আবার এত ব্যাংক দিয়ে কী হবে? বরং ব্যাংকের শাখাগুলো যেগুলো লাভজনক হয় সেগুলো বন্ধ হয়ে যায়, সেই ধরনের পরামর্শ।

“কিন্তু আমরা কিন্তু সেটা শুনিনি। কারণ দেশটা আমাদের। আমরা জানি দেশের উন্নতিটা কিভাবে করতে হয়। আর বিশেষ করে আওয়ামী লীগ এই ব্যাপারে সব সময়ই সচেতন। সেই কারণে আমি ব্যাপকভাবে এই প্রাইভেট ব্যাংক দিয়ে দিয়েছি।এতে একদিকে মানুষের কর্মসংস্থান হচ্ছে, অপরদিকে সামাজিক নিরাপত্তমূলক যে সহযোগিতা, এটা কিন্তু প্রাইভেট সেক্টরে যত ব্যাংক আছে…তাছাড়া আমাদের সরকারি ব্যাংক তো পড়েই থাকে। তারা কিন্তু করে যাচ্ছে। যার ফলে আমি বলব যেকোনো দুর্যোগে মানুষের পাশে দাঁড়ানোটা আমাদের জন্য সহজ হচ্ছে।”

সরকার ব্যাংক ব্যবহারে উৎসাহিত করছে জানিয়ে তিনি বলেন, “রেমিটেন্সের ক্ষেত্রে আপনারা জানেন আমরা দুই শতাংশ প্রণোদনা বৃদ্ধি করে দেওয়াতে এখন কিন্তু সরাসরি ব্যাংকের মাধ্যমে এই টাকাটা আসছে। তাতে আমার যেমন রেমিটেন্স বাড়ছে আবার ব্যাংকেরও কাজ বাড়ছে। তারাও সুযোগ পাচ্ছেন।”

সরকার দেশে একশটা অর্থনৈতিক অঞ্চল গড়ে তুলছে উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, “যেখানে ব্যাপকহারে বিনিয়োগের সুযোগ আছে। সেই সাথে আমাদের রিজার্ভ এখন ৪০ বিলিয়ন। আমাদের টার্গেট আছে আমরা ৫০ বিলিয়ন এ পৌঁছাতে চাই। অন্তত স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী আমরা উদযাপন করব…অন্তত ৫০ বিলিয়ন যেন হয়।

“কিন্তু সেই সাথে আমাদের অনেক উন্নয়ন কাজ আমরা অন্যের কাছ থেকে ধার না এনে নিজেদের অর্থায়নে যেন করতে পারি বা আমাদের ব্যাংকের থেকে লোন দিয়েই কাজ করাতে পারি। অন্তত কিছু কাজ আমরা নিজেরা করব। তারও একটা ব্যবস্থা নিয়েছি। খুব তাড়াতাড়ি এই ব্যাপারে বিস্তারিত আপনারা জানতে পারবেন। আমি সিদ্ধান্ত দিয়েছি...এটার এখন একটা প্রস্তুতি চলছে।”

তিনি বলেন, “আমি সব সময় মনে করি যে, একটা দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নের ক্ষেত্রে সরকারের যেমন দায়িত্ব কাজ করবে, সাথে সাথে বেসরকারি খাতটা কিন্তু সব থেকে বেশি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারে। সেজন্য আপনারা দেখেছেন আমি সরকারে আসার পর থেকে, সেই ১৯৯৬ সালে যখন সরকারে এসেছি তখন থেকেই কিন্তু বেসরকারি খাতকে অত্যন্ত গুরুত্ব দিয়ে যাচ্ছি এবং সব ধরনের কাজ করার ব্যাপক সুযোগ আমরা করে দিচ্ছি। বিভিন্ন ক্ষেত্র প্রস্তুত করে দিচ্ছি। কাজেই আপনারা সেভাবে দায়িত্ব পালন করবেন সেটাই আমরা চাই।”

করোনাভাইরাস মহামারী থেকে দেশের অর্থনীতিকে রক্ষায় সরকারের নেওয়া বিভিন্ন পদক্ষেপের কথা তুলে ধরার পাশাপাশি ইউরোপসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশে মহামারীর প্রাদুর্ভাব আবারও দেখা যাচ্ছে উল্লেখ করে সবাইকে আগের চেয়ে বেশি সচেতন থাকারও আহ্বান জানান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।  

শুরুতে নতুন এই ভাইরাস সম্পর্কে বাংলাদেশের মানুষের কোনো ধারণা না থাকলেও সরকার এই ভাইরাস প্রতিরোধে প্রচেষ্টা চালিয়ে আসছে জানিয়ে তিনি বলেন, “এখন আমাদের আগের থেকে সচেতন হতে হবে। এর ফলে আমাদের অর্থনীতির উপর যেন কোনো রকম প্রভাব না পড়ে, মানুষের জীবনযাত্রা যেন ঠিক থাকে আর আমাদের অর্থনীতির চাকাটা যেন সচল থাকে, এটাই আমরা চাই।”

প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে মুখ্য সচিব আহমদ কায়কাউস কম্বল গ্রহণ করেন।