শেষ হল নারী উদ্যোক্তারা দুই দিনের ভার্চুয়াল সম্মেলন

অনলাইন বিপণন খাতকে আরও শক্তিশালী করতে নারী উদ্যোক্তাদের সংগঠন উইমেন অ্যান্ড ই-কমার্স ফোরাম বা উই এর আয়োজনে দুই দিনব্যাপী সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়ে গেল।

নিজস্ব প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 25 Oct 2020, 12:12 PM
Updated : 25 Oct 2020, 12:12 PM

শনিবার শুরু হওয়া এই সামিটে দেশীয় উদ্যোক্তা, ব্যবসায়ী নেতা, অনলাইন ব্যবসা বিশেষজ্ঞদের পাশাপাশি বিদেশি উদ্যোক্তারাও তাদের অভিজ্ঞতা তুলে ধরেন।

ই-কমার্সে প্রযুক্তির ব্যবহার নিয়ে একটি অধিবেশনের মধ্য দিয়ে রোববার শুরু হয় দ্বিতীয় দিনের আয়োজন।

এতে বাংলাদেশ উইমেন ইন টেকনলজি এর সভাপতি লাফিফা জামাল বলেন, “আমরা সত্যিকারে ই-কমার্স শুরু করতে পারিনি। একটা হাইব্রিড মডেলে এগিয়ে যাচ্ছি। শতভাগ প্রস্তুতি নিয়ে শুরু করতে গেলে হয়তো শুরু করাই হবেনা। এখন আমরা শুরু করে দিলাম। একদিন হয়তো প্রস্তুতি হয়ে যাবে।

“এখন ফেইসবুকের থ্রোতে আমরা ব্যবসাটা শুরু করেছি। ছোট পরিসরের জন্য এটা ঠিক আছে। কিন্তু বড় পরিসরে শুরু করলে ওয়েবসাইট প্রয়োজন হবে। আবার অনেক উদ্যোক্তা রয়েছেন যাদের কখনও ওয়েবসাইটের প্ল্যাটফর্মের প্রয়োজন হবেনা। ফেইসবুকই তাদের ছোট পরিসরের ব্যবসার জন্য যথেষ্ট হবে।”

ভবিষ্যতে ব্যবসা সহজ করার জন্য কাস্টমার ডেটার ওপর গুরুত্ব দিয়ে তিনি বলেন, “কোন পণ্যের জন্য কোন কাস্টমার রয়েছে সেটা নিশ্চিত হতে পারলে মার্কেটিংটা সহজ হবে। লক্ষাধিক নারী উদ্যোক্তা রয়েছেন। অনেকে মাত্র শুরু করেছেন, অনেকে অনেক দূর এগিয়ে গেছেন। তাদের ট্রেইন করার উদ্যোগ নেওয়া দরকার। প্রপার পলিসি দরকার। এগুলো নিয়ে কাজ করতে হবে।”

দ্বিতীয় অধিবেশনে ‘ডেলিভারি চ্যালেঞ্জ: আর উই রেডি ফর দ্য নেক্স ফাইভ ইয়ার’ শিরোনামে একক বক্তব্য রাখেন এটুআইয়ের হেড অব ই-কমার্স রেজওয়ানুল হক জামি। তিনি ই-কমার্স খাতের পরিবহন ব্যবস্থাপনা ও এর ভবিষ্যৎ নিয়ে বক্তব্য রাখেন।

জামি বলেন, “এখনও পূর্ণ সেবা দেওয়ার সক্ষমতা নিয়ে কোনো পরিবহন খাত তৈরি হয়নি। দেশে এখনও অনেক উদ্যোক্তা ভালো মানের পরিবহন সেবা খোঁজেন । তাই বেসরকারি খাতকেই এই শূন্যতা পূরণে এগিয়ে আসতে হবে। বিচ্ছিন্ন পরিবহন ব্যবস্থাকে সমন্বয়ের মাধ্যমে এই সমস্যার কিছুটা সমাধান করা সম্ভব।”

ই-কমার্সে ইন্ডাস্ট্রিতে স্থানীয় পণ্যের সম্ভাবনার বিষয়ে বক্তব্য রাখেন ফ্যাশন ডিজাইনার বিবি রাসেল।

তিনি বলেন, “বাংলাদেশের সবগুলো আদি শিল্পই অনেক বেশি সুন্দর। কিন্তু আমাদেরকে এগুলো যথানিয়মে চিনতে হবে। আমি নিজের অর্থায়নে কিছু মানুষ নিয়ে কাজ করে এমনটা বুঝেছি।”

সম্মেলনের প্রথম দিনে সাপ্লাই চেইন সমস্যা নিয়ে চালডাল ডটকমের প্রতিষ্ঠাতা সিইও ওয়াশিম আলিম বলেন, “ছয় হাজার পণ্য নিয়ে কাজ করি। আগে দৈনিক দুই হাজারের মতো অর্ডার আসলেও এখন মহামারীকালে গড়ে ছয় হাজার অর্ডার আসছে। ফলে ডেলিভারি বা প্যাকেজিং আমাদের জন্য একটা সমস্যা হয়ে দাঁড়িয়েছে। যতটা সম্ভব ব্যয় সঙ্কোচন রেখে আমরা এই কাজগুলোর করার চেষ্টা করছি। কারণ ই-কমার্সে লাভের মার্জিন কম।

“সাপ্লাই চেইনের ধারাবাহিকতা ধরে রাখার জন্য বিশ্বাসযোগ্যতা অর্জন একটা বড় বিষয়। সে কারণে আমরা অনেক সময় লস দিয়ে হলেও কথা রাখার চেষ্টা করি। আবার পণ্যের ভিন্নতার ক্ষেত্রেও সাপ্লাই ব্যবস্থাপনা আলাদা হয়।”

দুই দিনের আয়োজনে ডিজিটাল পেইমেন্ট, নারী ও উদ্যোক্তাদের জন্য নীতিগত সহায়তা, সামাজিক ব্যবসা ও উই প্লাটফর্মের ভূমিকা, তৃণমূলের উদ্যোক্তাদের জন্য ব্যাংক ও ভেঞ্চার ক্যাপিটাল সুবিধাসহ বিভিন্ন বিষয়ে আলোচনা হয়।

সম্মেলন উপলক্ষ্যে ১০ জন নারী উদ্যোক্তাকে সম্মাননা দেওয়া হয়।

এর আগে শনিবার প্রথমদিনের আয়োজনে জাতীয় সংসদের স্পিকার শিরীন শারমিন চৌধুরী, আইসিটি প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলক, সংসদ সদস্য মেহের আফরোজ চুমকি, ই-ক্যাব সভাপতি শমী কায়সার প্রমুখ বক্তব্য রাখেন।

দেশের প্রান্তিক অঞ্চলের নারী উদ্যোক্তাদের হাতে তৈরি বিভিন্ন ধরনের পণ্যের সঙ্গে কোনো স্থানের ক্রেতার সঙ্গে পরিচিতি ঘটিয়ে দিতে তিন বছর আগে যাত্রা শুরু করেছিল ফেইসবুকভিত্তিক সংগঠন উইমেন অ্যান্ড ই-কমার্স ফোরাম বা উই। প্রযুক্তিখাতের সুপরিচিত উদ্যোক্তা নাসিমা আক্তার নিশা সর্বপ্রথম এই উদ্যোগটি সামনে নিয়ে আসেন।

উই-এর গ্রুপে কেবল দেশীয় পণ্যগুলোর পরিচিতি নিয়ে পোস্ট করা যায়। পরবর্তীতে ক্রেতারা উদ্যোক্তার সঙ্গে যোগাযোগ করে দরদাম ও লেনদেন করতে পারেন।

নিশা বলেন, উই তিন বছর পূর্ণ করেছে। ইতোমধ্যেই এটি ১০ লাখ মানুষের একটি প্লাটফর্মে রূপ নিয়েছে। উই কাজ করছেন সম্পূর্ণ দেশে তৈরি পণ্যের বিপণন নিয়ে। দেশীয় ঐতিহ্যের অনেক পণ্যই হারিয়ে যেতে বসেছিল। এই প্লাটফর্মের মাধ্যমে তার অনেকগুলোই এখন আবার পরিচিতি পাচ্ছে। শীতল পাটি, তালপাখা, মাটির তৈজষ এগুলো হারতে বসেছিল।