মাংস আমদানি বন্ধ করার দাবি খামারিদের

বিদেশ থেকে মাংস আমদানি বন্ধ করে দেশের খামারিদের বাঁচাতে সরকারের কাছে দশ দফা দাবি জানিয়েছে বাংলাদেশ ডেইরি ফার্মারস অ্যাসোসিয়েশন।

নিজস্ব প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 25 Oct 2020, 09:00 AM
Updated : 25 Oct 2020, 09:00 AM

রোববার জাতীয় প্রেসক্লাবে এক সংবাদ সম্মেলনে সংগঠনটির নেতারা বলেছেন, দেশে গবাদিপশুর মাংস উদ্বৃত্ত থাকার পরও বিদেশ থেকে আমদানি হওয়ায় তাদের ব্যবসা ‘ধ্বংস হতে বসেছে’।

গাবতলী গরুর হাট গরু ব্যবসায়ী সমিতির সাবেক সাধারণ সম্পাদক মজিবুর রহমান সংবাদ সাম্মেলনে বলেন, ঢাকাসহ সারা দেশে হোটেল রেস্তোরাঁয় এখন বিদেশ থেকে আমদানি করা মাংস খাওয়ানো হয়। অন্যদিকে তারা গ্রাম থেকে এবং বিভিন্ন খামার থেকে গরু কিনে এনে দিনের পর দিন বাজারে বসে থাকেন, বিক্রি হয় না। অনেক সময় কম দামেও গরু বিক্রি করতে হয়।

“আমাদের তো অন্য কোনো কাজ জানা নেই, সারা জীবন ধরেই গরু ব্যবসার সঙ্গে জড়িত রয়েছি। আমাদের ব্যবসা এখন ধ্বংস হয়ে যাচ্ছে। গো খাদ্যের দাম কমালে আমরা কম দামে গরু কিনতে পারব। আমাদের ব্যবসাটা বাঁচান।”

বাংলাদেশ ডেইরি ফার্মারস অ্যাপসোসিয়েশনের যাত্রাবাড়ী থানার সভাপতি এস এম শাহনুর বলেন, খামারিদের সবাইকে গরুর খাবার কিনেই খামার চালাতে হয়। গো খাদ্যের দাম বেশি হলে খামারিরা ক্ষতিগ্রস্ত হন।

“তখন গরুর দাম বেশি হয়ে যায়। গরু উৎপাদনে আমাদের বেশি খরচ পড়ায় মাংস বেশি দামে বিক্রি করতে হয়। কিন্তু বিদেশি মাংস আরও কম দামে পেয়ে আমাদের কাছ থেকে আর নিতে চায় না। ফলে আমরা খামারিরা ক্ষত্রিগ্রস্ত হচ্ছি। গো-খাদ্যের দাম কমানোর জন্য সরকারের কাছে আমরা দাবি জানাচ্ছি।”

হিমায়িত মাংস আমদানি বন্ধে সরকারের সরাসরি হস্তক্ষেপ চেয়ে চট্টগ্রামের ব্যবসায়ী ওয়াসিব জামান বলেন, “আমরা মানসম্মত গরু উৎপাদন করছি। অথচ বিদেশ থেকে হিমায়িত মাংস আমদানি করে একদিকে সাধারণ মানুষের ক্ষতি করছে, অপরদিকে আমরা যারা খামারি আছি, তারা ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছি। বিদেশ থেকে হিমায়িত মাংস আমদানি বন্ধ করা হোক।”

ঢাকা ও ঢাকার বাইরে থেকে আসা খামারিদের উপস্থিতিতে এই সংবাদ সম্মেলনে সংগঠনের সভাপতি মোহাম্মদ ইমরান হোসেন তাদের দশ দফা দাবি পড়ে শোনান।

১. টিসিবির মাধ্যমে পশুখাদ্য আমদানি করে প্রতিটি উপজেলায় খামারিদের মাঝে দ্রুত বিতরণের ব্যবস্থা করা

২. দেশের মাংস শিল্পকে রক্ষার জন্য ভারত থেকে হিমায়িত মাংস আমদানি বন্ধ করা

৩. বাণিজ্যিক হারের বদলে কৃষিখাতের হারে পশুর খামারের বিদ্যুত বিল নির্ধারণ

৪. এই শিল্পে বিশ বছর আয়কর বেয়াত দেওয়া

৫. এন্টি ডাম্পিং ট্যাক্স আরোপের মাধ্যমে গুঁড়া দুধ আমদানিতে শুল্ক হার বাড়িয়ে শতভাগ করা

৬. আমদানি কমিয়ে দেশে সরকারি ও বেসরকারি পর্যায়ে গুঁড়া দুধের প্ল্যান্ট নির্মাণ করে দেশীয় শিল্পকে অগ্রাধিকার দেওয়া

৭. আমদানি করা নিম্নমানের কাঁচামাল দিয়ে অস্বাস্থ্যকর কনডেনসড মিল্ক তৈরি বন্ধ করে দেশীয় দুধ ও কাঁচামাল দিয়ে কনডেনসড মিল্ক তৈরি

৮. খামারিদের বিনা জামানতে কম সুধে ঋণ সুবিধা দেওয়া

৯. ডেইরী বোর্ড গঠন

১০. পশু ভ্যাকসিন, ওষুধ এবং চিকিৎসা সেবা সহজতর করা এবং বিনামূল্যে দেওয়া

বাংলাদেশের আমদানি নীতি অনুযায়ী, শূকর ছাড়া অন্য কোনো পশুর হিমায়িত মাংস আমদানিতে কোনো নিষেধাজ্ঞা নেই। প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের অনুমতি নিয়ে কয়েকটি শর্ত পূরণ করে ৩৩ শতাংশ শুল্ক দিয়ে হিমায়িত মাংস আমদানি করা যায়।

শর্ত হল, মোড়কের গায়ে উৎপাদনের তারিখ ও মেয়াদোত্তীর্ণের তারিখ থাকতে হবে, মাংস অ্যান্টিবায়োটিক বা রোগমুক্ত কি না- সেই সনদ থাকতে হবে এবং বন্দরে খালাসের সময় সেই মাংস পরীক্ষা করবে বাংলাদেশি কর্তৃপক্ষ। 

গতবছর প্রতি মাসে গড়ে পাঁচ লাখ ১৬ হাজার কেজি মাংস আমদানি হয়েছে দেশে। এর বেশিরভাগটাই আসে পাশের দেশ ভারত থেকে। এছাড়া চীন, মিয়ানমার ও নেপাল থেকেও আমদানি হয়।

ট্যারিফ কমিশনের তথ্য অনুযায়ী, আমদানি করা এসব হিমায়িত মাংসের দাম স্থানীয়ভাবে উৎপাদিত মাংসের বাজারমূল্য থেকে অর্ধেক। ফলে হোটেল রেস্তোরাঁগুলো বেশি লাভের জন্য দেশি গরুর মাংসের বদলে আমদানি করা মাংসই বিক্রি করছে।

অথচ প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের হিসাবে, প্রতিবছর দেশে প্রায় আড়াই লাখ টন মাংস উদ্বৃত্ত হয়। কোরবানির চাহিদা এখন দেশে উৎপাদিত পশু দিয়েই শতভাগ পূরণ হয়।

সে কারণে দেশের খামারিদের স্বার্থ রক্ষায় বিদেশ থেকে হিমায়িত গরুর মাংস আমদানি না করার দাবি জানিয়ে আসছে এ খাত সংশ্লিষ্ট সংগঠনগুলো।

এ বিষয়ে একটি রিট আবেদনের প্রেক্ষিতে গতবছর হাই কোর্টের একটি বেঞ্চ রুলও জারি করে, যা এখনও শুনানির অপেক্ষায় রায়েছে।