পেঁয়াজ বন্ধের এক মাস আগে জানান: ভারতীয় হাই কমিশনারকে বাণিজ্যমন্ত্রী

ভারত থেকে পেঁয়াজ রপ্তানি বন্ধের এক মাস আগে বাংলাদেশকে নোটিশ দেওয়ার অনুরোধ জানিয়েছেন বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি।

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 22 Oct 2020, 10:48 AM
Updated : 22 Oct 2020, 12:11 PM

বৃহস্পতিবার সচিবালয়ে নবনিযুক্ত ভারতীয় হাই কমিশনার বিক্রম কুমার দোরাইস্বামীর সাথে সৌজন্য সাক্ষাৎ শেষে মন্ত্রী সাংবাদিকদের এ তথ্য জানান।

হাই কমিশনারের সঙ্গে আলোচনার বিষয়ে বাণিজ্যমন্ত্রী বলেন, “আমাদের একটাই উদ্দেশ্য, আগামী তিন বছরের মধ্যে যেন পেঁয়াজে স্বয়ংসম্পূর্ণ হই। ভারত তাদের লোককে না খাইয়ে আমাদের দেবে না। তারপরও ভারতের কাছে আমাদের যেটা দাবি, রপ্তানি বন্ধের নোটিশ যদি আমরা এক মাস আগে পাই তাহলে আমরা অন্যান্য দেশ থেকে আমদানি করার সুযোগটা পাব।

“হঠাৎ বন্ধ করে দেওয়াটা সমস্যা তৈরি করে। তাই আমি হাই কমিশনারের কাছে অনুরোধ জানাচ্ছি যে, রপ্তানি বন্ধের এক মাস আগে যেন আমাদের নোটিশ দেওয়া হয়। ৩০ দিন আগে জানালে বিকল্প বাজার থেকে আনতে সুবিধা হয়।”

গত ১৪ সেপ্টেম্বর ভারত পেঁয়াজ রপ্তানি বন্ধের ঘোষণা দেওয়ার পর থেকেই বাংলাদেশে চড়তে থাকে নিত্য প্রয়োজনীয় এই পণ্যটির দাম।

আভ্যন্তরীণ বাজারে মূল্য বৃদ্ধি ও মজুদে ঘাটতির কারণে গত বছর সেপ্টেম্বরে প্রথমে পেঁয়াজের রপ্তানি মূল্য বৃদ্ধি এবং পরে রপ্তানি বন্ধ করেছিল ভারত। এরপর বাংলাদেশের বাজারে হু হু করে বাড়তে থাকে পেঁয়াজের দাম, ৫০-৬০ টাকা কেজি দামের পেঁয়াজ বিক্রি হয় ২৫০-৩০০ টাকায়।

পেঁয়াজের দাম কবে নাগাদ স্বাভাবিক হবে এমন প্রশ্নের জবাবে বাণিজ্যমন্ত্রী বলেন, “আমাদের বছরে ৮ থেকে ৯ লাখ টন ঘাটতি থাকে, সেটা সেপ্টেম্বর থেকে ফেব্রুয়ারি মাসে আসে। ভারতের পেঁয়াজের বড় অংশ এ সময় আসে।

“ভারত থেকে বন্ধ। তাই তুরস্ক, ইরান, চীন, মিয়ানমার থেকে আমদানি করতে হচ্ছে। আমদানি খরচ পড়ে ৪৫ টাকা কেজি, এরপর ৫ থেকে ৬ টাকা ভ্যাট রয়েছে। ফলে পাইকারিতে ৫০ টাকা পড়ে। তাই ৬০ থেকে ৬৫ টাকার নিচে আমদানি করা পেঁয়াজ বাজারজাত করা যাবে না।

“আমরা খুব চেষ্টা করছি ৬০ টাকার নিচে রাখতে, যাতে মিনিমাম লাভ করা যায়। আমদানি হলে ৫৫ টাকার নিচে কোনো অবস্থাতেই খরচ ফেলা যাবে না আগামী বছর পর্যন্ত।”

দাম বৃদ্ধিতে দেশের কৃষকরা পেঁয়াজের দাম পাচ্ছে দাবি করে মন্ত্রী বলেন, “দাম বৃদ্ধিতে মানুষের কষ্ট হচ্ছে এটা খারাপ দিক, তবে ভালো দিক হল আমাদের উৎপাদকরা কিন্তু টাকা পাচ্ছে। তারা ৩০ থেকে ৩৫ টাকা পাচ্ছে, যাতে সামনে আরও বেশি করে উৎপাদন করতে উৎসাহী হবে। এতে করে আমরা আগামী তিন বছরের মধ্যে পেঁয়াজে স্বনির্ভরতা অর্জন করতে পারব।

“গ্রীষ্মকালীন পেঁয়াজ কীভাবে উৎপাদন করা যায় সেটা নিয়ে কাজ করছে কৃষি মন্ত্রণালয়। আশা করছি, বছরের মাঝামাঝি যদি আমরা নতুন এই পেঁয়াজটা আনতে পারি তাহলে আমাদের লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে তেমন কোনো সমস্যা হবে না।”

বাণিজ্যমন্ত্রী বলেন, “আমাদের যে শিক্ষা হয়েছে যে, ভারত যে কোনো সময় পেঁয়াজ রপ্তানি বন্ধ করে দিতে পারে যদি তাদের সংকট হয়। আমরা এটা শিখেছি যে, আমাদের স্বনির্ভর হতে হবে। আমাদের সকল চেষ্টা গত বছর থেকে শুরু করেছি যাতে ভারত বা কোনো দেশের উপরে নিত্যপণ্যের জন্য নির্ভরশীল হতে না হয়।”

আলু ও তেলের দাম

আগামী দুই-তিন দিনের মধ্যে আলুর দাম খুচরা পর্যায়ে ৩৫ টাকায় চলে আসবে বলে আশা প্রকাশ করেছেন বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি।

আলুর দাম সরকার কেজিপ্রতি ৩৫ টাকা নির্ধারণ করে দিলেও দাম এখনও বেশি হওয়ার বিষয়ে সাংবাদিকদের প্রশ্নে তিনি বলেন, “এটা আমরা বাণিজ্য মন্ত্রণালয় নিয়ন্ত্রণ করি না, এটা কৃষি মন্ত্রণালয় নিয়ন্ত্রণ করে।”

তবে পরিস্থিতির প্রয়োজনে বাণিজ্য মন্ত্রণালয় টিসিবির মাধ্যমে বিক্রি শুরু করেছে বলে জানান টিপু মুনশি।

“আমরা ইচ্ছে করেই এসেছি যে টিসিবির মাধ্যমে ২৫ টাকা দরে বাজারে আলু দিচ্ছি ভোক্তাদের সহযোগিতার জন্য।”

আলুর দাম কমার আশা প্রকাশ করে তিনি বলেন, “কৃষি মন্ত্রণালয় সিদ্ধান্ত নিয়েছে দামের বিষয়ে। গতকালকে দাম কোল্ডস্টোরেজ যেটা ৩৫-৩৬ টাকা ছিল, সেটা আজ ২৮ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। যেটা ২৭ টাকা নির্ধারণ করা হয়েছিল।

“আমরা খুব আশাবাদী, আগামী দুই তিন দিনের মধ্যে আলুর দাম ৩৫ টাকায় চলে আসবে। যদিও ব্যাপারটা কৃষি মন্ত্রণালয় দেখে।”

বৃহস্পতিবার সকালে ভোজ্য তেল ব্যবসায়ীদের সঙ্গে বৈঠকের বিষয়ে বাণিজ্যমন্ত্রী জানান, “এমআরপি তেলের উপর আছে আমরা যেটা বলেছি ওই দামটা যেন ঠিক থাকে তা যেন বাড়তি না হয়। লুজ তেলটার যে দাম সেটার দামটা ২ টাকা কমানোর কথা তারা ঘোষণা করে গেছেন।”

তিনি বলেন, “বিশ্ব বাজারে তেলের দামটা বেড়েছে । আমাদের আমদানি করতে হয় তাই আন্তর্জাতিক বাজারে তেলের দাম বেড়ে গেলে আমরাও সেই পথের পথিক হই, সেখানে সমস্যাটা। তারপরও আমরা চাপ দিয়েছি তারা ২ টাকা করে প্রতি লিটার কমানোর আশ্বাস দিয়ে গেছে।”