লবণাক্ত সাবরাংয়ের জন্য মিঠাপানি প্রকল্প

অধিক লবণাক্ততার বাধা দূর করে বিনিয়োগ পরিবেশ তৈরি করতে কক্সবাজারের সাবরাং ও জালিয়ার দ্বীপকে ঘিরে মিঠাপানি সরবরাহের বিশদ পরিকল্পনা হাতে নিয়েছে বাংলাদেশ অর্থনৈতিক অঞ্চল কর্তৃপক্ষ- বেজা।

ফয়সাল আতিক নিজস্ব প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 13 Oct 2020, 09:02 PM
Updated : 13 Oct 2020, 09:02 PM

প্রায় এক বছর গবেষণা চালিয়ে লবণাক্ত কক্সবাজারের উখিয়া উপজেলার হোয়াইখং নামক পাহাড়ি অঞ্চলে মিলেছে মিষ্টি পানির সন্ধান। সেখান থেকে প্রায় ৫০ কিলোমিটার সরবরাহ লাইনের মাধ্যমে মিনিটে টনে টনে পানি যাবে পর্যটন দ্বীপ সাবরাং ও জালিয়ার দ্বীপে।

ইতোমধ্যেই সাবরাং এলাকায় হোটেল, মোটেল, পার্ক, ডিজনিসহ বিভিন্ন পর্যটন স্থাপনা নির্মাণে এগিয়ে এসেছে দেশ-বিদেশি বিনিয়োগকারীরা। আর জালিয়ার দ্বীপ নামে খ্যাত নাফ ট্যুরিজম পার্কে এখনও ভূমি বরাদ্দ শুরু করেনি বেজা।

প্রতিষ্ঠানটির নির্বাহী চেয়ারম্যান পবন চৌধুরী মঙ্গলবার রাতে বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “লবণাক্ততা পুরো কক্সবাজার এলাকার জন্যই একটা বড় সমস্যা। টেকনাফ উখিযার ওই দিকটায় মানুষ মিঠা পানির দেখা পায় না। আমাদের পরিকল্পনায় থাকা দুটি অত্যাধুনিক ট্যুরিজম এলাকা নির্মাণের ক্ষেত্রে লবণাক্ততা ছিল একটা বড় বাধা। এখন আমরা সেই বাধা দূর করার একটা উপায় বের করতে পেরেছি।”

তিনি আরও জানান, দেশীয় প্রতিষ্ঠান ইনস্টিটিউট অব ওয়াটার মডেলিং (আইডব্লিউএম) গত এক বছর ধরে মিঠা পানির বিভিন্ন উৎস খোজার চেষ্টা করেছে। জালিয়ার দ্বীপ ও সাবরাং এলাকায় মাটির কয়েকশ মিটার গভীরে গেলে পাথরের স্তর শুরু। এছাড়া এসব অঞ্চলে অনেক স্থানে প্রায় এক হাজার মিটার গভীরে গিয়েও মিঠা পানি পাওয়া যায়নি।

“সর্বশেষ পানি পাওয়া গেল উখিয়ার হোয়াইখোং নামক স্থানে। আমরা মোটা পাইপ দিয়ে এই পানিকে নিয়ে যাব সংশ্লিষ্ট পর্যটন এলাকায়। এর পাশাপাশি পানির আরও কিছু বিকল্পের কথা বলেছে আইডব্লিউএম। এমনকি লবণাক্ত পানি পরিশোধন করে কীভাবে মিঠা পানিতে রূপান্তর করা যায় এক পর্যায়ে আমরা সেই প্রযুক্তির দিকেও আগাব। তবে এটা বেশ ব্যয়বহুল হবে বলে আমরা জানতে পেরেছি।”

অর্থনৈতিক অঞ্চল কর্তৃপক্ষ জানায়, বেজার নিজস্ব উদ্যোগে এই পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে। ২০৫০ সাল পর্যন্ত ছয়টি ধাপে বাস্তবায়ন হবে এই প্রকল্প। সব মিলিয়ে সম্ভাব্য খরচ ধরা হয়েছে প্রায় ছয়শ কোটি টাকা। প্রথম ধাপের কাজ হবে ২০২১ সাল থেকে ২০২৪ সাল পর্যন্ত, যাতে খরচ হবে ১৪৪ কোটি টাকা। দ্বিতীয় ধাপে খরচ হবে ৮ কোটি টাকা।

আইডব্লিউএম’র প্রতিবেদনে বলা হয়, উখিয়ার হোয়াইখংয়ে মোট আটটি গভীর নলকূপ স্থাপন করা হবে। থাকবে আন্ডারগ্রাউন্ড রিজার্ভার, বৃষ্টির পানি সংরক্ষণে থাকবে পৃথক ব্যবস্থা। শিল্পের পানি রিসাইক্লিং করে তা পুনরায় ব্যবহারের ব্যবস্থা থাকবে। পাশাপাশি লবণাক্ততা দূর করে পানি ব্যবহারের উপযোগী করার প্রচেষ্টাও থাকবে।

পনি সমস্যা দূর করতে একটি বিশদ প্রকল্প প্রস্তাবনা এদিন বেজার সম্মেলন কক্ষে উপস্থাপন করে আইডব্লিউএম।

এতে দেখানো হয়, হোয়াইখংয়ে প্রতি সেকেন্ডে ১৫ লিটার ক্ষমতা সম্পন্ন মোট আটটি গভীর নলকূপ বসানো হবে। ওয়াটার ফিল্ড থেকে ৫০ কিলোমিটার সঞ্চালন লাইনের সঙ্গে সাবরাংয়ে ১৩ কিলোমিটার এবং নাফ ট্যুরিজম পার্কে ১০ কিলোমিটার বিতরণ লাইন যোগ হবে। এছাড়া সাবরংয়ে তিনটি এবং নাফ ট্যুরিজম পার্কে দুটি আন্ডারগ্রাউন্ড ওয়াটার রিজার্ভার থাকবে। এসব রিজার্ভারে বসানো হবে মোট ছয়টি শক্তিশালী পাম্প। বৃষ্টির পানি ধরে রেখে কাজে লাগানোর জন্য দুটি পার্কে করা হবে মোট ১৮০টি সংরক্ষণাগার।

এছাড়া দুটি পৃথক স্থানে লবণাক্ত পানি শোধন করে মিঠা পানিতে পরিণত করার দুটি সীমিত ব্যবস্থাপনাও থাকবে বলে প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়। ছয়টি ধাপে এই পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করতে প্রায় ছয়শ কোটি টাকা খরচ হবে।

২০২৪ সালে প্রকল্পের প্রথম ধাপ, ২০২৯ সালে দ্বিতীয় ধাপ, ২০৩৪ সালে তৃতীয় ধাপ, ২০৩৯ সালে চতুর্থ ধাপ, ২০৪৪ সালে পঞ্চম ধাপ এবং ২০৪৯ সালের মধ্যে সর্বশেষ ধাপ বাস্তবায়নের পরিকল্পনা রয়েছে।