ভ্যাট গোয়েন্দা ও নিরীক্ষা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক মইনুল খান জানান, মঙ্গলবার ঢাকার দক্ষিণ কর কমিশনারেটে ওই মামলা করা হয়।
“ভ্যাট গোয়েন্দাদের অনুসন্ধানে দেখা যায়, প্রতিষ্ঠানটি গ্রাহকের কাছ থেকে ভ্যাট আদায় করলেও তা যথাযথভাবে সরকারি কোষাগারে জমা দেয়নি। দীর্ঘদিন ধরে ভ্যাট ফাঁকি দিয়ে ব্যবসা পরিচালনা করে আসছিল প্রতিষ্ঠানটি।”
অ্যাডকমের প্রতিষ্ঠাতা ও চেয়ারম্যান গীতি আরা সাফিয়া চৌধুরী ২০০৭-২০০৮ মেয়াদে সেনা নিয়ন্ত্রিত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা ছিলেন।
অভিযোগের বিষয়ে এক লিখিত বিবৃতিতে অ্যাডকম বলেছে, তারা সবসময় ‘স্বচ্ছতার ভিত্তিতে’ আর্থিক লেনদেন পরিচালনা করে এসেছে। এরপরও যদি কোনো বিচ্যুতি থাকে, সে বিষয়ে ‘দ্রুত প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা’ নেওয়া হবে।
ভ্যাট গোয়েন্দা অধিদপ্তরের সহকারী পরিচালক খাজাহ আহমেদ তালুকদারের নেতৃত্বে গত বছরের ১৪ এপ্রিল অ্যাডকমের তেজগাঁও কার্যালয়ে অভিযান চালানো হয়।
সেখান থেকে জব্দ করা ২০১৩-১৪ থেকে ২০১৭-১৮ করবর্ষের নথিপত্রের সঙ্গে অ্যাডকমের দাখিল করা ভ্যাট রিটার্ন মিলিয়ে দেখার পর ফাঁকির বিষয়টি বেরিয়ে আসে বলে অধিদপ্তরের ভাষ্য।
মইনুল খান বলেন, হিসাব করে দেখা গেছে, সেবা বিক্রির বিপরীতে বিজ্ঞাপন বাবদ ২ কোটি ৩৩ লাখ টাকার ভ্যাট ফাঁকি দিয়েছে অ্যাডকম।
এছাড়া স্থাপনার ভাড়ার ওপর ১ লাখ ১১ হাজার টাকা এবং উৎসে কর্তনযোগ্য ৪১ লাখ ৫০ হাজার টাকার ভ্যাট ফাঁকি দিয়েছে বিজ্ঞাপনী সংস্থাটি। এভাবে বিভিন্ন খাতে মোট ২ কোটি ৯৬ লাখ টাকার ভ্যাট তারা সরকারের কোষাগারে জমা দেয়নি।
“আইন অনুসারে, সময়মত ভ্যাট পরিশোধ না করায় মাসিক ২ শতাংশ হারে জরিমানা হিসেবে আদায়যোগ্য অর্থের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ২ কোটি ৮১ লাখ টাকা। এ কারণে বিজ্ঞাপনী সংস্থাটির বিরুদ্ধে সর্বমোট ৫ কোটি ৭৬ লাখ টাকা ফাঁকির অভিযোগে মামলা হয়েছে।”
অ্যাডকমের বিরুদ্ধে মামলাটি নিষ্পত্তির জন্যে ঢাকা দক্ষিণ ভ্যাট কমিশনারেটে পাঠানো হয়েছে। সেইসঙ্গে ওই কোম্পানিকে ‘ঝুঁকিপূর্ণ ব্যবসা’ হিসেবে চিহ্নিত করে কঠোর নজরদারিতে আনার সুপারিশ করা হয়েছে বলে মইনুল খান জানান।
এ বিষয়ে অ্যাডকমের হেড অফ ফাইন্যান্স মাহমুদুল কবির হীরা এক লিখিত বিবৃতিতে বলেন, অভিযোগের বিষয়টি তারা সংবাদ মাধ্যমে জানতে পেরেছেন।
“সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ (ভ্যাট গোয়েন্দার দল) রুটিন কাজ হিসেবে আমাদের কার্যালয় তদন্তে গিয়েছিল। কিন্তু তারা কী তথ্য পেয়েছে তা আমাদের অবহিত করেনি। এমনকি যে অভিযোগ আমাদের বিরুদ্ধে আনা হয়েছে তাও আমাদের জানানো হয়নি।”
বিবৃতিতে বলা হয়, “অ্যাডকমে সর্বদা আর্থিক স্বচ্ছতা বজায় রাখা এবং সমস্ত বিধিবিধান প্রতিপালনকে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে এবং তা নিশ্চিত করার জন্য আমরা কঠোর পরিশ্রম করে আসছি। আমরা বিশ্বাস করি, আজ অবধি নির্দেশিকা অনুসারে সমস্ত ভ্যাট আমরা প্রদান করেছি এবং যদি কোনো বিচ্যুতি আমাদের নজরে আনা হয়, আমরা তা অবিলম্বে সমাধান করব।”
গত ৫ বছরে অ্যাডকম লিমিটেড ২১ কোটি টাকার বেশি ভ্যাট দিয়েছে এবং গত ৪৫ বছরে এই প্রথম এ ধরনের অভিযোগ আনা হয়েছে বলেও দাবি করা হয়েছে বিবৃতিতে।