অনলাইনেও মিলবে টিসিবির পেঁয়াজ

পেঁয়াজের অস্থির বাজার সুস্থির করতে খোলাবাজারের পাশাপাশি ই কমার্স সাইটগুলোর মাধ্যমে অনলাইনেও বিক্রি করবে রাষ্ট্রায়ত্ত সংস্থা টিসিবি।

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 16 Sept 2020, 11:36 AM
Updated : 16 Sept 2020, 05:57 PM

বুধবার সচিবালয়ে পেঁয়াজসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের মজুত ও সরবরাহ পরিস্থিতি নিয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে এতথ্য জানান বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি।

টিসিবি গত ১৩ সেপ্টেম্বর থেকে খোলা বাজারে ৩০ টাকা কেজি দরে পেঁয়াজ বিক্রি করছে। সেখানে একজন ক্রেতা সর্বোচ্চ ২ কেজি করে পেঁয়াজ কিনতে পারছেন।

ভারত রপ্তানি বন্ধ করায় গত বছরের মতো এবারও লাগামহীন হয়ে উঠেছে দেশে পেঁয়াজের বাজার। একদিনের ব্যবধানেই প্রতি কেজি পেঁয়াজের দাম দ্বিগুণ বেড়ে গেছে।

এই পরিস্থিতি সামাল দিতে টিসিবির মাধ্যমে এক লাখ টন পেঁয়াজ আমদানির সিদ্ধান্ত নিয়েছে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়।

টিপু মুনশি বলেন, টিসিবি বছরে ১০ থেকে ১২ হাজার টনের বেশি পেঁয়াজ আমদানি করে না।

“এবার আমরা আগে থেকেই চিন্তা করৃছিলাম ৩০ থেকে ৪০ হাজার টন আনব। ভারত পেঁয়াজ রপ্তানি বন্ধ করে দেওয়ায় আমরা ভাবছি টিসিবির মাধ্যমেই আমরা এক লাখ টন পেঁয়াজ আমদানি করব।”

টিসিবির জনবল সঙ্কটের কারণে বিক্রিতে জটিলতা দেখা দেয় বলে অনলাইনে বিক্রি করবেন বলে জানান বাণিজ্যমন্ত্রী।

“আমরা ই-কর্মাস প্রতিষ্ঠানগুলোকে ব্যবহার করে পেঁয়াজ বিক্রি করব। আমরা খুব আশাবাদী যে মাসে অন্তত ১০ থেকে ১২ হাজার টন পেঁয়াজ ই-কমার্সের মাধ্যমে সাশ্রয়ী মূল্যে বিক্রি করতে পারব।”

বাজার সহনীয় করতে টিসিবির আমদানি করা পেঁয়াজ গত বছরের মতো জেলা প্রশাসনের মাধ্যমে বিক্রির ব্যবস্থা করা হবে বলেও জানান মন্ত্রী।

গত বছর টিসিবির আমদানির বাইরেও বড় বড় ব্যবসায়ীরা যে পেঁয়াজ আমদানি করেছিলেন, সেসব পেঁয়াজও ভর্তুকি দিয়ে বিক্রি করা হয়েছিল।

টিপু মুনশি বলেন, “গতবারের অভিজ্ঞতা এবার আমাদের খুব কাজে লাগছে।

“টিসিবির নিয়ম ভেঙে কিছু নতুন ডিলার নিয়োগ দেওয়ার পাশাপাশি ওএমএস ডিলারদের মাধ্যমে পেঁয়াজ বিক্রি করা হয়েছিল (গতবার)। এবারও এসব পদ্ধতি অনুসরণ করে পেঁয়াজের বাজার নিয়ন্ত্রণে রাখা হবে।”

ই-ক্যাব ‘প্রস্তুত’

সঙ্কটকালীন পরিস্থিতিতে সরকারি বিপণন সংস্থা টিসিবির পেঁয়াজ বিপণনে প্রস্ততি রয়েছে বলে অনলাইন বিপণন ব্যবসায়ীয়দের সমিতি ই-ক্যাব।

বাণিজ্যমন্ত্রীর সিদ্ধান্ত জানার পর বুধবার রাতে এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে ই-ক্যাব তাদের প্রস্তুতির কথা জানায়।

এতে বলা হয়, “সরকার থেকে পেঁয়াজ পেলে ই-কমার্স কোম্পানিগুলো ক্যাম্পেইন শুরু করবে এবং শিগগিরই সরকার নির্ধারিত দাম অনলাইনে পেঁয়াজ বিক্রি শুরু করবে।”

ইতোমধ্যে ই-ক্যাব, বাণিজ্য মন্ত্রণালয় ও টিসিবি যৌথভাবে এসংক্রান্ত একটি নীতিমালা তৈরি করেছে। এর অধীনে একটি সমন্বয় ও নজরদারি কমিটি গঠনের প্রস্তাব করা হয়েছে।

এই কমিটি নির্বাচিত অনলাইন গ্রোসারিশপগুলো বিধি মেনে সরকার নির্ধারিত দামে পেঁয়াজ বিক্রি করছে কিনা তা তদারক করবে। বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের যুগ্ম সচিব এএইচএম সফিকুজ্জামানকে প্রধান করে এই কমিটি প্রস্তাব করা হয়েছে।

কমিটিতে একজন ভোক্তা অধিকার প্রতিনিধি, একজন ই-ক্যাব প্রতিনিধি, একজন অনলাইন শপ প্রতিনিধি ও একজন টিসিবি প্রতিনিধি সদস্য হিসেবে থাকবেন বলে ই-ক্যাবের পক্ষ থেকে জানান হয়।

এছাড়া গ্রাহকদের অভিযোগের বিষয়টি দেখার জন্য ৩ সদস্যের আরেকটা কমিটি গঠনও প্রক্রিয়াধীন।

ই-ক্যাবের সাধারণ সম্পাদক মোহাম্মদ আব্দুল ওয়াহেদ তমাল বলেন, “আমরা ইক্যাব থেকে ইতোমধ্যে করোনাকালীন নিয়মিত সেবা দিয়ে মানুষের পাশে ছিলাম। এছাড়া লকডাউন এলাকায় জরুরি পণ্য সরবরাহ, আমমেলার মাধ্যমে অনলাইনে আম বিক্রয় ও ডিজিটাল কোরবানি হাটের মাধ্যমে গরু বিক্রি করে বাসায় মাংস পৌঁছে দিয়ে একদিকে নিজেরা অভিজ্ঞতা অর্জন করেছি।

“বাণিজ্য মন্ত্রণালয় সব সময় আমাদের সাথে ছিল। আমাদের সাম্প্রতিক উদ্যোগগুলোর সফলতাই আমাদেরকে আজ পেঁয়াজের বাজারে নিয়ে এসেছে।”

প্রাথমিক আলোচনায় সরকারের আমদানি করা পেঁয়াজের ১০ শতাংশ ই-কমার্স প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে সরবরাহ করার প্রস্তুাব করা হয়েছে। প্রয়োজনে এই পরিমাণ আরও বাড়ানোর চিন্তাও করছে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়।

এই কর্মসূচির আওতায় ১০ হাজার টন পেঁয়াজ অনলাইন শপ থেকে বিপণন করা যাবে বলে আশা করছে ই-ক্যাব।