পেঁয়াজ কেনায় লাগাম টানার পরামর্শ বাণিজ্যমন্ত্রীর

ভোক্তারা পেঁয়াজ কেনায় সাশ্রয়ী হলে নতুন সরবরাহ আসার এক মাসের মধ্যে পেঁয়াজের বাজার স্বাভাবিক করার আশ্বাস দিয়েছেন বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি।

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 16 Sept 2020, 11:16 AM
Updated : 16 Sept 2020, 11:28 AM

বুধবার সচিবালয়ে পেঁয়াজসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের সরবরাহ ও মজুদ পরিস্থিতি নিয়ে সংবাদ সম্মেলনে এ কথা বলেন মন্ত্রী।

গত সোমবার ভারত পেঁয়াজ রপ্তানি বন্ধের ঘোষণা দেওয়ার পর থেকেই বাংলাদেশে চড়তে থাকে নিত্য প্রয়োজনীয় এই পণ্যটির দাম।

ভারত রপ্তানি বন্ধ করার পর দুটি কারণে দেশে পেঁয়াজের দাম বাড়ছে জানান মন্ত্রী।

“ভারত পেঁয়াজ রপ্তানি বন্ধ করার সাথে সাথে দেশের ব্যবসায়ীরা সুযোগ নিয়েছে এবং ভোক্তাদের অতিরিক্ত পেঁয়াজ কেনা। যে দুই কেজি কিনত সে ১০ কেজি কিনছে, তাই হঠাৎ করে বাজারে চাপ পড়েছে।”

এ মুহূর্তে দেশে সাড়ে পাঁচ লাখ টন মজুদ রয়েছে জানিয়ে মন্ত্রী বলেন, “আগামী জানুয়ারি নাগাদ ১০ লাখ টন লাগবে, ঘাটতি আছে চার লাখ টন। গত কয়েকদিন ধরে অন্যান্য দেশ থেকে পেঁয়াজ আমদানির প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে।

“আমরা এক মাস সময় পেলে তুরস্ক, মিয়ানমার, চায়না থেকে পেঁয়াজ আমদানি করা যাবে। এ সময়টা যদি সহ্য করি, দেশের পেঁয়াজ দিয়ে চালাই, তাহলে সমস্যা হবে না। একটু সহ্য করতে হবে একমাস।”

টিসিবি প্রয়োজনে এক লাখ টন পেঁয়াজ আমদানি করবে জানিয়ে টিপু মুনশি বলেন, “গতবার যেসব গ্রুপ সহায়তা করেছে তাদের মধ্যে মেঘনা গ্রুপ সহযোগিতার আশ্বাস দিয়েছে আমদানির বিষয়ে। ভারত থেকে বন্ধ হওয়ার আগেই তুরস্ক থেকে পেঁয়াজ আমদানিতে এলসি খোলা হয়েছে।

“মানুষ যেন প্যানিক বাই বন্ধ করে, একমাসের মধ্যে অবস্থা স্বাভাবিক করে ফেলব। দেশে এক থেকে দুই মাস চলার মত যথেষ্ট পেঁয়াজ রয়েছ, একটুখানি ব্যালেন্স করে চললে বিপদ থেকে পার হতে পারব।”

এক মাস পর কত দামে পেঁয়াজ দেওয়া সম্ভব হবে জানতে চাইলে বাণিজ্যমন্ত্রী বলেন, “যদি আপনারা মানুষকে বোঝাতে পারেন ১০ দিন পেঁয়াজ কিনবেন না, আমি কিন্তু কমে খাওয়াতে পারব। যদি বলেন দুই কেজির জায়গায় ১০ কেজি তাহলে আমি কোনো গ্যারান্টি দিতে পারব না। আমি বলছি আমাদের ঘাটতি আছে, একমাসে আমরা বিভিন্ন জায়গা থেকে কালেক্ট করব, এই একটা মাস একটু সাশ্রয়ী হতে হবে।”

গত বছরই একইভাবে ভারত পেঁয়াজ রপ্তানী বন্ধ করেছিল, এটি বাংলাদেশকে চাপে ফেলার কৌশল কিনা জানতে চাইলে মন্ত্রী বলেন, “গতবারও বন্ধ করেছিল তার আগেই তারা মিনিমাম প্রাইস বেঁধে দিয়েছিল, সে সময় ১৫০ রুপিতে বিক্রি হয়েছিল। সে সময় আমাদের অন্য মার্কেট থেকে ট্রাই করতে দেরি হয়েছিল।

“গত ১৫ দিন ধরে দেখছিলাম ভারতে পেঁয়াজের দাম বাড়ছে। সেই থেকে আমাদের টিম আলোচনা করে টিসিবিকে এলসি খোলার জন্য বলেছে। মনে করেছিলাম তারা বন্ধ করবে না, মিনিমাম প্রাইস দেবে। কিন্তু তারা হঠাৎ করে বন্ধ করে দিল।

“ভারত থেকে পেঁয়াজ সস্তায় পাওয়া যায়, একই সময়ে তুরস্ক থেকে আনলে ১০ থেকে ১২ টাকা বেশি হয়, বেশি দাম দিয়ে তো আগে আনা যায় না। যখনই দেখেছি পেঁয়াজের দাম ভারতে বাড়ছে তখনই সাথে সাথে অন্য বাজার থেকে পেঁয়াজ আনার প্রস্তুতি নেওয়া শুরু হয়েছে। ভারতের মনের কথা তো সেপ্টেম্বরে না, অক্টোবরে বন্ধ করবে, সেটা তো আমরা জানি না, তারা বন্ধ করে দিয়েছে আমরা বিপদে পড়েছি।”

ইচ্ছা করলেই পেঁয়াজের দাম বৃদ্ধি করা এবং বাজার তদারকি কেন করা হচ্ছে না জানতে চাইলে তিনি বলেন, “আপনার সবাই বোঝেন দেশের বাজারে আমদানি করা ৫০ শতাংশ দিয়ে চলে, এটি বন্ধ হয়ে গেলে আমাদের চাহিদার অর্ধেক বাজারে নাই। আমাদের কাছে যে স্টক আছে তা বেশি দামে বিক্রি করতে চাচ্ছে। লাখ লাখ রিটেইলার ভোক্তা অধিকার কন্ট্রোল করার চেষ্টা করছে, যখনই চাপ দেই তারা পেঁয়াজ হাওয়া করে দেয়, দোকান বন্ধ করে দেয়। জরিমানা করলেও তারা সুযোগটা নেয়। রিটেইলে যে যার মত বিক্রি করে।”

ভোক্তাদের অস্থির না হওয়ার আহ্বান জানিয়ে মন্ত্রী বলেন, “আমাদের রাষ্ট্রপতি বলেছিলেন জনগণ একটা সিন্ডিকেট করতে পারে না যে ১০ দিন পেঁয়াজ খাব না। জনগণকে ঐক্যবদ্ধ হওয়া দরকার যে পেঁয়াজওয়ালারা সুযোগ নিচ্ছে…১০ দিন কিন্তু পেঁয়াজ ধরে রাখতে পারবে না, পচে যাবে পেঁয়াজ। সবদিকে আমরা চেষ্টা করছি, ভোক্তাদের চেতনাকে বাড়াতে হবে। গতকাল প্রায় ১০ লাখ টাকা জরিমানা করা হয়েছে।”

দুই কেজির বেশি পেঁয়াজ বিক্রি না করার নিয়ম করা যায় কিনা জানতে চাইলে মন্ত্রী তা ভেবে বলেন, “টিসিবি দুই কেজির বেশি বিক্রি করে না। এটি নোট করে রাখা হল এটাও দেখব।”

মিয়ানমার থেকে ১২-১৩ লাখ টন পেঁয়াজ নিয়ে আসতে খুব দ্রুত উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে বলেও জানান মন্ত্রী।