বন্ধ পাটকলের শ্রমিকদের পাওনা পরিশোধ শুরু

ঢাকার করিম জুট মিলসের ১ হাজার ৭৫৯ জন শ্রমিকের পাওনা বুঝিয়ে দেওয়ার মধ্য দিয়ে বন্ধ রাষ্ট্রায়ত্ত পাটকলগুলোর শ্রমিকদের পাওনা পরিশোধ কার্যক্রম শুরু হয়েছে।

নিজস্ব প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 15 Sept 2020, 09:04 AM
Updated : 15 Sept 2020, 09:13 AM

বস্ত্র ও পাট মন্ত্রী গোলাম দস্তগীর গাজী মঙ্গলবার দুপুরে ডেমরার ওই পাটকলে বাংলাদেশ পাটকল করপোরেশন (বিজেএমসি) আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে ৩০ জন শ্রমিকের হাতে সঞ্চয়পত্র তুলে দেন।

আগের ঘোষণা অনুযায়ী, অবসরে পাঠানো শ্রমিকদের মোট পাওনার ৫০ শতাংশ তাদের নামে থাকা ব্যাংক হিসাবে পাঠিয়ে দেওয়া হচ্ছে। আর বাকি ৫০ শতাংশ দেওয়া হচ্ছে সঞ্চয়পত্র আকারে ।

করিম জুট মিলসের অবসায়িত ১ হাজার ৭৫৯ জন শ্রমিকদের পাওনা বাবদ মোট ১৯২ কোটি টাকা; ৬১২ জন অবসরপ্রাপ্ত শ্রমিকদের বকেয়া পাওনা বাবদ ৩৪ কোটি ৩৭ লাখ টাকা; ২ হাজার ৬২৫ জন বদলি শ্রমিকদের পাওনা বাবদ ২৫ কোটি ১১ লাখ টাকাসহ মোট ২৫১ কোটি ৫৮ লাখ কোটি টাকা পরিশোধ করা হয়েছে বলে অনুষ্ঠানে জানানো হয়। 

অবসায়নের আগে যেহেতু দুই মাসের নোটিস দেওয়া হয়নি, সেহেতু ২০০৬ সালের শ্রম আইন অনুযায়ী শ্রমিকদের চলতি বছরের জুলাই এবং অগাস্ট মাসের মজুরি ইতোমধ্যে পরিশোধ করা হয়েছে বলে বিজেএমসি জানিয়েছে।

ধারাবাহিকভাবে লোকসানে থাকা দেশের রাষ্ট্রায়ত্ত ২৬টি পাটকল বন্ধ করে দেওয়ার সিদ্ধান্ত গত ১ জুলাই থেকে কার্যকর হয়। এসব পাটকলের প্রায় ২৫ হাজার কর্মচারীর চাকরি ‘গোল্ডেন হ্যান্ডশেকের’ মাধ্যমে অবসায়নের সিদ্ধান্ত সরকারের তরফ থেকে জানানো হয় তার আগেই।

এসব পাটকলের ২৪ হাজার ৬০৯ জন স্থায়ী শ্রমিকদের পাওনা বাবদ প্রায় ৪ হাজার কোটি টাকা এবং ২০১৩ সালের পর থেকে অবসরে যাওয়া ১০ হাজার ১০৭ জন শ্রমিকের গ্রাচ্যুইটি, প্রভিডেন্ট ফান্ড ও ছুটি নগদায়ন বাবদ পাওনা প্রায় ১ হাজার কোটি টাকাসহ মোট প্রায় ৫ হাজার কোটি টাকা পর্যায়ক্রমে তিন অর্থবছরে পরিশোধের প্রস্তাব করা হয়েছিল শুরুতে।

তবে মহামারী পরিস্থিতি এবং দীর্ঘ দিন বেতন বকেয়া থাকায় আর্থিক সঙ্কটে থাকা শ্রমিকদের কথা বিবেচনা করে তাদের পুরো পাওনা চলতি অর্থবছরে একসঙ্গে পরিশোধের সিদ্ধান্ত দেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

সে সময় বলা হয়েছিল আপাতত বন্ধ রেখে রাষ্ট্রায়ত্ত পাটকলগুলো পাবলিক-প্রাইভেট পার্টনারশিপের (পিপিপি) আওতায় আধুনিকায়ন করে ছয় মাসের মধ্যে নতুন করে চালু করা হবে। অবসরে পাঠানো শ্রমিকদেরও তখন আবার কাজের সুযোগ হবে। 

আধুনিকায়নের পর বন্ধ পাটকলগুলোর ফের চালু করার লক্ষ্যে মিল ও বিজেএমসির অন্যান্য সম্পত্তির ‘যথাযথ ব্যবহার’ কীভাবে নিশ্চিত করা যায়, সেই কর্মকৌশল নির্ধারণ এবং বিজেএমসির সাংগঠনিক কাঠামো পুনর্গঠন করে প্রয়োজনীয় জনবলের বিষয়ে সুপারিশ দিতে সরকার ইতোমধ্যে উচ্চক্ষমতা সম্পন্ন দুটি কমিটি গঠন করেছে।

বস্ত্র ও পাটমন্ত্রী গোলাম দস্তগীর গাজী অনুষ্ঠানে বলেন, “আমরা পিপিপিতে যাব নাকি জিটুজিতে যাব এ নিয়ে অনেকগুলো মিটিং করেছি। বেশিরভাগ আছেন, যারা মিল চালান, তারা লিজ পদ্ধতিতে মিল পরিচালনার পরিকল্পনা করছেন। আমরাও সেভাবে চিন্তাভাবনা করছি।

“এখন আমরা লিজ পদ্ধতিতে যেতে চেষ্টা করছি। কারণ এখন আধুনিক যুগে তৎকালীন ষাট সালের মেশিন দিয়ে চলে না। এখন লাভজনক প্রতিষ্ঠান করতে হলে নতুন মেশিন আনতে হবে। আধুনিকায়ন করতে হবে। কম বিদ্যুতে বেশি প্রোডাকশন করতে হবে। নতুন প্রযুক্তির মাধ্যমে আধুনিকায়ন করে মিলগুলো চালু করব।”

অনুষ্ঠানে জানানো হয়, শ্রমিকদের শতভাগ পাওনা একসঙ্গে পরিশোধের জন্য যাবতীয় পাওনার হিসাব চূড়ান্ত করে ইতোমধ্যে অর্থ মন্ত্রণালয়ে পাঠিয়েছে বিজেএমসি। অর্থ বিভাগ প্রয়োজনীয় নিরীক্ষা শেষে করিম জুট মিলসের শ্রমিকদের পাওনা বাবদ অর্থ ছাড় করায় মঙ্গলবার তাদের তা বুঝিয়ে দেওয়া হল।

বন্ধ হয়ে যাওয়া বাকি ২৫টি রাষ্ট্রায়ত্ত পাটকলের শ্রমিকদের টাকাও একই প্রক্রিয়ায় ‘শিগগিরই’ পরিশোধ করা হবে বলে বিজেএমসি আশ্বাস দিয়েছে।

অনুষ্ঠানে জানানো হয়, বিজেএমসির অর্থায়নে বিভিন্ন মিল এলাকায় দুটি প্রাথমিক বিদ্যালয়, দুটি নিম্ন মাধ্যমিক বিদ্যালয় এবং নয়টি মাধ্যমিক বিদ্যালয় চলছে। এসব স্কুলের শিক্ষার্থীদের শিক্ষা কার্যক্রম অব্যাহত রাখতে বিদ্যালয়গুলোকে সরকারি করা বা এমপিওভুক্ত করার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে ।

বস্ত্র ও পাটমন্ত্রী গোলাম দস্তগীর গাজীর সঙ্গে শ্রম প্রতিমন্ত্রী মন্নুজান সুফিয়ানও উপস্থিত ছিলেন এ অনুষ্ঠানে।