এবারও পেঁয়াজ রপ্তানি বন্ধ করল ভারত

গত বছরের মতো এবারও একই সময়ে সব ধরনের পেঁয়াজ রপ্তানি বন্ধ করল ভারত।

নিউজ ডেস্কবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 14 Sept 2020, 02:44 PM
Updated : 14 Sept 2020, 04:40 PM

সোমবার ভারতের বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের বৈদেশিক বাণিজ্য অধিদপ্তর পেঁয়াজ রপ্তানি নিষিদ্ধের ঘোষণা দিয়েছে। কাঁটা টুকরা ও গুঁড়া ছাড়া সব ধরনের পেঁয়াজ রপ্তানি নিষিদ্ধের সিদ্ধান্ত অবিলম্বে কার্যকর হবে বলে তাদের এক নোটিফিকেশনে বলা হয়েছে।  

এই ঘোষণার পর সীমান্তে বাংলাদেশ অভিমুখী পেঁয়াজের ট্রাক আটকে দিয়েছেন ভারতীয় ব্যবসায়ীরা। তারা বলছেন, প্রতি মেট্রিক টন ২৫০ ডলারের এলসির এই পেঁয়াজ এখন বর্ধিত মূল্য ৭৫০ ডলারে এলসি করলেই সেগুলো ছাড়া হবে।  

অভ্যন্তরীণ বাজারে মূল্য বৃদ্ধি ও মজুদে ঘাটতির কারণে গত বছর এই সেপ্টেম্বরেই প্রথমে পেঁয়াজের রপ্তানি মূল্য বৃদ্ধি এবং পরে রপ্তানি বন্ধ করেছিল ভারত। এরপর বাংলাদেশের বাজারে হু হু করে বাড়তে থাকে পেঁয়াজের দাম, ৫০-৬০ টাকা কেজি দামের পেঁয়াজ বিক্রি হয় ২৫০-৩০০ টাকায়।

পরে মিয়ানমার, পাকিস্তান, চীন, মিশর, তুরস্কসহ বিভিন্ন দেশ থেকে নানা রঙের ও স্বাদের পেঁয়াজ আমদানি করে পরিস্থিতি সামাল দেওয়ার চেষ্টা করে সরকার। নতুন পেঁয়াজ ওঠার পর গত মার্চে পেঁয়াজ রপ্তানিতে নিষেধাজ্ঞা তুলে নেয় ভারত।

এখন আবার নিষেধাজ্ঞা দেওয়ার কারণ সম্পর্কে ভারতের কেন্দ্রীয় সরকারের একজন কর্মকর্তা বলেছেন, “দাম বেড়ে গেছে এবং অভ্যন্তরীণ বাজারেও ঘাটতি রয়েছে। মওসুমের কারণে এই ঘাটতি দেখা দিলেও কোভিড-১৯ মহামারীর মধ্যেই গত কয়েক মাসে বিপুল পরিমাণ রপ্তানি হয়েছে।”

ভারত ২০২০-২১ অর্থবছরের এপ্রিল-জুনে ২৯ কোটি ৮০ লাখ ডলারের পেঁয়াজ রপ্তানি করেছে, যেখানে গেল অর্থবছরের পুরো সময়ে রপ্তানি করেছে ৪৪ কোটি ডলার।

বাংলাদেশ ছাড়াও মালয়েশিয়া, সংযুক্ত আরব আমিরাত ও শ্রীলঙ্কাসহ বেশ কয়েকটি দেশ ভারত থেকে পেঁয়াজ আমদানি করে।

ভারত সরকারের পেঁয়াজ রপ্তানি নিষিদ্ধের ঘোষণার পর স্থলবন্দরগুলো দিয়ে পেঁয়াজ আসা বন্ধ হয়ে গেছে বলে বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমের প্রতিনিধিরা জানিয়েছেন।

বেনাপোল

সোমবার সকালে বেনাপোল বন্দরে তিনটি ট্রাকে ৫০ মেট্রিক টন পেঁয়াজ ঢোকার পরপরই দুপুর থেকে বাংলাদেশে পেঁয়াজ রপ্তানি বন্ধ করে দেয় ভারত।

এতে বেনাপোলের ওপারের পেট্রাপোলে পেঁয়াজ ভর্তি প্রায় ১৫০টি ট্রাক আটকা পড়েছে বলে বেনাপোল সিএন্ডএফ এজেন্ট স্টাফ অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক সাজেদুর রহমান জানিয়েছেন।

পেঁয়াজের ট্রাক কেন আটকে দেওয়া হয়েছে জানতে চাইলে পেট্রাপোল রপ্তানিকারক সমিতির পক্ষে ব্যবসায়ী কার্তিক ঘোষ বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “পেঁয়াজ রপ্তানিকারক সমিতি সিদ্ধান্ত নিয়েছে ৭৫০ মার্কিন ডলারের নিচে বাংলাদেশে পেঁয়াজ রপ্তানি করবে না। সে কারণে অনেকগুলো পেঁয়াজ ভর্তি ট্রাক বর্ডারে দাঁড়িয়ে আছে।”

ভারতের বনগাঁ এলাকার পেঁয়াজ ব্যবসায়ী অনিল মজুমদার টেলিফোনে বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “বাজার দরে ঋণপত্র (এলসি) পেলে আমরা পুনরায় পেঁয়াজ দেব। সে ক্ষেত্রে পুরানো যে সব এলসি দেওয়া আছে সেগুলো ২৫০ মার্কিন ডলার সংশোধন করে সংশোধিত মূল্যে এবং নতুন এলসি ৭৫০ মার্কিন ডলার করা হলে পেঁয়াজ দেওয়া হবে।”

গত মার্চে ভারত থেকে আমদানি বাণিজ্য শুরুর পর থেকে ২৫০ ডলারে পেঁয়াজ আমদানি হয়ে আসছে বলে বেনাপোলের পেঁয়াজ আমদানিকারক রফিকুল ইসলাম রয়েল জানিয়েছেন।

পুরনো এলসির পেঁয়াজ এভাবে হঠাৎ করে আটকে দেওয়ায় অসন্তোষ জানিয়ে বেনাপোল শুল্ক ভবনের কমিশনার আজিজুর রহমান বলেন, “পারস্পরিক বাণিজ্যে সমঝোতার বিকল্প নেই। তারা রপ্তানি বন্ধ না করে পেঁয়াজের আমাদানিকারকদের সময় বেঁধে দিতে পারতেন। হঠাৎ করে এমন সিদ্ধান্তটা নেওয়া ঠিক হয়নি।”

গত ১ সেপ্টেম্বর থেকে ১৪ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত ভারত থেকে বেনাপোলে মোট ৭০০ মেট্রিক টন পেঁয়াজ এসেছে বলে কাস্টমস কর্মকর্তারা জানিয়েছেন।

হিলি

দিনাজপুরের হিলি স্থলবন্দরের আমদানি-রপ্তানিকারক গ্রুপের সভাপতি হারুন-উর-রশিদ বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, কোনো পূর্ব ঘোষণা ছাড়াই দুপুরে হঠাৎ করে ভারতীয় সিএন্ডএফ এজেন্ট অ্যাসোসিয়েশনের কর্মকর্তারা বাংলাদেশি আমদানিকারকদের পেঁয়াজ রপ্তানি না করার সিদ্ধান্ত জানিয়ে দেন।

ভারতীয় সিএন্ডএফ এজেন্ট অ্যাসোসিয়েশন কর্মকর্তাদের বরাত দিয়ে হারুন উর রশিদ বলেন, “ভারত সরকার বাংলাদেশে সব ধরনের পেঁয়াজ রপ্তানি বন্ধে সে দেশের কাস্টমসকে নির্দেশ দিয়েছে। সোমবার থেকেই ওই নির্দেশ কার্যকর করতে বলা হয়েছে এবং পরবর্তী সিদ্ধান্ত না দেওয়া পর্যন্ত পেঁয়াজ রপ্তানি বন্ধই থাকবে।

“ভারতীয় সিএন্ডএফ এজেন্টরা বলেছেন, এই সিদ্ধান্তের আগে পেঁয়াজ আমদানির জন্য এ পর্যন্ত যেসব এলসি খোলা হয়েছে এবং আমদানির প্রক্রিয়া সম্পন্ন হয়েছে সেই পেঁয়াজও এখন আর আসবে না।”

আকস্মিক এই সিদ্ধান্তের সমালোচনা করে হিলি বন্দরের পেঁয়াজ আমদানিকারক সাইফুল ইসলাম বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “ভারতের হঠাৎ এমন সিদ্ধান্তে এখানকার আমদানিকারক যারা ইতোমধ্যে পেঁয়াজ আমদানির জন্য এলসি খুলেছে, তারা বিপুল অংকের আর্থিক ক্ষতির শিকার হবে।”

তিনি জানান, এলসির বিপরীতে প্রায় দেড়শ পেঁয়াজ ভর্তি ট্রাক বাংলাদেশে প্রবেশের জন্য সেদেশের সড়কে রয়েছে।

“এখন এগুলো সেখানেই লোকসানে ভারতীয় ব্যবসায়ীদের হাতে তুলে দেওয়া ছাড়া করার কিছুই নেই।”

ভোমরা

সাতক্ষীরার ভোমরা বন্দর দিয়ে সোমবার কোনো পেঁয়াজের ট্রাক আসেনি।

ভোমরা সিএন্ডএফ এজেন্ট অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক মোস্তাফিজুর রহমান নাসিম বলেন,  সকাল থেকে পেঁয়াজের ট্রাক না আসায় ব্যবসায়ীরা হতাশ হয়ে পড়েন। পরে তারা খোঁজ-খবর নিয়ে জানতে পারেন, ওপার থেকে পেঁয়াজ ট্রাক আসা বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে।

[প্রতিবেদনটি তৈরিতে তথ্য দিয়েছেন বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমের বেনাপোল, দিনাজপুর ও সাতক্ষীরা প্রতিনিধি]