সোনার দাম ফের বাড়ল

বাড়তে বাড়তে চূড়ায় উঠে দুই দফা কমার পর ফের বেড়েছে সোনার দাম।

আবদুর রহিম হারমাছি প্রধান অর্থনৈতিক প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 9 Sept 2020, 04:54 PM
Updated : 9 Sept 2020, 04:54 PM

দেশের বাজারে প্রতি ভরি সোনার দাম এক হাজার ৭৫০ টাকা বাড়ানোর ঘোষণা বুধবার দিয়েছে বাংলাদেশ জুয়েলার্স সমিতি-বাজুস।

এবার আন্তর্জাতিক বাজারে দাম বাড়ার কারণে নয়, যুক্তরাষ্ট্রের মুদ্রা ডলারের তেজিভাবের কারণে সোনার দাম বাড়ানো হয়েছে বলে জানিয়েছেন বাজুসের সভাপতি এনামুল হক খান দোলন।

তিনি বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, কোভিড-১৯ মহামারীর মধ্যে বেশ কিছু দিন ধরে আন্তর্জাতিক বাজারে স্বর্ণের দাম খুব উঠা-নামা করছিল। কিন্তু গত দুই সপ্তাহ ধরে প্রায় একই জায়গায়ই রয়েছে।

গত ২১ অগাস্ট যখন দেশে সোনার দাম বেড়েছিল, তখন বিশ্ব বাজারে প্রতি আউন্সের (৩১.১০৩৪৭৬৮ গ্রাম) দাম ছিল ১৯৪০ ডলার। এখনও দাম প্রায় একই (১৯৪৩ ডলার) রয়েছে।

দোলন বলেন, “কোভিড-১৮ মহামারীর কারণে বিশ্ব অর্থনীতি স্থবির হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে ডলারের দামও কমে গিয়েছিল। এখন পরিস্থিতি স্বাভাবিক হতে শুরু করায় ডলারও শক্তিশালী হচ্ছে। আমাদের কার্ব মার্কেটে ডলারের দাম বেড়ে গেছে।

“গোল্ড আমদানি করতে এখন আমাদের বেশি টাকা লাগছে। সে কারণেই দাম বাড়ানো হয়েছে।”

বৃহস্পতিবার থেকে প্রতি ভরি (১১.৬৬৪ গ্রাম) সবচেয়ে ভালো মানের (২২ ক্যারেট) সোনা ৭৪ হাজার ৮ টাকায় বিক্রি হবে।

২১ ক্যারেটের সোনা বিক্রি হবে ৭০ হাজার ৮৫৯ টাকায়। ১৮ ক্যারেটের বিক্রি হবে ৬২ হাজার ১১১ টাকায়।

আর সনাতন পদ্ধতির সোনা বিক্রি হবে ৫১ হাজার ৭৮৮ টাকায়।

বুধবার পর্যন্ত সবচেয়ে ভালো মানের প্রতি ভরি সোনা ৭২ হাজার ২৫৮ টাকায় বিক্রি হয়। ২১ ক্যারেটের ৬৯ হাজার ১০৯ টাকায়, ১৮ ক্যারেটের ৬০ হাজার ৩১২ টাকায় বিক্রি হচ্ছিল। আর সনাতন পদ্ধতির সোনা বিক্রি হয় ৫০ হাজার ৩৮ টাকায়।

মহামারীর মধ্যে অস্থির বাজারে বাড়তে বাড়তে দেশে সোনার ভরি ৭৭ হাজার টাকায় উঠেছিল।

এরপর গত ১৩ অগাস্ট সব ধরনের সোনার দাম ভরিতে সাড়ে ৩ হাজার টাকা কমিয়েছিল বাজুস। তার এক সপ্তাহ পর ২১ অগাস্ট কমানো হয় ভরিতে ১ হাজার ৪৫৮ টাকা।

বাজুসের এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, “করোনাভাইরাসের কারণে সৃষ্ট অর্থনৈতিক সংকট, চীন-যুক্তরাষ্ট্রের বাণিজ্য যুদ্ধের কারণে ইউএস ডলারের প্রাধান্য খর্ব, তেলের দর পতন ও নানাবিধ জটিল অর্থনৈতিক সমীকরণের মাঝে গত ১৩ ও ২১ আগস্ট দুই দফায় স্বর্ণের মূল্য কমানো হলেও বর্তমানে দেশীয় বুলিয়ন মার্কেটে স্বর্ণের মূল্য বৃদ্ধি পেয়েছে।

“তাই সার্বিক পরিস্থিতি বিবেচনায় নিয়ে বাজুসের সিদ্ধান্ত মোতাবেক বৃহস্পতিবার হতে বাংলাদেশের বাজারে স্বর্ণের দাম বাড়ানো হয়েছে।”

ফাইল ছবি

কোভিড-১৯ মহামারীতে অর্থনীতিতে স্থবিরতার মধ্যে আন্তর্জাতিক বাজারের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে বাংলাদেশের বাজারেও সোনার দাম বাড়তে থাকে লাফিয়ে লাফিয়ে।

এই অবস্থায় সোনার দোকানগুলোতে বিক্রি প্রায় শূন্যের কোঠায় নেমে আসে।

গত ৫ অগাস্ট সব ধরনের সোনার দাম চার হাজার ৪৩২ টাকা করে বাড়নোর ঘোষণা দেয় বাজুস। ৬ অগাস্ট থেকে ওই দর কার্যকর হয়। তাতে প্রতি ভরি ২২ ক্যারেট সোনার গহনার দাম উঠে যায় ৭৭ হাজার ২১৬ টাকায়; ওটাই ছিল বাংলাদেশের ইতিহাসে সর্বোচ্চ সোনার দর।

চলতি বছরের ১ জানুয়ারি ২২ ক্যারেটের সোনার ভরি ছিল ৫৮ হাজার ২৮ টাকা।

জুয়েলারি ব্যবসায়ীরা জানান, প্রতি ভরি ২২ ক্যারেটে ৯১ দশমিক ৬ শতাংশ, ২১ ক্যারেটে ৮৭ দশমিক ৫ শতাংশ, ১৮ ক্যারেটে ৭৫ শতাংশ বিশুদ্ধ সোনা থাকে।

সনাতন পদ্ধতির সোনা পুরনো অলঙ্কার গলিয়ে তৈরি করা হয়। এ ক্ষেত্রে কত শতাংশ বিশুদ্ধ সোনা মিলবে, তার কোনো মানদণ্ড নেই।

অলংকার তৈরিতে সোনার দরের সঙ্গে মজুরি ও মূল্য সংযোজন কর (ভ্যাট) যোগ করে দাম ঠিক করা হয়।

তবে সোনার দাম বাড়লেও রুপা আগের মতোই ৯৩৩ টাকা ভরিতে বিক্রি হবে।