চলতি বছর অভ্যন্তরীণ চাহিদার তুলনায় দেশে প্রায় ‘১০ লাখ বেল’ পাট কম উৎপাদন হয়েছে জানিয়ে সংগঠন দুটির কর্তাব্যক্তিরা বলছেন, পণ্য উৎপাদনেও এর ‘বিরূপ প্রভাব’ পড়বে।
এ অবস্থায় দেশে তৈরি পাটজাত পণ্যের দাম বেড়ে গেলে বাংলাদেশ রপ্তানি বাজার হারাতে পারে বলেও তারা আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন।
বুধবার বিকালে রাজধানীর হোটেল লেকশোরে এক যৌথ সংবাদ সম্মেলনে বাংলাদেশ জুট স্পিনার্স অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি জাহিদ মিয়া বলেন, “নানা সূত্র থেকে আমরা জানতে পেরেছি, এ বছর ৫৫ লাখ বেল পাট উৎপাদিত হয়েছে সারা দেশে। কিন্তু আমাদের ইন্ডাস্ট্রিতে পাট লাগে ৬০ লাখ বেল, গৃহস্থালির নানা কাজে পাট লাগে ৫ লাখ বেল।”
এই হিসাবে ১০ লাখ বেল পাটের ঘাটতি থেকে যাচ্ছে হিসাব দিয়ে তিনি বলেন, “প্রতি বছর আমাদের কাঁচাপাট রপ্তানি হয় ৮ থেকে ১০ লাখ বেল পাট। এখন এই পরিমাণ কাঁচাপাট রপ্তানি হলে আমরা ব্যাপক ঘাটতির মুখে পড়ব। আগে আমাদের নিজেদের চাহিদা পূরণ হোক, তারপর রপ্তানি হোক।”
আনকাট বাংলা তোশা রিজেকশন (বিটিআর) ও বাংলা হোয়াইট রিজেকশন (বিডব্লিউআর) জাতের কাাঁচ পাট রপ্তানি বন্ধের পাশাপাশি রপ্তানি নিরুৎসাহিত করতে প্রতি মেট্রিক টন কাঁচাপাটে ২৫০ মার্কিন ডলার রপ্তানি শুল্ক আরোপের দাবি জানানো হয় সংবাদ সম্মেলন থেকে।
সরকারি পাটকলগুলো বন্ধ হলেও পাট ও পাটজাত দ্রব্য থেকে রপ্তানি আয় বাড়ছে; মহামারীর মধ্যে গত দুই মাসে রপ্তানি আয়ে সবচেয়ে বেশি প্রবৃদ্ধি হয়েছে এ খাত থেকেই।
২০২০-২১ অর্থবছরের জুলাই-অগাস্ট সময়ে পাট ও পাটজাত দ্রব্য রপ্তানি করে ১৯ কোটি ৫৪ লাখ ডলার আয় করেছে বাংলাদেশ। এই অংক গত বছরের একই সময়ের চেয়ে প্রায় ৫০ শতাংশ বেশি। আর লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে প্রায় ১ শতাংশ বেশি।
গত অর্থবছরে ৮৮ কোটি ২৩ লাখ ডলারে পণ্য রপ্তানি করে চামড়া খাতকে (৭৯ কোটি ৭৬ লাখ ডলার) পেছনে ফেলে তৈরি পোশাকের পরের স্থানটি দখল করে নিয়েছে পাট খাত।
তবে ভারত থেকে আসা পাট বীজের মান এবার কমে যাওয়ায় এবং বন্যার কারণে পাট গাছের গড় দৈর্ঘ্য কম হওয়ায় উৎপাদন এবার আশানুরূপ হয়নি বলে পাটপণ্য উৎপাদনকারী ও ব্যবসায়ীদের ভাষ্য।
বাংলাদেশ জুট মিলস অ্যাসোসিয়েশনের চেয়ারম্যান মাহবুবুর রহমান পাটোয়ারী বলেন, এখন বাজারে কাঁচাপাটের দাম প্রতি মণ সর্বোচ্চ ২৭৫০ টাকার মত। মাত্র এক সপ্তাহে প্রতি মণ পাটের দাম ২৫০ থেকে ৩৫০ টাকা বেড়ে গেছে।
“ভরা মৌসুমে কাঁচাপাটের দাম ২৭৫০ টাকা হতে পারে, এটা আমাদের কারও অভিজ্ঞতায় নাই। এই দামে পাট কিনে পণ্য উৎপাদন শেষে যা দাম দাঁড়াবে তাতে বিদেশি ক্রেতারা কিনতে চাইবে না।”
কাঁচা পাটের দাম এভাবে বাড়লে সঙ্কট আরও বাড়বে জানিয়ে মাহবুবুর রহমান বলেন, “সরবরাহ ঘাটতির কারণে পাটকল বন্ধ হয়ে গেলে অভ্যন্তরীণ ও আন্তর্জাতিক পর্যায়ের ক্রেতারা পাটপণ্য ব্যবহার থেকে সরে দাঁড়াবে, তা হবে দেশের পাট শিল্পের জন্য তা হবে মারাত্মক বিপজ্জনক।”
বাংলাদেশ জুট স্পিনার্স অ্যাসোসিয়েশনের সহ সভাপতি ফারিয়ান ইউসুফ বলেন, পাট শিল্প রক্ষায় কাঁচা পাটের বাজার দর এবং সরবরাহ সহনীয় পর্যায়ে রাখা প্রয়োজন।
“কাঁচা পাটের অভাবে পাটকল বন্ধ হয়ে গেলে এই শিল্পের আরও শ্রমিক-কর্মচারী চাকরি হারাবে। দেশের অর্থনীতিতে ব্যাপক নেতিবাচক প্রভাব পড়বে।”
মধ্যস্বত্ত্বভোগী ফরিয়াদের উৎপাত বন্ধে পাট অধিদপ্তর থেকে বৈধ লাইসেন্সধারীদেরই কেবল পাট কেনা বেচার সুযোগ দেওয়া এবং ১ হাজার মণের বেশি পাট গুদামজাত করার সুযোগ না দেওয়ার দাবিও সংবাদ সম্মেলনে তুলে ধরা হয়।