পণ্যের বৈচিত্র্যের জন্য বিডাকে ‘উইং’ খোলার পরামর্শ অর্থমন্ত্রীর

রপ্তানি বাণিজ্য বৃদ্ধির জন্য পণ্যের বৈচিত্র্যকরণের দিকনির্দেশনায় বাংলাদেশ বিনিয়োগ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ-বিডাকে একটি আলাদা ‘উইং’ খোলার পরামর্শ দিয়েছেন অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল।

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 3 Sept 2020, 01:01 PM
Updated : 3 Sept 2020, 01:01 PM

বৃহস্পতিবার বিডার চতুর্থ বর্ষপূর্তি উদযাপন উপলক্ষে এক ভার্চুয়াল অনুষ্ঠানে এ পরামর্শ দেন তিনি। বেসরকারিকরণ কমিশন ও বিনিয়োগ বোর্ডকে একীভূত করে ২০১৬ সালে বিডা গঠন করা হয়।

অর্থমন্ত্রী বলেন, “পরামর্শ এসেছে বিডার মতো আরেকটি প্রতিষ্ঠান করার জন্য। তারা উপদেশ দেবে কোন লাইনে প্রোডাক্ট ডাইভারসিফিকেশন করব, আরেকটি প্রতিষ্ঠান না করে বিডা যদি আরেকটি ইউং করে পৃথিবীর কোন কোন দেশ কীভাবে ডাইভারসিফিকেশন করছে আমাদের সাথে সঙ্গতি করে করা যায়।

“৪ থেকে ৫টি প্রোডাক্ট নিয়ে রপ্তানি বাণিজ্য বাড়াতে পারব না। পুরো বিশ্ব আমাদের মনে রাখতে হবে। ডেমোগ্রাফিক ডিভিডেন্ট কাজে লাগাতে হবে। জনশক্তিকে কাজে লাগান, লোকাল ইন্ডাস্ট্রিজের জন্য অবারিত দরজা খুলে রেখেছি।”

এই চার বছর ধরে বিডা আশার আলো দেখাচ্ছে মন্তব্য করে মুস্তফা কামাল বলেন, “ফেইল করার কোনো মানুষ এখন বিডার সাথে সম্পৃক্ত নেই। আমরা অনেক কষ্ট করে এখানে এসেছি।”

বাংলাদেশে বিদেশি বিনিয়োগ কম জানিয়ে অর্থমন্ত্রী বলেন, “পৃথিবীতে এ মুহূর্তে জিডিপি সাইজ হচ্ছে ১৮ ট্রিলিয়ন ডলার। এর মধ্যে ৬০ শতাংশ হচ্ছে ডাইরেক্ট ফরেন ইনভেস্টমেন্ট, ভেরি আনফরচুনেটলি এফডিআইয়ের পরিমাণ আমাদের কম। এফডিআই সবচেয়ে বেশি উপভোগ করে ইউএসএ, তারপর চায়না এবং তারপর সিঙ্গাপুর ১০৫ বিলিয়ন ডলার এবং ভারত ৫১ বিলিয়ন ডলার। বেশিরভাগ এফডিআই তাদের দখলে।

“আমরা বিশ্বাস করি যে, ভৌত অবকাঠামোগুলো তৈরি করেছি এখন বিনিয়োগ আসবে। ফিজিক্যাল ইনফ্রাস্ট্রাকচার আমাদের হয়ে গেছে, নন ফিজিক্যাল ইনফ্রাস্ট্রাকচার মানবিক কাজগুলো দরকার। মানুষের হৃদয়কে স্পর্শ করব মানুষকে ভালোবাসব।

“দেশি বা বিদেশি সব বিনিয়োগকারীরা আমাদের কাছে সমান। আমরা কোন বৈষম্য করব না, করি নাই। যারা বিনিয়োগ করবে তারাই আমাদের সম্পদ। আমাদের সম্পদকে আমরা সম্পদশালী হিসেবে দেখতে চাই।”

যেসব জায়গায় ঘাটতি রয়ে গেছে সেগুলো ঠিক করার তাগাদা দিয়ে অর্থমন্ত্রী বলেন, “ভিয়েতনাম যেভাবে পেরেছে সেভাবে আমাদের করতে হবে। জিডিপি গ্রোথ ৫ দশমিক ২৪ শতাংশ, যা সাউথ এশিয়ার সবার উপরে থাকবে। একমাত্র ভিয়েতনামকে আমাদের কাছাকাছি মনে হয়। এছাড়া আমাদের সমপরিমাণ কেউ হবে না। জুলাই-অগাস্ট মাসে সামস্টিক অর্থনীতির প্রতিটি কম্পোনেন্ট খুব পজিটিভলি উপস্থাপিত হয়েছে, রেমিটেন্সের পরিমাণ বেড়েছে অবিশ্বাস্যভাবে।

“আমাদের যে সম্পদ তার পুরোটা ব্যবহার করতে পারিনি, আমাদের সম্পদ জনশক্তি। সব জায়গা ডিজিটাইজড হচ্ছে। আামাদের জনশক্তি যদি যথাযথভাবে ব্যবহার করতে পারি আমি বিশ্বাস করি এরাই হবে বড় শক্তি।”

প্রধানমন্ত্রীর বেসরকারি শিল্প ও বিনিয়োগ উপদেষ্টা সালমান এফ রহমান

বর্ষপূর্তির অভিনন্দন জানিয়ে প্রধানমন্ত্রীর বেসরকারি শিল্প ও বিনিয়োগ উপদেষ্টা সালমান এফ রহমান বলেন, “লক্ষ্য অর্জনে বিনিয়োগ আনতে হবে। শুধু বিদেশি নয়, দেশি বিনিয়োগও নিয়ে আসতে হবে। দেশি বিনিয়োগ আসলে বিদেশি বিনিয়োগকারীরা আগ্রহী হবে। সফলতাটা পাব ওএসএস বাস্তবায়ন করতে পারলে। প্রতিটি সরকারি সেবা যদি অনলাইন করতে পারি তাহলে স্বচ্ছতা বাড়বে।”

২০৪১ সালে উন্নত দেশ গড়ার লক্ষ্য অর্জনে কাজ চলছে জানিয়ে সালমান এফ রহমান বলেন, “কোভিড-১৯ সময়ে অনেকে বলেছে আমরা পিছিয়ে যাব, তবে আমাদের গ্রোথ ভালো। বেসরকারি খাতকে অভিনন্দন জানাতে চাই যে, আমরা যা কিছু করছি আপনাদের সহযোগিতা ছাড়া সম্ভব হত না। কঠিন সময়ে চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় সরকারের সাথে কাজ করেছেন এজন্য ধন্যবাদ জানাই।”

বিডার নির্বাহী চেয়ারম্যান সিরাজুল ইসলাম বলেন, “দেশীয় বিনিয়োগকারীদের সহায়তার পাশাপাশি বিদেশি বিনিয়োগকারীদের আকর্ষণ করার কাজ করে যাচ্ছি। বিনিয়োগ বিকাশের জন্য নতুন উদ্যোক্তা সৃষ্টি করা প্রয়োজন, বর্তমানে যারা উদ্যোক্তা হয়েছে তাদের নিজেদের চেষ্টায় হয়েছেন।

“প্রাতিষ্ঠানিকভাবে উদ্যোক্তা সৃষ্টি করা সম্ভব। নতুন বিনিয়োগকারী সৃষ্টি করার জন্য বিডা প্রকল্প গ্রহণ করেছে। ৬৪টি জেলায় বিনিয়োগকারী ও উদ্যোক্তা সৃষ্টিতে কাজ করে যাচ্ছি।”

বিজিএমইএ সভাপতি রুবানা হক বলেন, “জন্মদিনে উপহার দিতে হয় তবে আমরা ছোট দাবি করছি, ভিয়েতনামের মতো সেক্টর ডাইভারসিফিকেশন কাউন্সিল করার। বিডার অধীনে এই কাউন্সিল করলে আইন ও অবকাঠামো সুবিধা হবে। আশা করি এ বিষয়ে বিডা ভূমিকা রেখে যাবে।”

অনুষ্ঠানে এফবিসিসিআই সভাপতি শেখ ফজলে ফাহিম, ইউনিলিভার বাংলাদেশের সিইও-এমডি কেদার লেলে, গ্রামীণফোনের প্রধান নির্বাহী ইয়াসির আজমান, হুয়াওয়ে টেকনোলজিস (বাংলাদেশ) লিমিটেডের সিইও ঝাং ঝেংজুন, প্রাণ-আরএফএল গ্রুপের পরিচালক উজমা চৌধুরী বক্তব্য রাখেন।

এছাড়া বক্তব্য রাখেন সিঙ্গাপুর এয়ারলাইনসের বাংলাদেশ মহাব্যবস্থাপক (জিএম) জর্জ রবার্টসন, স্ট্যান্ডার্ড চার্টার্ড ব্যাংকের সিইও নাসের এজাজ বিজয়, বাংলাদেশ উইমেন চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিজের সভাপতি সেলিমা আহমাদ, হাই-টেক পার্ক কর্তৃপক্ষের ব্যবস্থাপনা পরিচালক হোসনে আরা বেগম, অর্থনৈতিক অঞ্চল কর্তৃপক্ষ-বেজার নির্বাহী চেয়ারম্যান পবন চৌধুরী।