সোনার দাম আরেক দফা কমল

বাড়তে বাড়তে চূড়ায় ওঠার পর সোনার দাম আরেক দফা কমেছে। এক সপ্তাহের ব্যবধানে এবার প্রতি ভরি সোনার দর ১ হাজার ৪৫৮ টাকা কমানো হয়েছে।

আবদুর রহিম হারমাছি প্রধান অর্থনৈতিক প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 21 August 2020, 04:28 PM
Updated : 21 August 2020, 04:28 PM

শনিবার থেকে প্রতি ভরি (১১.৬৬৪ গ্রাম) সবচেয়ে ভালো মানের (২২ ক্যারেট) সোনার গহনা ৭২ হাজার ২৫৮ টাকায় বিক্রি হবে।

২১ ক্যারেটের গহনা বিক্রি হবে ৬৯ হাজার ১০৯ টাকায়। ১৮ ক্যারেটের অলঙ্কার বিক্রি হবে ৬০ হাজার ৩১২ টাকায়। আর সনাতন পদ্ধতির সোনার গহনা বিক্রি হবে ৫০ হাজার ৩৮ টাকায়।

শুক্রবার পর্যন্ত সবচেয়ে ভালো মানের প্রতি ভরি সোনার গহনা ৭৩ হাজার ৭১৬ টাকায় বিক্রি হয়েছে। ২১ ক্যারেটের গহনা কিনতে লেগেছে ৭০ হাজার ৫৬৭ টাকা। ১৮ ক্যারেটের সোনার অলঙ্কারের জন্য লেগেছে ৬১ হাজার ৮১৯ টাকা। আর সনাতন পদ্ধতির এক ভরি সোনার গহনা বিক্রি হয়েছে ৫১ হাজার ৪৯৭ টাকায়।

বাড়তে বাড়তে সোনার ভরি ৭৭ হাজার টাকার উপরে ওঠার পর গত ১৩ অগাস্ট সব ধরনের সোনার দাম ভরিতে সাড়ে ৩ হাজার টাকা কমিয়েছিল বাংলাদেশ জুয়েলার্স সমিতি-বাজুস। এক সপ্তাহ পর আরেক দফা কমান হল।

আন্তর্জাতিক বাজারে দর নিম্নমুখী হওয়ায় স্থানীয় বাজারে দাম কমানো হয়েছে বলে বাজুস সাধারণ সম্পাদক দিলীপ কুমার আগরওয়ালা জানিয়েছেন।

তিনি শুক্রবার রাতে বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “গত ১২ অগাস্ট যখন গোল্ডের দাম কমানোর ঘোষণা দেওয়া হয়, তখন প্রতি আউন্সের (৩১.১০৩৪৭৬৮ গ্রাম) দাম ছিল ১৯৭০ ডলার। এখন এই মুহূর্তে দাম ১৯৪০ ডলার।”

তবে সোনার বাজার খুবই অস্থির জানিয়ে তিনি বলেন, “আন্তর্জাতিক বাজারে স্বর্ণের দাম খুব উঠা-নামা করছে। একবার কমছে, তো আবার বাড়ছে।

“শুধু আন্তর্জাতিক বাজারে দাম কমার কারণে নয়, এই করোনাভাইরাস মহামারীকালে আমাদের ক্রেতাদের ধরে রাখার জন্যও গোল্ডের দাম কমিয়েছি। দাম অস্বাভাবিক বেড়ে যাওয়ায় আমাদের দোকানগুলোতে স্বর্ণের গহনা বিক্রি একেবারে তলানিতে নেমে এসেছে। আমরা আমাদের লাভ-ক্ষতির বিষয়টি বিবেচনায় না নিয়ে ক্রেতাদের বাজারমুখী করতে দাম কমিয়েছি।”

বাজুসের এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, “বৈশ্বিক স্থবিরতা, ডলার ও তেলের দরপতন, আন্তর্জাতিক স্বর্ণবাজারে নজিরবিহীন উত্থান-পতন সত্ত্বেও দেশীয় স্বর্ণ বাজারের মন্দাভাব ও ভোক্তা সাধারণের কথা চিন্তা করে প্রতিকূল পরিস্থিতিতেও সোনার অলংকারের দাম কমানো হয়েছে।”

কোভিড-১৯ মহামারীতে অর্থনীতিতে স্থবিরতার মধ্যে আন্তর্জাতিক বাজারের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে বাংলাদেশের বাজারেও সোনার দাম বাড়তে থাকে লাফিয়ে লাফিয়ে।

এই অবস্থায় সোনার দোকানগুলোতে বিক্রি প্রায় শূন্যের কোঠায় নেমে আসে।

গত ৫ অগাস্ট সব ধরনের সোনার দাম চার হাজার ৪৩২ টাকা করে বাড়নোর ঘোষণা দেয় বাজুস। ৬ অগাস্ট থেকে ওই দর কার্যকর হয়। তাতে প্রতি ভরি ২২ ক্যারেট সোনার গহনার দাম উঠে যায় ৭৭ হাজার ২১৬ টাকায়; ওটাই ছিল বাংলাদেশের ইতিহাসে সর্বোচ্চ সোনার দর।

চলতি বছরের ১ জানুয়ারি ২২ ক্যারেটের সোনার ভরি ছিল ৫৮ হাজার ২৮ টাকা।

ডায়মন্ড ওয়ার্ল্ডের কর্ণধার ও এফবিসিসিআই সহ-সভাপতি দিলীপ কুমার আগরওয়ালা বলেন, “একেবারে ক্রেতা শূন্য হয়ে গিয়েছিল জুয়েলারি দোকানগুলো। উল্টো পুরনো গহনা বিক্রি করতে ভিড় বেড়ে গিয়েছিল।

“প্রতিবার আমরা আন্তর্জাতিক বাজারে দাম বাড়া-কমার সঙ্গে সমন্বয় করে স্থানীয় বাজারে দাম বাড়াতাম-কমাতাম। এবার দাম কমানোর পেছনে আন্তর্জাতিক বাজারের সঙ্গে ক্রেতাদের ধরে রাখার বিষয়টিকেও বিবেচনা করা হয়েছে।

“মহামারীর এই পাঁচ মাসে আমাদের অনেক ক্ষতি হয়েছে। আরও ক্ষতি দিয়ে হলেও আমরা ক্রেতা হারাতে চাই না। তাদের ধরে রাখতে চাই। সে কারণেই বিশ্ববজারে উত্থান-পতনের মধ্যেই আমরা কমিয়েছি।”

জুয়েলারি ব্যবসায়ীরা জানান, প্রতি ভরি ২২ ক্যারেটে ৯১ দশমিক ৬ শতাংশ, ২১ ক্যারেটে ৮৭ দশমিক ৫ শতাংশ, ১৮ ক্যারেটে ৭৫ শতাংশ বিশুদ্ধ সোনা থাকে।

সনাতন পদ্ধতির সোনা পুরনো অলঙ্কার গলিয়ে তৈরি করা হয়। এ ক্ষেত্রে কত শতাংশ বিশুদ্ধ সোনা মিলবে, তার কোনো মানদণ্ড নেই।

অলংকার তৈরিতে সোনার দরের সঙ্গে মজুরি ও মূল্য সংযোজন কর (ভ্যাট) যোগ করে দাম ঠিক করা হয়।