ঘুরে দাঁড়াচ্ছে পোশাক রপ্তানি বাণিজ্য

করোনাভাইরাস মহামারীকালে প্রবাসীদের পাঠানো রেমিটেন্সের মতো তৈরি পোশাক রপ্তানি আয়েও উল্লম্ফন দেখা দিয়েছে।

আবদুর রহিম হারমাছি প্রধান অর্থনৈতিক প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 17 August 2020, 07:38 PM
Updated : 17 August 2020, 07:38 PM

চলতি অগাস্ট মাসের ১৫ দিনেই ১৫০ কোটি ৭০ লাখ (১.৫০ বিলিয়ন) ডলারের পোশাক রপ্তানি করেছে বাংলাদেশ। এই অঙ্ক গত বছরের অগাস্ট মাসের একই সময়ের চেয়ে ২৮ দশমিক ৫৮ শতাংশ বেশি।

অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল সোমবার রাতে এই তথ্য জানিয়ে বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “প্রবাসীদের পাঠানো রেমিটেন্স, আমদানি, রপ্তানি আয়সহ আমাদের সামষ্টিক অর্থনীতির প্রধান সূচকগুলো ঘুরে দাঁড়াতে শুরু করেছে। আর এর মধ্য দিয়ে আমাদের অর্থনীতি আস্তে আস্তে আগের শক্তি ফিরে পাবে।

“এই সূচকগুলোর ইতিবাচক ধারা আমাদের সাহস জোগাচ্ছে; আমরা সাহসিকতার সঙ্গে কোভিড-১৯ মোকাবেলা করতে পারব বলে আশা করছি।”

অর্থমন্ত্রীর সঙ্গে একমত পোষণ করে পোশাক রপ্তানিকারকরা বলছেন, আগামী ডিসেম্বরের বড়দিনকে সামনে রেখে বাংলাদেশের রপ্তানি বাণিজ্য ঘুরে দাঁড়াবে।

বাংলাদেশের রপ্তানি আয়ের ৮৫ শতাংশই আসে তৈরি পোশাক থেকে।

কোভিড-১৯ মহামারীর ধাক্কা বাংলাদেশে লাগতে শুরু করার পর গত এপ্রিলে পোশাক রপ্তানি কমে মাত্র ৩৬ কোটি ডলারে নেমে এসেছিল, যা ছিল গত বছরের এপ্রিলের চেয়ে ৮৫ দশমিক ৩৭ শতাংশ কম।

বিধিনিষেধ শিথিল করে মে মাসে কলকারখানা চালু করা হয়। ওই মাসে পোশাক রপ্তানিতে প্রবৃদ্ধি কমেছিল ৬১ দশমিক ৫৭ শতাংশ। ২০১৯-২০ অর্থবছরের শেষ মাস জুনে প্রবৃদ্ধি কমেছিল ২ দশমিক ৫ শতাংশ।

চলতি ২০২০-২১ অর্থবছরের প্রথম মাস জুলাইয়ে সার্বিক পণ্য রপ্তানি দশমিক ৬ শতাংশ বাড়লেও পোশাক রপ্তানি কমে ১ দশমিক ৯২ শতাংশ। তবে অগাস্টে পোশাকের পালে হাওয়া দেখা যাচ্ছে।

রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরো (ইপিবি) গত ৪ অগাস্ট রপ্তানি আয়ের হালনাগাদ যে তথ্য প্রকাশ করেছে, তাতে দেখা যায়, নতুন অর্থবছরের প্রথম মাস জুলাইয়ে বিভিন্ন পণ্য রপ্তানি করে ৩৯১ কোটি (৩.৯১ বিলিয়ন) ডলার আয় করেছে বাংলাদেশ।

এই অঙ্ক গত বছরের জুলাই মাসের চেয়ে দশমিক ৫৯ শতাংশ বেশি। আর লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে ১৩ দশমিক ৪ শতাংশ বেশি। জুলাই মাসে রপ্তানি আয়ের লক্ষ্য ছিল ৩৪৪ কোটি ৯০ লাখ ডলার।

এর মধ্য দিয়ে সাত মাস পর বাংলাদেশ রপ্তানি আয়ে প্রবৃদ্ধিতে ফিরে আসে। সর্বশেষ গত বছরের ডিসেম্বরে ২ দশমিক ৮৯ শতাংশ প্রবৃদ্ধি হয়েছিল রপ্তানি আয়ে। এরপর ধারাবাহিকভাবে প্রবৃদ্ধি কমছিল।

ইপিবির তথ্যে দেখা যায়, জুলাই মাসে পোশাক রপ্তানি থেকে লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে ১৪ দশমিক ১৮ শতাংশ বেশি আয় দেশে আসে। তবে গত বছরের জুলাই মাসের চেয়ে আয় কম হয় ১ দশমিক ৯২ শতাংশ কম হয়।

জুলাইয়ে ৩২৪ কোটি ৪৯ লাখ ডলারের পোশাক রপ্তানি হয়। গত বছরের জুলাইয়ে হয়েছিল ৩৩১ কোটি ডলার। লক্ষ্যমাত্রা ছিল ২৮৪ কোটি ২০ লাখ ডলার।

পোশাক শিল্প মালিকদের শীর্ষ সংগঠন বিজিএমইএ’র সাবেক সভাপতি এভিন্স গ্রুপের চেয়ারম্যান আনোয়ার-উল আলম চৌধুরী পারভেজ বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “আমরা এখন আমাদের মোট ক্যাপাসিটির ৬০-৭০ শতাংশ উৎপাদন করছি। অর্ডার আসছে, তবে কম। বেসিক আইটেমের (অতি প্রয়োজনীয়) পোশাক রপ্তানি হচ্ছে।

“বড় বড় ফ্যাশন হাউজগুলো এখনও খোলেনি। অনলাইনে কিছু বেচাকেনা হচ্ছে। বায়ারদের কাছ থেকে আমরা যতটুকু আভাস পাচ্ছি, তাতে মনে হচ্ছে ডিসেম্বরে বড় দিনকে ঘিরে বিশ্ববাজারে পোশাক কেনাবেচা বাড়বে। আমাদের রপ্তানিও ঘুরে দাঁড়াবে।”

নিট পোশাক শিল্প মালিকদের সংগঠন বিকেএমইএ’র সহ-সভাপতি মোহাম্মদ হাতেম বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, সরকার প্রণোদনা প্যাকেজের আওতায় শ্রমিকদের চার মাসের (এপ্রিল-জুলাই) বেতনের ব্যবস্থা করায় পোশাক কারখানার মালিকদের ‘খুবই সুবিধা’ হয়েছে।

“সে কারণেই জুলাই মাসে ৩ দশমিক ২৪ বিলিয়ন ডলারের পোশাক রপ্তানি করা সম্ভব হয়েছে। এই রপ্তানি গত বছরের জুলাই মাসের চেয়ে ২ শতাংশ কম হলেও আগের তিন মাসের (এপ্রিল, মে ও জুন) চেয়ে বেশ ভালো ছিল। সাতটা-আটটা মাস, খুব বেশি হলে এক বছরের মধ্যেই আমরা আগের অবস্থায় ফিরে আসতে পারব।”

চলতি ২০২০-২১ অর্থবছরে পোশাক খাত থেকে ৩ হাজার ৩৭৮ কোটি ৫০ লাখ (৩৩.৭৮ বিলিয়ন) ডলার আয়ের লক্ষ্য ধরা হয়েছে। ২০১৯-২০ অর্থবছরে এই খাত থেকে ২৭ দশমিক ৯৫ বিলিয়ন ডলার আয় হয়েছিল।

আর চলতি অর্থবছরে সার্বিক পণ্য রপ্তানির মোট লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ৪১ বিলিয়ন ডলার। গত অর্থবছরে আয় হয়েছিল ৩৩ দশমিক ৬৭ বিলিয়ন ডলার।