গ্যাস-বিদ্যুতে সাফল্য এলেও সমস্যা ব্যবস্থাপনায়: ফরাস উদ্দিন

বিদ্যুৎ-গ্যাসে স্বয়ংসম্পূর্ণতা অর্জনের পথে বাংলাদেশ সাফল্য পেলেও ব্যবস্থাপনায় সমস্যা রয়েছে বলে মনে করেন সাবেক গভর্নর মোহাম্মদ ফরাস উদ্দিন।

নিজস্ব প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 13 August 2020, 12:06 PM
Updated : 13 August 2020, 12:08 PM

বৃহস্পতিবার জ্বালানি বিষয়ক এক সেমিনারে তিনি বলেন, “স্বাধীনতার পর বঙ্গবন্ধুর সবচেয়ে অগ্রাধিকারমূলক কাজগুলো ছিল শিল্পায়ন ও দারিদ্র্য বিমোচন। তার কন্যা শেখ হাসিনার কাজের মাঝেও এর পূর্ণ রিফ্লেকশন দেখা যাচ্ছে। শিল্পায়নের জন্য বিদ্যুৎ, গ্যাসের স্বয়ংসম্পূর্ণতা অর্জনের বিকল্প নেই। বাংলাদেশ এই ক্ষেত্রে অনেক সাফল্য দেখালেও ব্যবস্থাপনা পর্যায়ে কিছু সমস্যা রয়ে গেছে।

“যেমন ধরুন ৮-১০ বছরে বাপেক্সে যদি ৮ জন ব্যবস্থাপনা পরিচালক পরিবর্তন হয় তাহলে এই প্রতিষ্ঠানের পক্ষে কোনো কর্মসূচি বাস্তবায়ন করা কঠিন হয়ে যায়। একজন ব্যবস্থাপক নিজের পরবর্তী কর্মক্ষেত্র নিয়ে ভাববেন নাকি এখানে কিছু পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করবেন?,” প্রশ্ন রাখেন তিনি।

বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাতে বঙ্গবন্ধুর সুদূর প্রসারী পরিকল্পনার কথা তুলে ধরে ফরাস উদ্দিন বলেন, “বাংলাদেশের মাটির নিচে তেল-গ্যাস, সোনা-দানা রয়েছে এমন আশায় আশাবাদী ছিলেন বঙ্গবন্ধু। স্বাধীনতার পর প্রথম যে পঞ্চবার্ষিক কর্মপরিকল্পনা হাতে নেওয়া হয়েছিল সেখানে চারটি প্রধান বিষয় ছিল কৃষি, শিল্প, পরিবহন এবং বিদ্যুৎ ও জ্বালানি।

“৭৩ সালে দেশের অভ্যন্তরে গ্যাস অনুসন্ধানের বিষয়ে ১৭টি বহুজাতিক কোম্পানির সঙ্গে এমওইউ স্বাক্ষরিত হয়েছিল। সেই সময় এসব চুক্তি থেকে সেলামি বাবদ অর্থ পেয়েছিল বাংলাদেশ। জ্বালানি খাতের জন্য বঙ্গবন্ধু সর্বশেষ বড় কাজটি করে গিয়েছিলেন ৫টি গ্যাসক্ষেত্র জাতীয়করণের মধ্য দিয়ে।”

সেই দিনের স্মৃতি বর্ণনা করে বঙ্গবন্ধুর সেই সময়কার একান্ত সহকারী ফরাস উদ্দিন বলেন, “দিনটি ছিল শনিবার। বঙ্গবন্ধু সকালে প্রধানমন্ত্রী কার্যালয়ে গিয়েই বলেন, আজ দেশের ভবিষ্যতের জন্য অনেক বড় একটি কাজ করতে যাচ্ছি। বিদেশি কোম্পানি থেকে গ্যাসক্ষেত্র কিনে জাতীয়করণের এই কাজটি অতটা সহজ ছিল না। শেষ পর্যন্ত বঙ্গবন্ধু তাদেরকে গ্যাসক্ষেত্র অধিগ্রহণের হুমকিও দিয়েছিলেন। এর কয়েক দিনের মধ্যেই আততায়ীদের হাতে তিনি সপরিবারে শাহাদাত বরণ করলেন। ওই ঘটনার সঙ্গে এই শাহাদাতের সম্পর্ক আছে কি না আমি জানি না।”

জ্বালানি ও বিদ্যুৎ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ

বর্তমান সরকারের সক্ষমতা তুলে ধরে তিনি বলেন, “কোভিড-১৯ মহামারীর সময়ে বিশ্বের বড় বড় অর্থনীতির দেশগুলো টলে উঠছে। সেখানে বাংলাদেশ অব্যাহতভাবে ভালো করে যাচ্ছে। জিডিপি প্রবৃদ্ধি ৮.২ শতাংশ হওয়ার কথা থাকলেও তা ৫ দশমিক ২ শতাংশ হয়েছে। মাথাপিছু আয় দুই হাজার ডলারের উপরে রয়েছে। এতো মারাত্মক পরিস্থিতির মধ্যে ব্যাংকে আমানতের পরিমান বাড়ছে। এগুলো আমাদের অর্থনীতির জন্য শুভ লক্ষণ।”

বিদ্যুৎ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ বলেন, বড় বড় শক্তিধর রাষ্ট্রগুলোর মধ্যে স্নায়ুযুদ্ধকালীন সময়ে বাংলাদেশ নামক ছোট্ট্ এই রাষ্ট্রটির জন্ম। পৃথিবীর অনেক শক্তিশালী রাষ্ট্রই শুরুর দিকে বাংলাদেশকে ভালো চোখে দেখত না। সেই সময় বহুজাতিক কোম্পানি থেকে নিজেদের গ্যাস নিজেদের আয়ত্ত্বে রাখার উদ্যোগ সত্যিই অনেক বড় সাহসের কাজ ছিল।

“বঙ্গবন্ধু স্বাধীনতা উত্তর বাংলাদেশে যেভাবে একের পর এক সাহসী সিদ্ধান্ত নিয়ে দেশকে এগিয়ে নিয়ে যেতে শুরু করেছিলেন, তার কন্যা শেখ হাসিনাও অর্থনীতি, শিল্প, জ্বালানি, বিদ্যুৎ, অবকাঠামো উন্নয়নে একের পর এক সাহসী সিদ্ধান্ত নিচ্ছেন। তিনিই সংসদে দাঁড়িয়ে বলেছিলেন, আমরা নিজেদের অর্থেই পদ্মা সেতু করব। প্রাইভেট সেক্টরকে টেনে খুব অল্প সময়ের মধ্যে বিদ্যুতের সঙ্কট দূর করেছিলেন।

“আমরা বিদ্যুতের বড় বড় প্রকল্পগুলো যখন হাতে নিচ্ছি তখন অনেকেই সমালোচনা করে বলেছিলেন যে, এগুলো সম্ভব নয়। আজকে পায়রা, মাতারবাড়িতে বড় প্রকল্পগুলো যথা সময়েই বাস্তবায়নের মুখ দেখেছে। কয়লাভিত্তিক আলট্রা সুপার থার্মাল পাওয়ার প্ল্যান্ট নির্মিত হয়েছে, যা সারা বিশ্বে বিরল।”

জ্বালানি ও বিদ্যুৎখাতের কর্মনিষ্ঠ জনবলের পরিশ্রমের ফলেই এসব প্রকল্প দ্রুত বাস্তবায়ন হয়েছে মন্তব্য করে প্রতিমন্ত্রী বলেন, “তবে অনেক অফিসারকে দেখেছি কৌশলে কাজ এড়িয়ে চলতে। আবার অনেক সৎ কর্মকর্তাও পেয়েছি।”

জাতীয় শোক দিবস ও জাতীয় জ্বালানি নিরাপত্তা দিবস সামনে রেখে বিদ্যুৎ ও জ্বালানি বিষয়ক সাংবাদিকদের সংগঠন ফোরাম ফর এনার্জি রিপোর্টার্স বাংলাদেশ ও বেসরকারি বিদ্যুৎকেন্দ্রের মালিকদের সংগঠন যৌথভাবে এই সেমিনারের আয়োজন করে।

পিডিবির সাবেক চেয়ারম্যান খালেদ মাহমুদ, বাপেক্সের সাবেক ব্যবস্থাপনা পরিচালক মর্তুজা আহমেদ চিশতি, জ্বালানি বিশেষজ্ঞ সালেক সুফি সেমিনারে বক্তব্য রাখেন।

‘বঙ্গবন্ধু: জ্বালানি নিরাপত্তা ও আজকের বাংলাদেশ’ শীর্ষক প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন সাংবাদিক মোল্লা আমজাদ।