শুক্রবার দুপুর থেকে কয়েক ঘণ্টা রাজধানীর বেশ কয়েকটি পশুর হাট ঘুরে জমজমাট বেচা-কেনা দেখা গেছে।
দুপুরে রাজধানীর কমলাপুর হাটে গিয়ে দেখা যায় হাতেগোনা কয়েকটি গরু। বরিশাল থেকে সেখানে গরু নিয়ে আসা বেপারী ইদ্রিস মিয়া জানান, সপ্তাহজুড়ে হাট প্রায় ফাঁকা থাকলেও গত বুধবার থেকে ক্রেতাদের ভিড় বাড়তে থাকে। শেষ দিকে এসে লাভও হচ্ছে তাদের।
এই হাটে মেহেরপুরের গাংনী থেকে গরু নিয়ে আসা বেপারী চাঁন মিয়া বলেন, “প্রথম দিকে আমরা যে দাম কইতেছিলাম, কাস্টমাররা তার অর্ধেক দাম কইত। এখন শেষ দিকে আইসা একটু লাভ হইসে। আমার আটটা গরুর সবকয়ডাই বিক্রি হইসে।”
ঝিনাইদহ থেকে আসা বেপারী শাহীন আলম বলেন, “শেষ দিকে কাস্টমাররাও বুঝতে পারছেন আমাদের অবস্থা। দামে খুব একটা কম বলতাসেন না এখন। আমার ছয়টা গরুর মধ্যে চারটা গরু বিক্রি হইসে। শেষ দুটা গরু বিক্রি করেই বাড়ি যামু।”
তিনি বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “শেষ দিকে দাম ছাড়তে রাজি না বেপারীরা। কালকে কোরবানি। এখন কী আর করা যাবে? একটু বেশি দাম দিয়েই কিনে নিলাম গরু। তবে খুব যে বেশি দাম দিতে হয়েছে তা নয়। করোনার মধ্যে দাম একটু বেশি চাওয়াই স্বাভাবিক।”
জাতীয় পার্টির নেতা মনিরুল ইসলাম মিলনও গরু কিনেছেন কমলাপুর হাট থেকে।
তিনি ফেইসবুকে লিখেছেন, “ঢাকার বেশিরভাগ হাটে গরু নাই। বিশেষ করে উত্তরা, পূর্বাচল ৩০০ ফিট, ডুমনী, সাঈদনগর, আফতাবনগর, শাহজাহানপুর হাটে কোনো গরু নাই সকাল থেকে।
হাটে গরু কম কেন- তার ব্যাখ্যা দেন পোস্তগলা শ্মশান ঘাটের বেপারী রিয়াজ উদ্দিন।
তিনি বলেন, “পদ্মার দুই ঘাটের অবস্থা তো দেখতাসেন সবাই। মাওয়ায় ঘাট ভাঙছে, দৌলতদিয়ায় ট্রাকের লম্বা সিরিয়াল। ট্রাক আসতে পারতেসে না। গরুর হাটে তাই সঙ্কট।”
প্রতিবছর কোরবানি সামনে রেখে গ্রামের হাটগুলো থেকে গরু কিনে ঢাকাসহ বড় বড় শহরগুলোর হাটে তোলেন বেপারীরা। তবে এবার করোনাভাইরাস মহামারীর মধ্যে সারা দেশের গ্রামের হাটগুলোতে গরুর ক্রেতা সংকটের খবর এসেছে। ক্রেতা কম থাকায় প্রত্যাশিত দামের চেয়ে অনেক কম দামে গরু ছাড়তে হয়েছে প্রান্তিক খামারি ও চাষিদের।
উত্তরার বৃন্দাবন হাটের সায়িমা ডেইরি ফার্মের মালিক শামসুদ্দীন টগর ফোনে বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “শেষ দিকে উত্তরার হাটে ক্রেতার অভাব নাই। কিন্তু সে পরিমাণে গরু নাই। গরুর দাম তো খুব বেশি না। দামাদামি করে গরু নিয়ে যাচ্ছেন ক্রেতারা। একেবারে অল্প হলেও কিছুটা লাভ হচ্ছে এখন।”
বিকালে রাজধানীর আফতাবনগর হাটে কথা হয় ময়মনসিংহ থেকে আসা বেপারী শহীদুল আলমের সঙ্গে।
তিনি বলেন, “হাটের অবস্থা বুধবার সন্ধ্যা থেকে মোটামুটি ভালো যাইতেসে। ক্রেতারা আসছে। হাটে যে গরু আছিল, তাও শেষ হয়ে যাবে সন্ধ্যার পর।”
এই হাটে মা অ্যাগ্রো ফার্মের মালিক তরিকুল ইসলাম বলেন, “সাতটা গরু আনছিলাম। তার মধ্যে প্রথম চারটা গরু বিক্রিতে প্রায় ১ লাখ ৬০ হাজার টাকার মতো লস খাইসি। দুইটাতে ৫-৬ হাজার টাকা লাভ করলেও লস তো পোষাইব না।”
বাড্ডার আদর্শনগরের বাসিন্দা সুমন মিয়া আফতাবনগর হাট থেকে একটি ষাঁড় কিনেছেন ৮০ হাজার টাকায়। তাতে ২০ হাজার টাকার মতো বেশি দিতে হয়েছে বলে মনে করছেন তিনি।
সুমন বলেন, “এই গরুর দাম খুব বেশি হলে ৬০ হাজার টাকা হইত। এই গরু কিনা লাগল ২০ হাজার টাকা বেশি দিয়া। কী করা যাবে? কোরবানি তো দিতে হবে। তাই ৮০ হাজার টাকাই দিতে হল।”
ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের কোরবানির পশুর হাটগুলোর ইজারাদারদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, শুক্রবার বিকাল গড়াতেই হাট প্রায় শূন্য।
ধলপুরের বাসিন্দা ইউসুফ আলী জোয়ার্দার বলেন, “পোস্তগলা, ধলপুরে গিয়ে গরু পাইলাম না। পরে অনলাইনেই ভরসা করতে হয়েছে। ভাগ্য ভালো, একটা গরু পাওয়া গেছে।”