এবার চামড়া ৬/৭শ টাকার বেশি দিয়ে না কেনার পরামর্শ

বিশ্ব বাজার ও মহামারী পরিস্থিতি বিবেচনায় ছয়শ টাকা থেকে সাতশ টাকার মধ্যে মাঝারি আকারের গরুর চামড়া সংগ্রহ করতে ফড়িয়াদের পরামর্শ দিয়েছেন আড়ৎদাররা।

ফয়সাল আতিক নিজস্ব প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 29 July 2020, 07:54 PM
Updated : 29 July 2020, 08:02 PM

করোনাভাইরাস মহামারী, তার প্রভাবে অর্থনৈতিক সঙ্কট আর বন্যার কারণে এবার পশু কোরবানি গতবারে চেয়ে ৪০ শতাংশ কমে যেতে পারে বলে মনে করছেন বাংলাদেশ হাইড অ্যান্ড স্কিন মার্চেন্ট অ্যাসোসিয়েশনের মহাসচিব টিপু সুলতান।

বিশ্ববাজারে চামড়ার দরপতন ও দেশীয় শিল্পগুলোর সক্ষমতা কমে যাওয়া বিবেচনায় এবার কোরবানির মওসুমে প্রতি বর্গফুট গরুর চামড়া ৩৫ টাকা থেকে ৪০ টাকা এবং ছাগলের চামড়া ১৩ টাকায় নির্ধারণ করে দিয়েছে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়।

আগের বছর ট্যানারিতে প্রতি বর্গফুট লবণযুক্ত চামড়া বিক্রি হয় ৪৫ টাকা থেকে ৫০ টাকার মধ্যে।

সেবার বেশি দামে চামড়া সংগ্রহ করে মুনাফায় বিক্রি করতে পারেননি অনেক ফড়িয়া। ফলে এবছর চামড়া ব্যবস্থাপনা নিয়ে আগে থেকেই সরব থাকতে দেখা গেছে সরকারি সংস্থাগুলোকে।

কাঁচা চামড়া ব্যবসায়ী টিপু সুলতান বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, সরকার বিভিন্ন উদ্যোগ নিলেও কাঁচা চামড়া সংগ্রহের চ্যালেঞ্জ এখনও কাটেনি। কারণ ট্যানারি মালিকগুলো এবারও তাদের শত শত কোটি টাকার বকেয়া পরিশোধ করেনি। আড়ৎগুলোতে নগদ অর্থ না থাকলে চামড়ার বাজারে এর অতিরিক্ত প্রভাব পড়বেই।

“কোরবানির সময় শতভাগ পরিশোধ করে দেওয়ার নিয়ম। কিন্তু গত তিন বছর ধরে লেনদেন অনেক বড় সমস্যার মধ্য দিয়ে যাচ্ছে। প্রতি বছর ২০ থেকে ২৫ শতাংশ টাকা বকেয়া থেকে যাচ্ছে। গতবছর এফবিসিসিআই উদ্যোগ নিলেও তার ফল মেলেনি। বেশ কিছু ট্যানারি চেকের মাধ্যমে টাকা পরিশোধ করার কথা জানালেও তাদের ওইসব চেক ডিজঅনার হয়; আমরা টাকা পাইনি।”

গত বছর মাঠ পর্যায় থেকে সরকারি নির্ধারিত প্রতি বর্গফুট ৪৫/৫০ টাকাতেই চামড়া সংগ্রহ করে ফেলেছিলেন অনেক ফড়িয়া। কিন্তু বিক্রি করতে গিয়ে মুনাফা না পেয়ে উল্টো কেনা মূল্যের চেয়ে কম দামে চামড়া ছেড়ে দিতে হয়েছে অনেককে।

তখন অনেক মওসুমী চামড়া ব্যবসায়ীই তাদের হাজার হাজার টাকার বিনিয়োগ রাস্তায় ফেলে চলে যান। অনেকেই চামড়া পুঁতে ফেলেন মাটির নিচে।

ফাইল ছবি

টিপু সুলতান বলেন, “যেই দাম নির্ধারণ করা হয়েছে, একজন ফড়িয়া তার থেকে ৫/৭ টাকা কমিয়ে চামড়া কিনবেন। তাহলেই তিনি কিছুটা মুনাফা করতে পারবেন।

“এর চেয়ে বেশি দামে কিনলে সেই চামড়া নিয়ে তাকে বিপদে পড়তে হবে। ফড়িয়াদের কোনোভাবেই ৩০ টাকার ওপরে যাওয়া উচিত হবে না।”

এখন ৭০ হাজার টাকা থেকে এক লাখ টাকার মধ্যে যেসব গরু বিক্রি হচ্ছে, ওই সব গরুর চামড়ার আয়তন দাঁড়াচ্ছে ২০ থেকে ৩০ বর্গফুট। প্রতি বর্গফুট ৩০ টাকা ধরলে কোরবানিদাতার কাছ থেকে ফড়িয়ার কাছে ২০ বর্গফুটের এই চামড়া যাবে ৬০০ টাকায়। এই ফড়িয়া প্রতি বর্গফুট ৩৫ টাকায় বিক্রি করতে পারলে কিছুটা লাভের মুখে দেখবেন।

চামড়া ব্যবসায়ীরা জানান, ২০১৪ কিংবা ২০১৫ সালের দিকে বড় আকারের চামড়া তিন হাজার টাকা থেকে ৩২০০ টাকায়ও বিক্রি হয়েছে। ২০১৭ সালের দিকেও মাঝারি মানের একটি গরুর চামড়া ১২০০ টাকা থেকে ১৫০০ টাকায় বিক্রি হয়েছে। এখন বিশ্ববাজারেও চামড়ার দাম পড়তির দিকে। যেখানে প্রতি বর্গফুট ফিনিশড লেদার দুই ডলারের উপরে হাতবদল হত, এখন তা এক ডলারেরও নিচে নেমে গেছে।

এদিকে সরকার হোয়াইট ব্লু এবং কাঁচা চামড়া রপ্তানি উন্মুক্ত করলেও তার সুফল তাৎক্ষণিক পাওয়া যাবে না বলে দাবি এই খাতের ব্যবসায়ীদের।

“এটা সময়ের ব্যাপার। কারণ পুরো বিশ্ব জানে যে বাংলাদেশ থেকে কাঁচা চামড়া কিংবা হোয়াইট ব্লু রপ্তানি হয় না। তাহলে হঠাৎ করেই এই চামড়ার বাজার ধরা সহজ হবে না,” বলেন টিপু সুলতান।

চামড়ার দাম কমিয়ে নির্ধারণ করায় মাঠে এর নেতিবাচক প্রভাব পড়বে না দাবি করে তিনি বলেন, “কোরবানির চামড়ায় কারও কোনো বিনিয়োগ নেই। আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য পশু কোরবানির পর এর চামড়া বিক্রি করে ধর্মীয় শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ও গরিব মানুষের সহায়তার কাজে লাগানো হয়। যারা এর সুফল পেয়ে থাকেন, এর পেছনে তাদের সরাসরি কোনো বিনিয়োগ নেই। ফলে হয়ত তহবিলের হিস্যা কমে যাবে, কিন্তু কারও লোকসান হবে না।

“আর ফড়িয়ারা একটা নির্দিষ্ট দামে কিনে আনবেন এবং নিজের লভ্যাংশ রেখে বিক্রি করবেন। ফলে চামড়ার দরপতন এর সংগ্রহ অভিযানকে বাধাগ্রস্ত করবে না।”

ফড়িয়া ছাড়াও দেশের কওমি মাদ্রাসার ছাত্ররা প্রতিবছর কোরবানিদাতাদের কাছ থেকে ঘটা করে চামড়া সংগ্রহ করে থাকে। সরকারি অনুদানের বাইরে থাকা এসব মাদ্রাসা, এতিমখানা ও হেফজখানার বার্ষিক আয়ের বড় একটি অংশ আসে কোরবানির চামড়া থেকে। দরপতনের ফলে সংগ্রহ কাজের সঙ্গে কওমি মাদ্রাসা সংশ্লিষ্টদের সম্পৃক্ততা কমে আসবে বলে অনেকের ধারণা।

ঢাকার মিরপুর-১ নম্বর সেকসনের আহম্মদনগরে জামিয়া ইসলামি আরাবিয়া মাদ্রাসা ও এতিমখানার শিক্ষক মাহমুদুল হাসান বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, বিগত বছরগুলোতে তারা অনুদান হিসাবে চামড়া সংগ্রহ করার পাশাপাশি কিছু চামড়া কিনে তা ট্যানারিগুলোর কাছে বিক্রি করতেন। কিন্তু এবার চামড়া কেনার পরিকল্পনা থেকে সরে এসেছেন। মহল্লাবাসী আগ্রহ করে যেসব চামড়া দেবেন, কেবল তাই সংগ্রহ করা হবে।

“প্রতিবছর ছাত্রদের দিয়ে চামড়া সংগ্রহ করা হলেও এবার লকডাউনের কারণে ছাত্রদের উপস্থিতিও কম। কেবল যারা মাদ্রাসার আশপাশে থাকে তাদেরকে দিয়েই চামড়া সংগ্রহ করানো হবে।”

গত বছর প্রায় দুইশ চামড়া সংগ্রহ করে ট্যানারিতে বিক্রি করেছিল মাদ্রাসাটি। এবারও চামড়া সংগ্রহ করতে বৃহত্তর মিরপুর এলাকায় পোস্টার সাঁটিয়েছে তারা।

আরও পড়ুন