বাজার বুঝে চামড়া কেনার পরামর্শ চট্টগ্রামের আড়তদারদের

বাজারে চাহিদা ও দামের পরিস্থিতি ভালো করে পর্যালোচনা না করে কোরবানির পশুর চামড়া সংগ্রহ করলে মৌসুমী ব্যবসায়ীরা গত বারের মতো লোকসানে পড়তে পারেন বলে সতর্ক করেছেন চট্টগ্রামের আড়তদাররা।

উত্তম সেনগুপ্তবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 27 July 2020, 02:08 PM
Updated : 27 July 2020, 02:19 PM

তাই গতবারের পুনরাবৃত্তি যেন না ঘটে সেজন্য মৌসুমী ব্যবসায়ীদের এবছর ‘বুঝে শুনে’ চামড়া কেনার পরামর্শ দিয়েছেন তারা।

বৃহত্তর চট্টগ্রাম কাঁচা চামড়া আড়তদার ব্যবসায়ী সমবায় সমিতির সাবেক সভাপতি মো. মুসলিম উদ্দিন বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, সরকার চামড়ার যে দাম নির্ধারণ করে দেয়, সেটা সংরক্ষণ করার পরের দাম। অনেকে মনে করেন আড়তদাররা এই দামে মৌসুমী ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে চামড়া সংগ্রহ করবেন, যেটা ভুল।

“মৌসুমী ব্যবসায়ীরা চামড়ার বাজার সম্পর্কে ধারণা না রেখে বেশি দামে চামড়া ক্রয় করেন। আর আড়তদারদের কাছে বেশি দামে বিক্রি করতে চান। যার কারণে আড়তদাররা তাদের কাছ থেকে চামড়া ক্রয় করেন না।”

মুসলিম জানান, মৌসুমী ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে সংগ্রহ করা প্রতিটি চামড়ায় লবণ লাগানো, শ্রমিকদের বেতনসহ আরও ১৭ থেকে ১৮ টাকা বেশি খরচ হয়। সবমিলিয়ে এসব চামড়া ট্যানারিতে বিক্রি করতে হবে প্রতি বর্গফুট ২৮ থেকে ৩২ টাকায়।

চট্টগ্রামের আড়তদাররা জানায়, এবছর চট্টগ্রাম থেকে চার লাখ গরু, এক লাখ ছাগল, ১৫ হাজার মহিষ ও ১৫ হাজার ভেড়ার চামড়া সংগ্রহের টার্গেট করেছেন তারা। তবে করোনাভাইরাস পরিস্থিতিতে এই সংখ্যা কিছুটা কমতে পারে।

আড়তদাররা প্রতিটি গরুর চামড়া আকার ভেদে ১৫০ থেকে ২৫০ টাকার বেশি দিয়ে মৌসুমী ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে সংগ্রহ করতে পারবেন না বলে জানান চামড়া ব্যবসার সাথে সংশ্লিষ্টরা।

‘নায্য দাম’ না পাওয়ার অজুহাতে গত বছর সড়কে ফেলে রাখা হয় কোরবানির পশুর চামড়া। চাহিদা মতো দামে এসব চামড়া আড়তদারদের কাছে বিক্রি করতে না পেরে এসব চামড়া রাস্তায় পঁচে যায়। দেশের চামড়া শিল্প বড় রকমের সঙ্কটে পড়েছিল। পুঁজি হারিয়েছিল অনেক মৌসুমী ব্যবসায়ী।

দেশে সারা বছর যে পরিমাণ পশু জবাই হয় তার সিংহ ভাগ হয় কোরবানির ঈদে। যারা কোরবানি দেন তাদের বাড়ি বাড়ি গিয়ে মৌসুমী ব্যবসায়ী কিংবা মধ্যস্বত্বভোগীরা চামড়া সংগ্রহ করে বিক্রি করেন আড়তদারদের কাছে। তারা সে চামড়া সংগ্রহ করে বিক্রি করেন ট্যানারিগুলোতে। ট্যানারিগুলো কী দামে চামড়া সংগ্রহ করবে তা নির্ধারণ করে দেয় বাণিজ্য মন্ত্রণালয়।

রোববার মন্ত্রণালয় থেকে এবছর ট্যানারি মালিকরা কত দামে আড়তদারদের কাছ থেকে চামড়া সংগ্রহ করবে সে দাম নির্ধারণ করে দেয়।

এবছর সরকার নির্ধারিত দাম অনুযায়ী ট্যানারি মালিকরা লবণযুক্ত প্রতি বর্গফুট চামড়া ক্রয় করবে ঢাকায় ৩৫ থেকে ৪০ টাকায়। আর ঢাকার বাইরের আড়তদারদের কাছ থেকে কিনে নেবেন ২৮ থেকে ৩২ টাকায়।

গত বছর এই দাম ছিল ঢাকায় ৪৫ থেকে ৫০ টাকায় আর ঢাকার বাইরে ৩৫ থেকে ৪০ টাকায়।

ব্যবসায়ীরা জানান, সাম্প্রতিক বছরগুলোর মধ্যে এই বছরই সবচেয়ে কম দাম নির্ধারণ করা হয়েছে চামড়ার। যার কারণে আড়তদারও কম দামে চামড়া সংগ্রহ করবেন। সে বাজার না বুঝে মৌসুমী ব্যবসায়ীরা চামড়া সংগ্রহ করলে লোকসান গুনতে হবে তাদের।

চট্টগ্রাম কাঁচা চামড়া আড়তদার ব্যবসায়ী সমবায় সমিতির এডহক কমিটির আহবায়ক মাহবুব আলম বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে জানান, সার্বিক পরিস্থিতি বিবেচনা না করে মৌসুমী ব্যবসায়ীরা বেশি দামে চামড়া ক্রয় করে ফেলেন, যার কারণে তারা লোকসানের সম্মুখীন হয়।

এদিকে চট্টগ্রামে ট্যানারি বন্ধ হয়ে যাওয়ায় চট্টগ্রামের আড়তদারদের ঢাকার ট্যানারি মালিকদের প্রতি নির্ভরশীল হতে হয়।

চট্টগ্রামে একসময় ২০টির বেশি ট্যানারি ছিল, এখন আছে দুটি। তার মধ্যে ইটিপি না থাকায় মদিনা ট্যানারির কার্যক্রম বন্ধ করে দিয়েছে পরিবেশ অধিদপ্তর। এখন শুধু কার্যক্রম চালু আছে রীফ লেদার নামে একটি ট্যানারির।

এই ট্যানারির কাছে চট্টগ্রামের আড়তদাররা ১০ থেকে ১২ শতাংশ চামড়া বিক্রি করে। বাকি চামড়া বিক্রির জন্য ঢাকার ট্যানারির ওপর নির্ভর করতে হয়।  

মাহবুব বলেন, “ট্যানারি মালিকদের সাথে আড়তদারদের ব্যবসা হয় মৌখিক কথায় বিশ্বাসের ভিত্তিতে, যার কারণে ট্যানারি মালিকদের কাছে এখনও চট্টগ্রামের আড়তদাররা কোটি কোটি টাকা পাওনা রয়েছে।“

তিনি জানান, গত বছরের পাওনা ৪০ কোটির মধ্যে মাত্র ১৫ কোটি টাকা সংগ্রহ করতে পেরেছেন, বাকি টাকা এখনও বকেয়া। এছাড়াও তার আগের চার বছরেরও অনেক টাকা বকেয়া রেখেছে ট্যানারি মালিকরা। 

চট্টগ্রামের কাঁচা চামড়ার ব্যবসায়ীদের অভিযোগ, ঢাকায় চামড়া বিক্রি করায় ঠিক সময়ে পাওনা না পেয়ে লোকসান গুনতে হয় তাদের।

মুসলিমের দাবি, প্রতি বছর চট্টগ্রামের কাঁচা চামড়ার আড়তদাররা যে পরিমাণ টাকার চামড়া বিক্রি করেন তার বেশির ভাগ টাকাই বকেয়া থেকে যায়। ২০১৫ থেকে ২০১৮ সালের টাকা এখনও বকেয়া আছে।

বাণিজ্য মন্ত্রনালয়, এফবিসিসিআইর মাধ্যমে ট্যানারি মালিকদের সাথে একাধিকবার বৈঠক হয়েছে সে বেঠকে তারা গতবারের টাকা পরিশোধ করে আগের বছরগুলোর টাকা পর্যায়ক্রমে পরিশোধের আশ্বাস দিয়েছেন।