শ্রমবাজার ধরতে দক্ষ কর্মী গড়ে তোলায় জোর বায়রার

মহামারীপরবর্তী সময়ে আন্তর্জাতিক শ্রমবাজারের জন্য বাংলাদেশি কর্মীদের আরো দক্ষ করে গড়ে তোলার আহ্বান জানিয়েছেন বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন অফ ইন্টারন্যাশনাল রিক্রুটিং এজেন্সির (বায়রা) সভাপতি বেনজীর আহমেদ।

নিজস্ব প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 15 July 2020, 04:24 PM
Updated : 15 July 2020, 04:24 PM

বুধবার বায়রার এক অনলাইন মতনিনিময় সভায় তিনি বলেন, “কোভিড-১৯ পরবর্তী পরিস্থিতির কথা চিন্তা করে শ্রমিকদের দক্ষ করে গড়ে তুলতে হবে। তাহলে আন্তর্জাতিক শ্রমবাজার ধরা যাবে।”

যারা প্রবাস থেকে ফিরে আসছেন তাদের আরো দক্ষ করে গড়ে তুলতে বায়রা সরকারের সঙ্গে কাজ করবে জানিয়ে সংগঠনের মহাসচিব শামীম আহমেদ চৌধুরী নোমান বলেন, “আগামীতে বিভিন্ন দেশের স্বাস্থ্য ও কৃষিখাতে প্রচুর দক্ষ কর্মীর দরকার হবে। বাংলাদেশের কর্মীদের প্রশিক্ষণ দিয়ে দক্ষ করে গড়ে তুলতে হবে।

“কোনো দেশ থেকে যেন বাংলাদেশি কর্মীদের ফিরে আসতে না হয় সেজন্য সরকার কাজ করছে। যত দ্রুত করোনাভাইরাস পরিস্থিতি ভালো হয়ে আসবে তত দ্রুত কর্মীদের চাহিদা বাড়বে।”

বিশ্বের বিভিন্ন দেশে এক কোটির বেশি প্রবাসী কর্মী রয়েছেন, যারা বিভিন্ন সময়ে উন্নত জীবনের আশায় দেশ ছেড়েছেন। প্রতিবছর ৭ লাখের বেশি কর্মী দেশের বাইরে কাজ করতে যান, যাদের বেশিরভাগই অদক্ষ বা আধা দক্ষ।  

দেশের বাইরে যেতে গিয়ে অনেককেই বিভিন্ন সময়ে হয়রানি ও প্রতারণার শিকার হতে হয়। কোনো কোনো রিক্রুটিং এজেন্সি মানব পাচারেও জড়িত বলে অভিযোগ এসেছে বিভিন্ন সময়ে।

দেশের বাইরে কর্মী পাঠানোর সঙ্গে জড়িতদের ‘সংগঠনের ভাবমূর্তির কথা চিন্তা করে’ আরো স্বচ্ছতার সঙ্গে কাজ করার আহ্বান জানিয়ে বায়রা সভাপতি বেনজীর বলেন,  “সবাই সুন্দরভাবে, স্বচ্ছভাবে ব্যবসাটা করেন।”

দেশের কল্যাণে  রিক্রুটিং এজেন্সি ব্যবসার সঙ্গে জড়িতদের ‘অবদানের’ কথা তুলে ধরে বায়রা সভাপতি বলেন, “তারা যদি টিকে থাকতে না পারে তাহলে রেমিটেন্সের উপর প্রভাব পড়বে, রিজার্ভের উপর প্রভাব পড়বে। এজন্য এই ব্যবসায় যারা জড়িত তাদেরকে সরকারের প্রণোদনা দিতে হবে।”

সভায় বলা হয়, মহামারীর মধ্যে ১৬শ রিক্রুটিং এজেন্সির ৪৫ হাজার কর্মীর পেছনে মাসে ৪৮ থেকে ৫০ কোটি টাকা খরচ হচ্ছে, যদিও আয়ের পথ বন্ধ। 

এছাড়া প্রায় এক লাখ কর্মীর ভিসা প্রসেসিংয়ের পেছনে এরইমধ্যে অন্তত ১৫ কোটি টাকা খরচ হয়েছে জানিয়ে শামীম আহমেদ চৌধুরী নোমান বলেন, তারা বিদেশ যেতে পারবেন কি না তা ‘অনেকটাই অনিশ্চিত’।

এরকম পরিস্থিতিতে রিক্রুটিং এজেন্সির মালিকরা ‘ক্রান্তিকাল অতিক্রম করছে’, সরকারের কাছে প্রণোদনার দাবি জানান তিনি।  

বায়রা মহাসচিব বলেন, “করোনাভাইরাসের কারণে যেসব কর্মী প্রবাস থেকে ফিরে আসছেন, তাদের কল্যাণের জন্য বায়রা প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়কে ৩০ লাখ টাকা দেবে।”

এছাড়া বায়রার তরফ থেকে ইতোমধ্যে প্রধানমন্ত্রীর ত্রাণ ও কল্যাণ তহবিলে ৫০ লাখ টাকা অনুদান দেওয়া হয়েছে বলেও জানান তিনি।

টিকেটে অতিরিক্ত ভাড়া নয়

কোভিড-১৯ সঙ্কটের মধ্যে বিভিন্ন দেশের সঙ্গে সরাসরি ফ্লাইট চালু না হলেও বিশেষ ফ্লাইটে প্রবাসীরা দেশ ছেড়ে যাচ্ছেন। এ পরিস্থিতিতে উড়োজাহাজের আসন পাওয়া সহজ হচ্ছে না বলে বাংলাদেশি কর্মীদের কাছ থেকে বিভিন্ন ট্র্যাভেল এজেন্সি অতিরিক্ত ভাড়ায় টিকিট বিক্রি করছে বলে অভিযোগ রয়েছে।

এ প্রসঙ্গে বায়রা মহাসচিব সভায় বলেন,  “বাংলাদেশ থেকে কোনো কর্মী প্রবাসে যাওয়ার সময় তার কাছ থেকে যেন অতিরিক্ত ভাড়া নেওয়া না হয়, সেজন্য প্রবাসী কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের কাছে বায়রা দাবি জানিয়েছে। কারণ তাদের বাড়তি ভাড়া দিতে হলে রিক্রুটিং এজেন্সিকে ভর্তুকি দিতে হয় ।”

যেসব উড়োজাহাজে করে বাংলাদেশের কর্মীরা স্মার্টকার্ড নিয়ে বিভিন্ন দেশে কাজ করতে যান, তাদের জন্য ‘বিশেষ ভাড়ার’ ব্যবস্থা করতে বেসামরিক বিমান ও পর্যটন মন্ত্রণালয়ের কাছে প্রবাসী কল্যাণ মন্ত্রণালয় অনুরোধ জানিয়েছে বলে জানান তিনি।

শামীম বলেন, “এটা হলে অভিবাসন খরচ যেমন ঠিক থাকবে, তেমনি কাউকে অতিরিক্ত ভাড়া দিতে হবে না।”

বায়রার জ্যেষ্ঠ সহ-সভাপতি শাহাদত হোসেনসহ বিভিন্ন পর্যায়ের নেতারা মতবিনিময় সভায় উপস্থিত ছিলেন।