ডিজিটাইজেশনই হবে মূল চালিকাশক্তি: মোস্তাফা জব্বার

করোনাভাইরাস মহামারীর কারণে ব্যবসায়িক কৌশল পরিবর্তন করতে হবে এবং সেখানে ডিজিটাইজেশনই মূল চালিকাশক্তি হবে বলে মনে করেন ডাক ও টেলিযোগাযোগমন্ত্রী মোস্তাফা জব্বার।

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 8 July 2020, 02:58 PM
Updated : 8 July 2020, 02:58 PM

পরিবর্তনের ধারা অব্যাহত রাখতে গ্রামীণফোনকে প্রত্যন্ত অঞ্চলে উচ্চগতির ইন্টারনেট ফোরজি নিশ্চিত করার আহ্বান জানিয়েছেন তিনি।

বুধবার গ্রামীণফোনের অ্যাকসেলেরেটর প্রোগ্রামের ষষ্ঠ ব্যাচের স্টার্টআপদের জন্য প্রথমবারের মতো ভার্চুয়াল ডেমো ডে’র অনুষ্ঠানে মোস্তাফা জব্বার এ কথা বলেন।

তিনি বলেন, “আমি বিশ্বাস করি কোভিড-১৯ এ অনেক কিছুই পরিবর্তন হবে, ব্যবসায়িক কৌশল পরিবর্তন করতে হবে এবং সেখানে ডিজিটাইজেশন হবে মূল চালিকাশক্তি।”

“প্রচলিত ব্যবসা পরিবর্তিত হয়ে মেধাভিত্তিক শিল্প গড়ে উঠবে, আর এসব কিছুর মূল চালিকাশক্তি হবে ডিজিটাইজেশন। মহামারীকালে ইন্টারনেট ব্যবহার এক হাজার জিবিপিএস থেকে বেড়ে এক হাজার ৭০০ জিবিপিএস দাঁড়িয়েছে, প্রমাণিত হচ্ছে আমরা খুব দ্রুত পরিবর্তনের দিকে যাচ্ছি।”

মেধাভিত্তিক শিল্প প্রতিষ্ঠায় ইন্টারনেট নিশ্চিতের উপর গুরুত্বারোপ করে মোস্তফা জব্বার বলেন, “সারা দেশে উচ্চগতির ইন্টারনেট নিশ্চিত করতে হবে। আমরা ইউনিয়ন পর্যন্ত ব্রডব্যান্ড ইন্টারনেট পৌছে দিচ্ছি। তবে বেশিরভাগ গ্রাহকই এখন মোবাইল ইন্টারনেট ব্যবহার করে। এজন্য গ্রামীণফোনকে প্রত্যন্ত অঞ্চল পর্যন্ত উচ্চগতির মোবাইল ইন্টারনেট নিশ্চিত করতে হবে। পরিবর্তনের ধারা অব্যাহত রাখতে এর বিকল্প নেই।” 

উদ্যোক্তারা ডিজিটাল বাংলাদেশ বির্নিমানে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে আশা প্রকাশ করে টেলিযোগাযোগমন্ত্রী বলেন, “আন্তর্জাতিক প্রতিষ্ঠান সিড স্টারকে সাথে নিয়ে বাংলাদেশের উদ্ভাবনী চিন্তাধারাকে সহযোগিতার উদ্যোগ নেয়া সত্যিই প্রশংসার দাবিদার।”

গ্রামীণফোনের প্রধান নির্বাহী ইয়াসির আজমান বলেন, “ডিজিটাইজেশনে সম্ভাবনার নতুন দিগন্ত উম্মোচনে অবদান রাখতে সমাধান বের করা, নতুন চাকরির সুযোগ সৃষ্টি করার জন্য আমি প্রযুক্তিবান্ধব সকল উদ্ভাবকদের ধন্যবাদ দিতে চাই। বিশেষ করে এই কঠিন সময় মোকাবেলায় যখন আমাদের উদ্ভাবন দরকার এবং একই সাথে দেশের প্রত্যেকটি পর্যায় থেকে সবার অবদান এবং সহযোগিতা গুরুত্বপূর্ণ।

“আমি বিশ্বাস করি ভবিষৎ হবে প্রযুক্তিনির্ভর এবং এসকল উদ্ভাবনের উপর নির্ভর করেই আমরা কোভিড-১৯ এর সামাজিক-অর্থনৈতিক প্রভাব কাটিয়ে উঠতে পারব।”

গ্রামীণফোনের চিফ ডিজিটাল অ্যান্ড স্ট্র্যাটেজি অফিসার সোলায়মান আলম বলেন, “বৈশ্বিক মহামারী স্টার্টআপগুলোর জন্য আমাদের শেখার এবং উদ্ভাবনী প্রযুক্তি নিয়ে আসতে সৃষ্টিশীল হওয়ার সুযোগ করে দিয়েছে, যা পরবর্তীতে স্টার্টআপগুলোকে সহায়তা করবে। এ বৈশ্বিক মহামারী সবার প্রতিদিনকার জীবনযাত্রাকে আরও বেশি ডিজিটাল প্ল্যাটফর্মগুলোর সাথে সম্পৃক্ত করেছে। এ বিষয়টিই স্টার্টআপগুলোকে বিকশিত হতে আরও বেশি সাহায্য করবে।”

গত নভেম্বরে শুরু হওয়া কর্মসূচি শেষে অ্যাকসেলেরেটর প্রোগ্রামের ষষ্ঠ ব্যাচের স্টার্টআপগুলোর জন্য প্রথমবারের মতো এ ভার্চুয়াল ডেমো ডে’র আয়োজন করা হয়।

এ কর্মসূচি চলাকালীন নিজেদের ব্যবসায়িক ধারণার উন্নয়নে স্টার্টআপগুলো স্থানীয় ও আন্তর্জাতিক খাত বিশেষজ্ঞ ও পেশাদারদের কাছ থেকে নানা পরামর্শ পেয়েছে। এছাড়াও এ কর্মসূচিতে স্টার্টআপগুলোর ব্যবসায়িক প্রবৃদ্ধিতে তাদের সম্ভাব্য বিনিয়োগকারীদের সাথে যোগাযোগে সহায়তা করেছে। এ কর্মসূচিতে প্রতিটি দলকে আনুমানিক ৬৫ লাখ টাকা সমমানের সহায়তা দেয়া হয়।

ডেমো ডে’তে শতাধিক দেশি-বিদেশি বিনিয়োগকারী, বিশেষজ্ঞ, অ্যাকাডেমিক এবং গ্রামীণফোন ও সিডস্টারের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের সামনে নিজেদের ব্যবসায়িক ধারণা উপস্থাপন করে গ্রামীণফোন অ্যাকসেলেরেটর প্রোগ্রামের আটটি স্টার্টআপ।

আটটি স্টার্টআপের পরিচিতি

লেট’স ফার্নিশ

অতিরিক্ত অর্থ ব্যয় ছাড়াই বাংলাদেশিদের জীবনযাত্রার মানোন্নয়নে দেশের প্রথম ফার্নিচার রেন্টাল প্ল্যাটফর্ম ‘লেট’স ফার্নিশ’। এ প্ল্যাটফর্মে ব্যবহারের ওপর ভিত্তি করেই ফার্নিচারের ভাড়া দিতে হবে এবং নতুন ট্রেন্ড অনুযায়ী গ্রাহকরা ফার্নিচার পরিবর্তন করতে পারবেন। লেট’স ফার্নিশ ব্যক্তিত্ব, আভিজাত্য এবং স্থায়ীত্বের ওপর ভিত্তি করে স্বতন্ত্রভাবে ফার্নিচার ডিজাইন ও তৈরি করবে। 

আমার স্টক

আমার স্টক হচ্ছে স্টক মার্কেট এবং ডেটা ওয়েবসাইট; যা আর্থিক বিশ্লেষণ, গবেষণা এবং ডেটা ভিজ্যুয়ালাইজেশনে সহায়তা করবে।

শপওয়ে

যেসব রিটেইলার সাধারণত অনলাইনে ব্যবসা পরিচালনা করেন না, তাদের জন্য ডিজিটাল মার্কেট হিসেবে কাজ করবে শপওয়ে। বাংলাদেশের রিটেইল অবকাঠামো ঠিক করতে ডেটাচালিত ডিস্ট্রিবিউশন নেটওয়ার্ক তৈরিতে কাজ করছে শপওয়ে। 

ঢাকা কাস্ট

৪০ শতাংশ সাশ্রয়ে ডায়াবেটিস রোগীদের জন্য তাদের বাসায় সব পণ্য ও সেবা পৌঁছে দেবে ঢাকা কাস্ট। বৈশ্বিক মহামারী সময়ে সব ধরনের রোগীদের জন্য অনলাইন লাইভ কনসালটেন্সি প্ল্যাটফর্ম হিসেবে কাজ করছে ঢাকা কাস্ট।

অটোট্র্যাক

গাড়ির যন্ত্রাংশ এবং এ সংক্রান্ত সেবাদানের ই-কমার্স প্ল্যাটফর্ম অটোট্র্যাক। অনলাইনে সহজে ও ঝামেলাহীনভাবে মোটর সাইকেলের যন্ত্রাংশ খুঁজে পেতে ও কেনার জন্য এটি কার্যকর একটি প্ল্যাটফর্ম।

এক্সপ্লয়েট

দেশের মধ্যে ভ্রমণের ক্ষেত্রে ওয়ান-স্টপ ডিজিটাল সমাধান হিসেবে কাজ করবে এক্সপ্লয়েট। বিভিন্ন ট্যুরিজম এজেন্সির দেয়া আকর্ষণীয় নানা অফার এ প্ল্যাটফর্ম ব্যবহারকারীরা পছন্দ করতে পারবেন, অফারের মধ্যে তুলনা করতে পারবেন এবং নিজেদের পছন্দের মতো ট্যুর প্যাকেজ তৈরি করতে পারবেন। এ প্ল্যাটফর্ম বাংলাদেশি খাবার, ভ্রমণস্থান এবং সংস্কৃতির প্রচারে কাজ করে।

ল্যান্ডনক

ব্যবসায়ের প্রতিযোগিতামূলক এ সময়ে মাঝারি থেকে বৃহৎ প্রতিষ্ঠান যেমন: এমএনও, এমএসএস, এফএমসিজি, ফার্মাসিউটিক্যালস, এনজিও, ব্যাংক, ডিস্ট্রিবিউটর এবং ডেলিভারি খাতের প্রতিষ্ঠানকে এ প্ল্যাটফর্ম তাদের মাঠকর্মী, টেকনিশিয়ান, মার্কেটিং রিপ্রেজেন্টিটিভ, বিক্রয়কর্মীসহ মাঠ পর্যায়ের মানব সম্পদ ব্যবস্থাপনায় ও ট্র্যাকিং- এ সহায়তা করবে। এক্ষেত্রে প্রতিষ্ঠানগুলোর কর্মকর্তারা মাঠকর্মীদের কাজের সব তথ্য পাবেন এবং তাদের কাজ পর্যবেক্ষণ করতে পারবেন।

দর্জি-ই

পোশাক খাতে এন্ড-টু-এন্ড সেবাদাতা প্ল্যাটফর্ম দর্জি-ই।