‘স্বেচ্ছা অবসরে’ পাঠানো হচ্ছে ২৫ হাজার পাটকল শ্রমিককে

ধারাবাহিকভাবে লোকসানে থাকা রাষ্ট্রায়ত্ত পাটকলগুলোর প্রায় পঁচিশ হাজার স্থায়ী শ্রমিককে স্বেচ্ছা অবসরে (গোল্ডেন হ্যান্ডশেক) পাঠানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার।

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 28 June 2020, 10:54 AM
Updated : 2 July 2020, 12:03 PM

এর বিরোধিতায় সারা দেশের ২৬টি পাটকলের শ্রমিকদের আন্দোলনের ঘোষণার মধ্যেই বস্ত্র ও পাটমন্ত্রী গোলাম দস্তগীর গাজী রোববার এক ভার্চুয়াল সংবাদ সম্মেলনে আনুষ্ঠানিকভাবে বিষয়টি জানান।

তিনি বলেন, “পাটকলগুলোতে লোকসান হচ্ছে, এজন্য সরকার চিন্তা করেছে শ্রমিকদের গোল্ডেন হ্যান্ডশেক দিয়ে এই খাতকে এগিয়ে নিতে।”

বস্ত্র ও পাট সচিব লোকমান হোসেন মিয়া বলেন, পাটকলগুলোতে ২৪ হাজার ৮৮৬ জন স্থায়ী কর্মচারী রয়েছেন।

“প্রধানমন্ত্রী নির্দেশনা দিয়েছেন, গোল্ডেন হ্যান্ডশেকের মাধ্যমে শ্রমিকদের চাকরির অবসান করতে। পাটকল শ্রমিকদের গোল্ডেন হ্যান্ডশেক দেওয়ার পর পিপিপির (সরকারি-বেসরকারি অংশীদারিত্ব) আওতায় পাটকলগুলোর আধুনিকায়ন করে উৎপাদনমুখী করা হবে। তখন এসব শ্রমিক সেখানে চাকরি করার সুযোগ পাবেন।”

২০১৩ সাল থেকে এ পর্যন্ত ৮ হাজার ৯৫৪ জন পাটকল শ্রমিক অবসরে গেছেন জানিয়ে সচিব বলেন, “অর্থ সঙ্কটে তাদের অবসর ভাতা দেওয়া এখনও সম্ভব হয়নি।”

বাংলাদেশ পাটকল করপোরেশনের (বিজেএমসি) অধীনে থাকা ২৬টি পাটকলের মধ্যে মনোয়ার জুট মিল বন্ধ রয়েছে। এসব কারখানায় ২৪ হাজার ৮৬৬ জন স্থায়ী শ্রমিকের বাইরে তালিকাভুক্ত ও দৈনিক মজুরিভিত্তিক শ্রমিক আছে প্রায় ২৬ হাজার।

বেসরকারি খাতের পাটকলগুলো লাভ দেখাতে পারলেও বিজেএমসির আওতাধীন মিলগুলো বছরের পর বছর লোকসান করে যাচ্ছে, যার পেছনে অব্যবস্থাপনা, অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগ রয়েছে।

এদিকে স্থায়ী শ্রমিকদের অবসরে পাঠানোর উদ্যোগের প্রতিবাদে যৌথভাবে আন্দোলনে যাওয়ার ঘোষণা দিয়েছে পাটকল শ্রমিক লীগ এবং রাষ্ট্রায়ত্ত পাটকল সিবিএ ও নন-সিবিএ সংগ্রাম পরিষদ।

শনিবার খুলনা অঞ্চলের পাটকলগুলোর গেইটে শ্রমিক সমাবেশ করে সোমবার রাজপথে অবস্থান, মঙ্গলবার মিলগেইটে অবস্থানের কর্মসূচি ঘোষণা করা হয়েছে। এ বিষয়ে প্রধানমন্ত্রীর হস্তক্ষেপ চেয়ে স্মারকলিপিও দেওয়া হবে বলে শ্রমিক নেতারা জানিয়েছেন।

তবে রোববার আনুষ্ঠানিকভাবে সরকারের সিদ্ধান্ত জানিয়ে পাটমন্ত্রী ভার্চুয়াল সংবাদ সম্মেলনে বলেন, প্রধানমন্ত্রী বকেয়সহ সব টাকা একসঙ্গে শ্রমিকদের দেওয়ার নির্দেশনা দিয়েছেন। আগে যারা অবসরে গেছেন, তাদের সব টাকাও একই সঙ্গে পরিশোধ করতে বলেছেন ।

বস্ত্র ও পাটমন্ত্রী গোলাম দস্তগীর গাজী

“নতুন বাজেটের টাকা হাতে পাওয়ার পরই শ্রমিকদের সব টাকা দিয়ে দেওয়া হবে। আগামী সেপ্টেম্বর মাসের মধ্যে শ্রমিকদের সব টাকা এক সাথে দেওয়া হবে।… এজন্য ৪ হাজার ৮৬৯ কোটি টাকা লাগবে।”

আগামী ছয় মাসের মধ্যে এসব পাটকল পিপিপি’র মাধ্যমে চালু করা হবে জানিয়ে গোলাম দস্তগীর বলেন, “তখন মিলগুলোতে এসব শ্রমিক চাকরি করতে পারবেন। মিলগুলোকে লোকসান থেকে বাঁচতে গিয়ে পিপিপির মাধ্যমে চালু করা হবে।” 

রাষ্ট্রায়ত্ত পাটকলগুলোকে লাভজনক করতে ২০১৮ সালে স্বল্প, মধ্য ও দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা নিয়েছিল বিজেএমসি। পাটকলের জমি লিজ দেওয়া, কৃষকদের কাছ থেকে ন্যায্যমূল্যে পাট কিনতে ১ হাজার কোটি টাকার ঘূর্ণমান তহবিল গঠন, বহুমুখী পাটপণ্যের কারখানা স্থাপনসহ বিভিন্ন উদ্যোগের কথা ছিল সেখানে।

সেই পরিকল্পনা নিয়ে এক প্রশ্নের জবাবে পাটমন্ত্রী বলেন, “আমরা ব্যর্থ না। ব্যবসা করার দায়িত্ব সরকারের না, কিন্তু আমাদের উপর এই দায়িত্ব পড়ে গিয়েছিল। সরকারিভাবে ব্যবসা সেবাখাতই করে। প্রতিযোগিতামূলক বাজারেই ব্যবসা হয়, এটা ব্যর্থতা না।”

বস্ত্র ও পাট সচিব বলেন, ১৯৭২ সালে পাটকলগুলো জাতীয়করণ হয়। পরে বিভিন্ন সময় সরকারি-বেসরকারিকরণ করা হয়।

“রাষ্ট্রায়ত্ত পাটকলগুলো গত ৪৪ বছরের মধ্যে মাত্র ৪ বছর লাভ করেছে, এরপর কখনো লাভ করতে পারেনি। ৪৮ বছরে এই খাতে সরকারকে ১০ হাজার ৬৭৪ কোটি টাকা ভর্তুকি দিতে হয়েছে। প্রতি বছর শ্রমিকের মজুরিসহ খরচ মেটাতে সরকারের উপর নির্ভর করতে হয়।”

শ্রমিকদের ‘গোল্ডেন হ্যান্ডশেক’ দেওয়ার পর এসব কারখানাকে উৎপাদন ও মুনফামুখী করতে সরকার ‘বিশেষ ব্যবস্থা’ নেবে বলে মন্তব্য করেন পাট সচিব।

র‌্যাব মহাপরিচালক চৌধুরী আবদুল্লাহ আল মামুন খুলনা থেকে এই সংবাদ সম্মেলনে যুক্ত ছিলেন। সেখানে তার সঙ্গে স্থানীয় প্রশাসনের কর্মকর্তা, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর কর্মকর্তা ছাড়াও পাটকল শ্রমিক সংগঠনের নেতারা উপস্থিত ছিলেন।

র‌্যাব মহাপরিচালক বলেন, সবাইকে সঙ্গে নিয়ে তিনি সরাসরি মন্ত্রীর বক্তব্য শুনেছেন। এরপর তিনি সবার সঙ্গে সভা করবেন।