মহামারীকালে প্রস্তুতি অনলাইন পশুর হাটে

ঘরবন্দি রোজার ঈদ কাটানোর পর কোরবানির ঈদেও যে করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাব কমবে, তেমন আভাস মিলছে না বলে অনলাইনে পশু কেনায় মানুষের আগ্রহ বাড়বে ধরে নিয়ে প্রস্তুতি নিতে শুরু করেছে অনলাইন মার্কেট প্লেসগুলো।

শামীম আহমেদ জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 25 June 2020, 02:34 PM
Updated : 25 June 2020, 02:40 PM

তারা বলছেন, ছোঁয়াচে এই ভাইরাসের সংক্রমণ এড়াতে অনলাইনে পশু বিক্রিতেও এবার বাড়তি সতর্কতা নিতে হচ্ছে।

চাঁদ দেখা সাপেক্ষে আগামী ১ অগাস্ট মুসলিমদের অন্যতম প্রধান ধর্মীয় উৎসব ঈদুল আজহা উদযাপিত হতে পারে বাংলাদেশে।

সারা বছর দেশে যে সংখ্যক পশু জবাই হয়, তার বড় অংশ এই কোরবানির ঈদের সময় হয়।

ইতোমধ্যে রাজধানীর দুই সিটি করপোরেশনে ২৪টি কোরবানির পশুর হাট বসানোর তালিকা চূড়ান্ত হয়েছে। স্বাস্থ্য বিধি মেনে সারাদেশে পশুর হাট বসানোর কথা বলেছেন স্থানীয় সরকারমন্ত্রী।

তবে করোনাভাইরাস অত্যন্ত ছোঁয়াচে বলে জনসমাগমে তা ছড়ানোর ঝুঁকিও বেশি; ফলে হাটের মতো স্থানে যাওয়ার ঝুঁকিতে অনেকে যেতে চাইবেন না।

যেহেতু এই সময়ে মানুষের অনলাইনে নিত্যপণ্য কেনা অনেক বেড়েছে, তাতে ধারণা করা যায়, কোরবানির পশুও অনেকে এবার সেভাবেই কিনতে চাইবেন।

অনলাইনে কোরবানির পশু সরবরাহ আগে থেকে করে আসছে বেঙ্গলমিট। গত বছর দেড় হাজারের বেশি কোরবানির পশু অনলাইনে বিক্রি করেছিল তারা।

বেঙ্গলমিটের হেড অব রিটেইল মোহাম্মদ আসাদুজ্জামান খান বৃহস্পতিবার বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “এবার যেহেতু মাংস প্রক্রিয়াজাত করে সরবররাহ করা হবে, সেক্ষেত্রে আমরা ৭০০ এর বেশি অর্ডার নিতে পারব না।” 

গত কোরবানির ঈদে অনলাইন অর্ডারে সরাসরি পশুর পাশাপাশি মাংস কেটেকুটে গ্রাহককে দিয়েছিল বেঙ্গলমিট।

আসাদুজ্জামান বলেন, “তবে এবার কোভিড-১৯ মহামারী বিবেচনায় শুধু প্রসেসড মিট সরবরাহ করা হবে। সরাসরি কোরবানির পশু সরবরাহে সংক্রমণ শংকা থেকে এ সিদ্ধান্ত।”

কেনার প্রক্রিয়া নিয়ে তিনি বলেন, কোনো ক্রেতা অনলাইনে গরু পছন্দ করার পর ডেবিট বা ক্রেডিটকার্ডে মূল্যে পরিশোধ করে তা নিশ্চিত করতে পারবেন। এছাড়া ঢাকার ২৯টি আউটলেটেও এ মূল্যে পরিশোধ করা যাবে।

“কোরবানির প্রক্রিয়া নিয়ে আসাদুজ্জামান বলেন, “কোরবানির পশু কেনা মাত্র ক্রেতাকে এসএমএস দিয়ে নিশ্চিত করা হবে। এরপর কোরবানির সময় দুইজন হাফেজের তত্বাবধানে কোরবানি দেওয়া হয়। কোরবানি শেষ হওয়ার পর এসএমএসের মাধ্যমে তা ক্রেতাকে জানিয়ে দেওয়া হয়।”

প্রক্রিয়াজাতের করতে প্রায় একদিন সময় লেগে যায় এজন্য একদিন পর তা সরবরাহ করা হবে বলে জানান আসাদুজ্জামান।

“আমরা ক্রেতাকে ৩ কেজি করে প্যাকেট করে একটি বড় প্যাকেটে সরবরাহ করব। যদিও গত বছর ৫ কেজি করে এই প্যাকেট সরবরাহ করা হয়েছিল।”

ঢাকার হাতিরঝিল এলাকার একটি খামারে গরু। এরকম খামারের গরু অনলাইনেও কেনা যাচ্ছে। ছবি: আসিফ মাহমুদ অভি

ই-কমার্স সাইট দারাজের ব্র্যান্ড ম্যানেজার ইবতেশাম ইসলাম বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন,“কোরবানির পশু বিক্রিতে আগামী কয়েকদিনের মধ্যে প্ল্যানিং চূড়ান্ত হবে।

“তবে এবার কোভিড-১৯ এর জন্য বিশেষ সতর্কতা নেওয়া হবে যাতে ক্রেতারা কোনোভাবেই সংক্রমণের ঝুঁকিতে না পড়েন।”

আমারদেশ ই শপের সহ প্রতিষ্ঠাতা আতাউর রহমান বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন,তারাও সংক্রমণ ঝুঁকি এড়ানোয় গুরুত্ব দিয়ে পরিকল্পনা সাজাচ্ছেন।

“মহামারীতে কিভাবে সতর্কতা অবলম্বন করে পশু সরবরাহ করা যায় সেদিকেই গুরুত্ব দেওয়া হবে। সব ধরণের সতর্কতামূলক ব্যবস্থা নিয়েই আমরা অনলাইন বিক্রি শুরু করব।”

কেউ যদি গ্রামে তার এলাকায় গরু কোরবানি দিয়ে দরিদ্রদের বিতরণ করতে চায় সে ব্যবস্থাও রয়েছে বলে জানান আতাউর।

গ্রামীণফেন্ডসের সিইও জুনায়েদ আহমেদ বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “কোরবানির পশু বাড়িতে পৌছে দেওয়া এবং প্রক্রিয়াজাত করে পাঠানোর পরিকল্পনা রয়েছে।

“কোভিড-১৯ সংক্রমণ যাতে না হয়, সেজন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা যেমন যে গাড়িতে পশু সরবরাহ করা হবে বা যারা সরবরাহ করবে তাদের জন্য সুরক্ষামূলক ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”

আজকের ডিলের অপারেশন হেড রফিকুল ইসলাম বলেন, তারা এখনও পরিকল্পনা চূড়ান্ত করতে পারেননি।

“বিক্রি শুরু হলে অবশ্যই সব ধরনের নিরাপত্তা ও সতর্কতা নিয়েই ক্রেতাদের সরবরাহ করা হবে।”

ই-কমার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ই-ক্যাব) সাধারণ সম্পাদক মোহাম্মদ আব্দুল ওয়াহেদ তমাল বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, অনলাইনে কোরবানির পশুর হাট নিয়ে বড় ‘ক্যাম্পেইন’ চালানোর পরিকল্পনা রয়েছে তাদের।

“বর্তমান পরিস্থিতিতে কীভাবে কোরবানির পশু সরবরাহ করা যায় তা নিয়ে সতর্কতা অবলম্বন করা হবে,” বলেন তিনি।