ব্যবসায়ীদের লাভ রেখেই চামড়ার মূল্য নির্ধারণ হবে: শিল্পমন্ত্রী

করোনাভাইরাস সঙ্কটের মধ্যে চামড়া শিল্পের স্বার্থে আসন্ন কোরবানির ঈদে চামড়া ব্যবস্থাপনার সঙ্গে জড়িত ব্যবসায়ীদের প্রয়োজনীয় সুবিধা নিশ্চিত করার আশ্বাস দিয়েছেন শিল্পমন্ত্রী নূরুল মজিদ মাহমুদ হুমায়ূন।

নিজস্ব প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 23 June 2020, 06:19 AM
Updated : 23 June 2020, 06:19 AM

সোমবার চামড়া শিল্পের উন্নয়নে গঠিত টাস্কফোর্সের দ্বিতীয় সভায় তিনি এ আশ্বাস দেন।

মন্ত্রী বলেন, “করোনা পরিস্থিতির মধ্যে চামড়া শিল্পের সাথে জড়িত ব্যবসায়ীদের লাভের কথা বিবেচনা করে কাঁচা চামড়া ও লবণযুক্ত চামড়ার মূল্য নির্ধারণ করা হবে। এতে ব্যবসায়ীরা পর্যাপ্ত পরিমাণে চামড়া ক্রয় ও সংরক্ষণ করার সক্ষমতা অর্জন করবেন।”

বাংলাদেশে সারা বছর যে সংখ্যক পশু জবাই হয়, তার অর্ধেক হয় এই কোরবানির মৌসুমে। কোরবানি যারা দেন, তাদের কাছ থেকে কাঁচা চামড়া কিনে মৌসুমি ব্যবসায়ীরা বিক্রি করেন পাইকারদের কাছে। পাইকাররা সেই চামড়ায় লবণ দিয়ে সংরক্ষণের প্রাথমিক কাজটি সেরে বিক্রি করেন ট্যানারিতে।

ট্যানারি কেমন দামে চামড়া কিনবে, তা প্রতি বছর নির্ধারণ করে দেয় বাণিজ্য মন্ত্রণালয়। গতবছর ঢাকায় প্রতি বর্গফুট গরুর কাঁচা চামড়ার দাম ৪৫ থেকে ৫০ টাকা এবং ঢাকার বাইরে ৩৫ থেকে ৪০ টাকা নির্ধারণ করে দেওয়া হয়েছিল।

আর খাসির কাঁচা চামড়া সারাদেশে ১৮-২০ এবং বকরির চামড়া ১৩-১৫ টাকা দরে কিনতে বলা হয়েছিল ট্যানারিগুলোকে।

ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে টাস্কফোর্সের সভায় যোগ দিয়ে প্রধানমন্ত্রীর বেসরকারি শিল্প ও বিনিয়োগ উপদেষ্টা সালমান এফ রহমান ট্যানারি শিল্পের জন্য বাজেট সহায়তা নিশ্চিত করতে অর্থ বিভাগের সঙ্গে যোগাযোগ করার পরামর্শ দেন।

তিনি বলেন, ট্যানারি মালিকদের জন্য ঋণ সহায়তা নিশ্চিত করা না গেলে আসন্ন কোরবানির ঈদে চামড়া শিল্পের পরিস্থিতির উন্নতি হবে না।

শিল্প প্রতিমন্ত্রী কামাল আহমেদ মজুমদার আসন্ন কোরবানির ঈদে চামড়া সংরক্ষণে দেশের কওমি মাদ্রাসাগুলোকে কাজে লাগানোর প্রস্তাব করেন।

তিনি বলেন, “কওমি মাদ্রাসাগুলো বহুদিন ধরে চামড়া প্রক্রিয়াজাতকরণের সাথে জড়িত এবং এ থেকে অর্জিত আয় দিয়ে ওইসব প্রতিষ্ঠান পরিচালিত হচ্ছে। কোরবানি উপলক্ষে কওমি মাদ্রাসাগুলোকে আর্থিক সহযোগিতা দিলে তারা আসন্ন ঈদে চামড়া ব্যবস্থাপনায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে সক্ষম হবে।”

করোনাভাইরাস সঙ্কটে প্রধানমন্ত্রীর ঘোষিত প্রণোদনা প্যাকেজের আওতায় ট্যানারি মালিকরা যাতে ঋণ পান, সে বিষয়টি নিশ্চিত করার তাগিদ দেন শিল্প প্রতিমন্ত্রী।

প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের সচিব মো. তোফাজ্জল হোসেন মিয়া কাঁচা চামড়া ও লবণযুক্ত চামড়ার সঠিক মূল্য নির্ধারণ এবং ট্যানারি মালিক ও কাঁচা চামড়া ব্যবসায়ীদের মধ্যে ‘পারস্পরিক যোগাযোগ উন্নয়নের’ ওপর গুরুত্ব আরোপ করেন।

শিল্প সচিব কে এম আলী আজম বলেন, কোরবানির ঈদ সামনে রেখে তৃণমূল পর্যায়ে চামড়া ব্যবস্থাপনার জন্য স্থানীয় জনপ্রতিনিধি, পুলিশ, উপজেলা নির্বাহী অফিসার, মৌসুমি চামড়া ব্যবসায়ী, ব্যবসায়ী প্রতিনিধিসহ সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে নিয়ে সার্বিক প্রস্তুতি গ্রহণ করতে জেলা প্রশাসনকে নির্দেশনা দেওয়া হবে। সে লক্ষ্যে শিল্প মন্ত্রণালয় কাজ করছে।

বাংলাদেশ ট্যানার্স অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি শাহীন আহমেদ বলেন, সাভারের চামড়া শিল্প নগরীর ট্যানারিগুলোতে বর্তমানে প্রায় ৪০০ থেকে ৫০০ কোটি টাকার চামড়া জমা আছে।

“ট্যানারি মালিকদের জন্য আসন্ন কোরবানির ঈদে বিশেষ ঋণ সহায়তার নিশ্চিত করা ছাড়া অধিকাংশ ট্যানারি মালিকের পক্ষে চামড়া কেনা সম্ভব হবে না।”

এ বিষয়টি সুরাহা করার জন্য তিনি টাস্কফোর্স সদস্যদের দৃষ্টি আকর্ষণ করেন।

সমাপনী বক্তব্যে শিল্পমন্ত্রী বলেন, চামড়া শিল্প যাতে ঘুরে দাঁড়াতে পারে, সে লক্ষ্যে ট্যানারি মালিক, আড়তদার, চামড়াখাত সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন ধরনের কুটির, ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্প প্রতিষ্ঠানের মালিকসহ সবাইকে একসাথে কাজ করতে হবে।

অন্যদের মধ্যে পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রী মো. শাহাব উদ্দিন, বাণিজ্য সচিব মো. জাফর উদ্দীন, জননিরাপত্তা বিভাগের অতিরিক্ত সচিব মো. শাহেদ আলী, আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের অতিরিক্ত সচিব অরিজিৎ চৌধুরী, অর্থ বিভাগের অতিরিক্ত সচিব রমেশ বিশ্বাস, বাংলাদেশ ফিনিশড লেদার, লেদার গুডস অ্যান্ড ফুটওয়্যার এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি মহিউদ্দিন আহমেদ মাহিন, মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয় ও শিল্প মন্ত্রণালয়ের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাসহ ব্যবসায়ী সংগঠনের প্রতিনিধিরা ভার্চুয়াল এ বৈঠকে অংশ নেন।