প্রণোদনার ঋণ বিতরণে ধীর গতিতে হতাশ কেন্দ্রীয় ব্যাংক

কোভিড-১৯ মহামারীতে অর্থনৈতিক ক্ষতি মোকাবিলায় সিএমএসএমই খাতের জন্য সরকার যে ২০ হাজার কোটি টাকার প্রণোদনা তহবিল করেছে, সেই তহবিলের ঋণ বিতরণে গতি না দেখে হতাশা প্রকাশ করেছে বাংলাদেশ ব্যাংক।

আবদুর রহিম হারমাছি প্রধান অর্থনৈতিক প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 22 June 2020, 03:00 PM
Updated : 22 June 2020, 03:01 PM

এই ঋণ বিতরণ তদারকি আরও জোরদার করতে ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোকে নির্দেশ দিয়েছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক।

সোমবার এক সার্কুলার জারির মাধ্যমে বাংলাদেশ ব্যাংক বলেছে, “লক্ষ্য করা যাচ্ছে যে, ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলো সিএমএসএমই খাতের ঋণ বিতরণ কার্যক্রমে আশানুরূপ গতি আনয়নে সক্ষম হয়নি।

“তাই সার্বক্ষণিক তদারকির লক্ষ্যে এই খাতে ঋণ বিতরণ তদারকি আরও জোরদার করার আবশ্যকতা দেখা দিয়েছে।”

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গত ৫ এপ্রিল করোনাভাইরাস মহামারীতে অর্থনৈতিক ক্ষতি মোকাবেলায় ৭২ হাজার ৭৫০ কোটি টাকার প্রণোদনা প্যাকেজ ঘোষণা করেন।

এরমধ্যে ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্প এবং মাঝারি শিল্পে (সিএমএসএমই) ওয়ার্কিং ক্যাপিটাল দিতে ২০ হাজার কোটি টাকা রাখা হয়।

এই ২০ হাজার কোটি টাকার অর্ধেক অর্থের জোগান দেবে বাংলাদেশ ব্যাংক। সেজন্য ১০ হাজার কোটি টাকার একটি পুনঃঅর্থায়ন তহবিল গঠন করার পাশাপাশি এই তহবিল থেকে ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোকে কীভাবে প্রণোদনার ঋণ বিতরণ হবে, তার নীতিমালা ১৩ এপ্রিল প্রকাশ করা হয়।

ব্যাংকগুলো এই তহবিল থেকে ৪ শতাংশ সুদে ঋণ নিয়ে ছোট-মাঝারি ও কুটির শিল্প খাতের শিল্পোদ্যোক্তাদের ৯ শতাংশ সুদে ঋণ দেবে। এর মধ্যে অর্ধেক, অর্থাৎ ৪ দশমিক ৫ শতাংশ পরিশোধ করবে ঋণ গ্রহীতা প্রতিষ্ঠান। বাকি ৪ দশমিক ৫ শতাংশ সরকার ভর্তুকি হিসেবে সংশ্লিষ্ট ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানকে দেবে।

সেই ঋণ বিতরণের কাজে অগ্রগতি না দেখে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সোমবারের নির্দেশনায় বলা হয়, “এ মর্মে সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়েছে যে, আলোচ্য প্যাকেজের আওতায় বিতরণকৃত সিএমএসএমই ঋণ সংক্রান্ত বিবরণী প্রতি মাসের পরিবর্তে পাক্ষিক ভিত্তিতে প্রতি পাক্ষিকের বিবরণী পরবর্তী ৫ দিনের মধ্যে অর্থাৎ প্রথম পাক্ষিকের বিবরণী সংশ্লিষ্ট মাসের ২০ তারিখের মধ্যে এবং দ্বিতীয় পাক্ষিকের বিবরণী পরবর্তী মাসের ৫ তারিখের মধ্যে ‘এসএমই এন্ড স্পেশাল প্রোগ্রামস্ ডিপার্টমেন্ট’ এ দাখিল করতে হবে।”

এ প্রসঙ্গে ব্যবসায়ীদের শীর্ষ সংগঠন এফবিসিসিআই সভাপতি শেখ ফজলে ফাহিম বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “এই মহামারীকালে অর্থনীতিকে পুনরুদ্ধারে প্রণোদনা প্যাকেজগুলো দ্রুত বাস্তবায়নের কোনো বিকল্প নেই। এজন্য সবার আগে এগিয়ে আসতে হবে ব্যাংকগুলোকে। ব্যাংকগুলো যত দ্রুত ঋণ দেবে, সঙ্কট তত দ্রুত কেটে যাবে।

“বাংলাদেশ ব্যাংক ও আমরা (এফবিসিসিআই) একসঙ্গে কাজ করছি। ইতোমধ্যে এফবিসিসিআইতেও একটি ‘হেল্প ডেস্ক’ খোলা হয়েছে। কোনো ব্যবসায়ী-উদ্যোক্তার প্রণোদনা প্যাকেজের ঋণ সংক্রান্ত যে কোনো তথ্যের প্রয়োজন হলে ‘হেল্প ডেস্ক’থেকে সহায়তা নিতে আমি অনুরোধ করছি।”

তিনি বলেন, “একটা কথা মনে রাখতে হবে। সিএমএসএমই খাত ঘুরে না দাঁড়ালে অর্থনীতি ঘুরে দাঁড়াবে না। তাই সবার আগে নজর দিতে হবে এই খাতে।”

রাষ্ট্রায়ত্ত এক ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক নাম প্রকাশ না করার শর্তে বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “সিএমএসএমই খাতের ঋণ বিতরণ বাড়াতে আমরা কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নির্দেশনা মোতাবেক কাজ করছি। আশা করছি, এ খাতের ঋণ কিতরণে গতি আসবে।”