গত মার্চ থেকে এই পর্যন্ত অনলাইনে নিত্যপণ্যর ‘অর্ডার’ ৫০ শতাংশ বেড়েছে বলে জানিয়েছে ই-কমার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ই-ক্যাব)।
দেশে করোনাভাইরাসের বিস্তার ঠেকাতে গত ২৬ মার্চ সাধারণ ছুটি দিয়ে সবাইকে ঘরে থাকতে বলার পর অনলাইনে কেনাকাটা বেড়ে যায়।
গত ৩১ মার্চ অধিকাংশ বিধিনিষেধ তুলে নেওয়া হলেও ছোঁয়াচে এই রোগ এড়াতে বাইরে না থাকার পরামর্শই দেওয়া হচ্ছে।
ই-ক্যাবের সাধারণ সম্পাদক মোহাম্মদ আব্দুল ওয়াহেদ তমাল বৃহস্পতিবার বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “মহামারী সময়ে অনলাইনে নিত্যপণ্যের অর্ডার বেড়েই চলছে। মার্চ থেকে জুন নাগাদ অর্ডারের পরিমাণ ৫০ শতাংশের বেশি দাঁড়িয়েছে।”
বর্তমানে ১৫০ ই-কমার্স প্রতিষ্ঠান নিত্যপন্য সরবরাহ করে যাচ্ছে বলে জানান তিনি।
চালডাল ডটকমের ব্যবস্থাপনা পরিচালক জিয়া আশরাফ বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, দেশে করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাবের আগে ফেব্রুয়ারিতে প্রতিদিন দুই থেকে আড়াই হাজার ‘অর্ডার’ তারা পেতেন।
“মহামারী শুরু হওয়ার পর সেই অর্ডার গিয়ে দাঁড়ায় ১৬ থেকে ১৭ হাজারে। এজন্য গ্রাহকের কাছে পণ্য পৌছে দিতে বিলম্ব হতে শুরু করেছিল। পরে আমরা সক্ষমতা বৃদ্ধির পর বর্তমানে দিনে ৮ হাজারের মতো অর্ডার পৌছে দিতে পারছি।”
দারাজ বাংলাদেশের হেড অফ পিআর (মিডিয়া অ্যান্ড কমিউনিকেশন) শায়ন্তনী তিশা বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “মহামারী শুরুর পর নিত্যপণ্যের অর্ডার দ্বিগুণ থেকে তিন গুণ হয়েছে।”
আজকের ডিলের প্রধান নির্বাহী ফাহিম মাশরুর বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “আমাদের ই-কমার্স সাইটে নিত্যপণ্য তেমন বিক্রি হয় না। অন্যান্য পণ্য যেমন ইলেকট্রনিক্স বা পোশাক অর্ডার রয়েছে। ঢাকায় পণ্য সরবরাহে কোনো সমস্যা না হলেও ঢাকার বাইরে পণ্য সরবরাহে এখনো সমস্যা হচ্ছে।”
বিধিনিষেধ তুলে নেওয়ার পরও অন্যান্য পণ্য যেমন পোশাক, ইলেকট্রনিক্স বা প্রসাধনী বিক্রি তেমন বাড়েনি বলে ই-ক্যাব সাধারণ সম্পাদক তমাল জানান।
সার্বিক বেচাবিক্রির বিষয়ে তিনি বলেন, “বিষয়টি নিয়ে একটি স্টাডি চলছে, তা শেষে এ বিষয়ে একটি স্বচ্ছ তথ্য দেওয়া যাবে যে টাকার হিসেবে কত টাকার অর্ডার বেড়েছে।
“মহামারী শুরু হওয়ার পর ই-কর্মাস প্রতিষ্ঠানগুলো বেশিরভাগ ক্ষেত্রে নিত্যপণ্য এবং ওষুধ সরবরাহ করছে। করোনাভাইরাসের কারণে কার্যক্রম পরিচালনা করতে না পারা প্রতিষ্ঠানগুলো বিধিনিষেধ তুলে নেওয়ার পর কাজ শুরু করলেও ক্ষতিতে রয়েছে।”
কোভিড-১৯ এর সংক্রমণ রোধে অবরুদ্ধ পরিস্থিতির কারণে দেশের ই-কমার্স খাতে প্রতি মাসে ৬৬৬ কোটি টাকা ক্ষতি হচ্ছে বলে জানিয়েছিল ই-ক্যাব।
সেই ক্ষতি কাটিয়ে উঠা এখনও সম্ভব হয়নি বলে জানান তমাল।
ই-ক্যাবের তথ্য অনুযায়ী, বাংলাদেশে ই-কমার্সের বাজার আট হাজার কোটি টাকার। বর্তমানে ই-ক্যাবের সদস্য এক হাজার ১০০টি প্রতিষ্ঠান। এ খাতে এক লাখ ২৫ হাজার কর্মী কাজ করছে, যার ২৬ শতাংশ নারী।
গত ৩১ মার্চের পর থেকে সাধারণ ছুটি আর না থাকলেও সংক্রমণ বাড়তে থাকায় এলাকা ধরে ধরে বিধিনিষেধ আরোপের পরিকল্পনা করেছে সরকার।
প্রথমে রাজধানীর পূর্ব রাজাবাজার এলাকা পরীক্ষামূলকভাবে অবরুদ্ধ করা হয়েছে গত ৯ জুন। সেখানে এখন ঢোকা কিংবা বের হওয়া নিয়ন্ত্রিত।
ঢাকা ও চট্টগ্রামের ৫৬টিসহ সারা দেশের ‘রেড জোন’ হিসেবে চিহ্নিত এলাকাগুলো অবরুদ্ধ করা হলে সেখানকার বাসিন্দাদের ঘরে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্য পৌঁছে দিতে প্রায় সাত হাজার কর্মী প্রস্তুতি নিয়েছে ই-কমার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ই-ক্যাব)।
পূর্ব রাজাবাজার এলাকায় পণ্য সরবরবাহের অভিজ্ঞতার বিষয়ে জিয়া আশরাফ বলেন, “লকডাউনের আগে এ এলাকায় দিনে ৫০ থেকে ৬০টি পার্সেল দেওয়া হয়। এখন সেখানে দিনে ৩৫০ এর বেশি অর্ডার সরবরাহ করতে হচ্ছে।”